স্পোর্টস ডেস্ক :
গুঞ্জনই সত্যি হলো। আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজের মাঝপথেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। নিজের শহর চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে তামিম জানালেন, লাল-সবুজের জার্সিটা আর গায়ে জড়ানো হচ্ছে না তার। আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটাই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। কম তো নয়! এই সময়ে কত ক্রিকেটারদের সঙ্গেই না খেলেছেন তামিম ইকবাল। শুরু করেছিলেন হাবিবুল বাশারের সেই বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক ওপেনার হিসেবে। সময়ের পরিক্রমায় ভূমিকা বদলেছে তাঁর। হয়েছেন তাসকিন, শরীফুল, লিটনদের অধিনায়ক, বড় ভাইও।
তাই হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এমন বিদায় নেওয়ার পর তাসকিন, মিরাজ মুমিনুলরা তাঁদের ‘তামিম ভাই’কে যে মিস করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। চোখের জলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে তামিমের বিদায় বলার পর সামাজিক মাধ্যমে সেই কথাই জানালেন তাসকিন, মুমিনুল হকরা।
২০১৪ সালে অভিষেকের পর তামিমের সঙ্গে একসঙ্গে ৭৬টি ম্যাচ খেলেছেন তাসকিন। একসঙ্গে খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটও। তামিমের বিদায়ের পর ফেসবুকে পোস্টে এই পেসার লিখেছেন, আপনার সঙ্গে যাত্রাটা অনেক দিনের, মাঠে এবং মাঠের বাইরে আপনার সঙ্গে রয়েছে অনেক মুহূর্ত ও স্মৃতি। ভাই ও অধিনায়ক হিসেবে আপনি আমাদের যে সমর্থন দিয়েছেন, তার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আপনাকে মিস করব তামিম ভাই।
বাংলাদেশ টেস্ট দলের সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হকের সঙ্গে তামিম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ৬০টি। ফেসবুক টেস্টের সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছেন, প্রিয় তামিম ভাই, আপনি সব সময়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনাকে সব সময় মনে পড়বে। একজন সতীর্থ হওয়া ছাড়াও আপনি একজন বড় ভাই হিসেবে সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাদের একসঙ্গে কাটানো সব মজার মুহূর্ত ও আপনাকে খুব মিস করব। শুভকামনা আপনার জন্য। চিরকাল ভালোবাসি।
অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে তামিম একজন জীবন্ত কিংবদন্তি, বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি, দেশের হয়ে ১৫ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান! আমি তামিম ভাইয়ের কাছ থেকে খেলা এবং জীবন সম্পর্কে অমূল্য শিক্ষা পেয়েছি। এবং আমি আপনার অটল সমর্থন, বিশ্বাসের জন্য চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব। আপনি ঐশ্বরিক গুণাবলির সঙ্গে দারুণ এক ক্রীড়াবিদ। খেলোয়াড়, ভক্ত এবং খেলা নিজেই আপনাকে মিস করবে, তামিম ভাই।
তরুণ পেসার শরীফুল ইসলামের স্ট্যাটাসেও ছিল আক্ষেপের সুর। ছোট বেলায় তামিম ইকবালের খেলা দেখে ভালো লাগবার কথা। নিজের অভিষেকটাও যে তামিমের অধিনায়কত্বে, সে কথাও স্মরণ করলেন এই তরুণ। জানালেন, এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের সাথে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়ে গর্বিত তিনি।
জাতীয় দলের রাডারের বাইরে থাকা পেসার রুবেলের লেখাতেও ছিল আক্ষেপ আর হতাশা। চোখের জলে তামিম ইকবালের বিদায়কে মেনে নিতে পারছেন না ৩৩ বছর বয়েসী এই পেসার। তামিমের অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন তিনি।
ডানহাতি মিডিয়াম পেসার সাইফউদ্দিনের যেমন তামিমের সঙ্গে আর জাতীয় দলে খেলতে না পারার কথা ভেবেই খারাপ লাগছে। তিনি লেখেন, লাল-সবুজ জার্সিতে আপনার সঙ্গে আর বাংলাদেশ দলে খেলা হবে না! এটা ভেবেই অনেক খারাপ লাগছে।
এছাড়া টাইগার ব্যাটার লিটন দাস তামিমের সঙ্গে একাধিক ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, আমরা একসঙ্গে ব্যাট করেছি, ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছি। একসঙ্গে অনেক স্মৃতি ছিল। বিশ্বাস করতে পারছি না আপনি আর বাংলাদেশের জন্য খেলবেন না। আপনাকে খুব মিস করবো ভাই। আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভকামনা।
সৌম্য সরকার লেখেন, বিদায় বলাটা আমাদের জীবনের অংশ এবং এনিয়ে মনঃ খারাপ না করি। বরং আসুন সব ভালো স্মৃতিগুলোকে ধারণ করে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকি। আপনি আমাদের সঙ্গে অনেক স্মৃতি রেখে যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকেই আপনাকে মিস করবে। নতুন গন্তব্যে অসাধারণ একটি সফর হোক আপনার। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ ভাই।
তামিমের বিদায় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে আসেন জাতীয় দলের এক সময়ের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বলেন, তামিমকে আমি যতটুকু চিনি, সে সিদ্ধান্ত হুট করে নেয়। তবে খুব অনড় থাকে। তামিম অসাধারণ একজন ব্যক্তি, সে সবার পরিসংখ্যান মনে রাখে। তবে তার সিদ্ধান্তে একটু অবাক হয়েছি। এটাও ঠিক, সে চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তামিম একটু ভিন্ন, বেশিই আবেগপ্রবণ। ওর গত কয়েকটা সিরিজ চোটে যাচ্ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার শুরুটা ভালো হয়নি।
এছাড়া তামিমের অবসর প্রসঙ্গে আশরাফুল বলেছেন, তামিমের এভাবে সরে যাওয়াটা আমি জানি না কতটুকু ভালো হয়েছে। আবার আরেক দিকে যদি চিন্তা করি, সে আসলে সবকিছু হুটহাট করে। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সে যায়নি। যদিও সে লম্বা সময় তখন বাইরে ছিল। চোটের কারণে সে এক বছর টি-টোয়েন্টির বাইরে ছিল। সেখান থেকেই হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মিডিয়ায় যখন কথা হচ্ছিল তাকে নেবে কি না। তখন নিজে থেকে সরে গেছে।
আশরাফুল আরও বলেছেন, আমার মনে হয় না সে আবার ফিরে আসবে। তামিম, গত ১৯টা বছর তুমি আমাদের অনেক বিনোদন দিয়েছ। আমি বলব ২০১৪-১৮ পর্যন্ত তোমার ক্যারিয়ারের সেরা সময় গিয়েছে। ওই সময় তোমার গড় ৭০+ ছিল। অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছ। বাংলাদেশের হয়ে অনেক অবদান রেখেছ। যদিও তুমি আমার অনেক জুনিয়র। যেখানে আমি অবসর নিইনি, মাশরাফি অবসর গ্রহণ করেনি, তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আশা করব ঘরোয়া ক্রিকেটে সে আরও তিন-চার বছর খেলবে। কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও আসতে পারে। কারণ অবসর নেওয়ার মতো তার বয়স এমন কিছু হয়নি। চোটে অবশ্য তামিম একটু বেশিই পড়েছে। শেষ কয়েকটা বছর বেশ কয়েকটি সিরিজের আগে দেখা যাচ্ছিল সে শতভাগ ফিট থাকত না। দেশে-বিদেশে তোমার অনেক সমর্থক। ওপেনার হিসেবে ২০০৭ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ওপেনিং করাটা ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন। সেই জিনিসটা তুমি করেছ। তাই আমার হঠাৎ করে মনে হলো, তুমি অন্যান্য ক্রিকেটারের চেয়ে ভিন্ন, সেটা বলি সবাইকে। আমি মনে করি, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। যেহেতু বিশ্বকাপের আরেকটা চাপ থাকত, আর এই সিরিজটাও এত সহজ হবে না।