Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তহুরার হ্যাটট্রিকে ভূটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৯২ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জোড়া গোলে ম্যাচ জয়ের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন তহুরা খাতুন। সেমিফাইনালেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন। এবার করলেন হ্যাটট্রিক। তার হ্যাটট্রিকে ভূটানকে ৭-১ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে ফাইনালে পা রেখেছে বাংলাদেশ।

রোববার (২৭ অক্টোবর) নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে একাদশে এক পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে গোল করেছিলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। চোটের কারণে আজ দলে নেই তিনি। তার বদলে আজ খেলছেন সাগরিকা। পুরো ম্যাচে বলতে গেলে ভুটানের মেয়েদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশ। তহুরা পেয়েছেন হ্যাটট্রিক। অধিনায়ক সাবিনার পা থেকে এসেছে দুই গোল। একটি করে গোল ঋতুপর্তা এবং মাসুরা পারভিনের।

প্রথমার্ধেই অবশ্য ম্যাচের এপিটাফ লিখে ফেলেছিল বাংলাদেশ। শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা সাবিনা খাতুনের দল শুরুর ৪৫ মিনিটেই রীতিমতো গোল উৎসব করেছে। প্রথম লিড নিতে তাদের তেমন অপেক্ষা করতে হয়নি। সপ্তম মিনিটেই তহুরা খাতুনের পাস পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন ঋতুপর্ণা চাকমা। সেখান থেকেই বাংলাদেশের গোল বন্যার শুরু।

সপ্তম মিনিটে গোছালো আক্রমণে ভুটানের প্রতিরোধের বাঁধ ভাঙে বাংলাদেশ। তহুরার পাস ধরে বক্সের ঠিক ওপর থেকে বাম পায়ের জোরাল শটে জাল খুঁজে নেন ঋতুপর্ণা। চলতি আসরে এই ফরোয়ার্ডের এটা প্রথম গোল। দুদিন আগেই ‘কপালে গোল নেই’ বলে আক্ষেপ করেছিলেন ঋতুপর্ণা।

ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত দ্বাদশ মিনিটে। ঋতুপর্ণার ক্রসে সাগরিকার হেড গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ছুটছিল লক্ষ্যে, কিন্তু গোললাইন থেকে হেডে ফেরান ইদোন দর্জি। তিন মিনিট পর তহুরার শট আটকাতে পারেননি কেউ; শিউলি আজিমের পাস দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শরীর ঘুরিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড।

২৩তম মিনিটে ডেমা নামগাইয়েলের শট ফিস্ট করে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তিতে রাখেন রূপনা চাকমা। একটু পর ব্যবধান আরও বাড়তে পারত, কিন্তু সাবিনার পায়ের কারিকুরিতে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে নেওয়া শট দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

চলতি আসরে বাংলাদেশ অধিনায়কের গোলের অপেক্ষা ফুরায় ২৬তম মিনিটে। মনিকার আড়াআড়ি ক্রসে গোলমুখ থেকে নিখুঁত টোকায় ব্যবধান বাড়ান সাবিনা।

৩৫তম মিনিটে আবারও তহুরার ঝলক। বক্সের একটু ওপর থেকে শট নেন তিনি, গোলরক্ষককের মাথার ওপর দিয়ে বল লুটোপুটি খায় জালে।

দুই মিনিট পর বাম দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে কাটিয়ে নিচু শটে বল জালে ঠেলে দুই হাত মেলে উদযাপনে মাতেন সাবিনা। একটু পর ব্যবধান কমিয়ে ভুটানের আশা বাঁচিয়ে রাখেন ডেকি লাহজম। তবে ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রেখেই বিরতিতে যায় পিটার বাটলারের দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে ভুটান। একবার কিছুটা গড়বড় পাকিয়েও ফেলেছিলেন রূপনা, তবে বল তার গ্লাভস গলে বেরিয়ে গেলেও বিপদের কারণ হয়নি।

৫৮তম মিনিটে আবারও পাদপ্রদীপের আলোয় তহুরা। বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় দেখেশুনে বাম পায়ের শটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। সাফের আঙিনায় এটি তহুরার প্রথম হ্যাটট্রিক। চলতি আসরে ২১ বছর বয়সী তারকার গোল হলো ৫টি।

পাঁচ মিনিট পর একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন বাটলার। সাবিনা, সাগরিকা ও ঋতুপর্ণাকে তুলে স্বপ্না রানী, শাহেদা আক্তার রিপা ও সানজিদা আক্তারকে নামান কোচ। সাফে অভিষেক হলো রিপার।

৭২তম মিনিটে সানজিদার কর্নারে শিউলি আজিম হেডে স্কোরলাইন ৭-১ করেন। ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় বাটলার বেঞ্চের আরও খেলোয়াড়দের পরখ করতে শুরু করেন; মাসুরা পারভীনকে তুলে কোহাতি কিসকু এবং মারিয়া মান্দা বদলি মাতসুশিমা সুমাইয়াকে নামান।

ততক্ষণে শুরু হয়েছে শেষের বাঁশির অপেক্ষা। তা বাজতেই মুকুট ধরে রাখার অভিযানে শেষ ধাপে ওঠার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। সাবিনা-তহুরাদের মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি।

এ ম্যাচের আগেও আরেকবার অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ দলের ভেতরের পরিবেশ। কোচ বাটলার অভিযোগ করে বসেন, সাবেক কোচরা মেয়েদেরকে প্ররোচিত করছে দলে ভাঙন ধরানোর জন্য। এ নিয়ে কথার চালাচালিও কম হয়নি, কিন্তু সাবিনা-মারিয়া-সাগরিকাদের মাঠের পারফরম্যান্সে এসবের কোনো প্রভাবই নেই!

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কুড়িগ্রামে সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষ

তহুরার হ্যাটট্রিকে ভূটানকে উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ০৪:১৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

স্পোর্টস ডেস্ক : 

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জোড়া গোলে ম্যাচ জয়ের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন তহুরা খাতুন। সেমিফাইনালেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন। এবার করলেন হ্যাটট্রিক। তার হ্যাটট্রিকে ভূটানকে ৭-১ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে ফাইনালে পা রেখেছে বাংলাদেশ।

রোববার (২৭ অক্টোবর) নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে একাদশে এক পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে গোল করেছিলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। চোটের কারণে আজ দলে নেই তিনি। তার বদলে আজ খেলছেন সাগরিকা। পুরো ম্যাচে বলতে গেলে ভুটানের মেয়েদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশ। তহুরা পেয়েছেন হ্যাটট্রিক। অধিনায়ক সাবিনার পা থেকে এসেছে দুই গোল। একটি করে গোল ঋতুপর্তা এবং মাসুরা পারভিনের।

প্রথমার্ধেই অবশ্য ম্যাচের এপিটাফ লিখে ফেলেছিল বাংলাদেশ। শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা সাবিনা খাতুনের দল শুরুর ৪৫ মিনিটেই রীতিমতো গোল উৎসব করেছে। প্রথম লিড নিতে তাদের তেমন অপেক্ষা করতে হয়নি। সপ্তম মিনিটেই তহুরা খাতুনের পাস পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন ঋতুপর্ণা চাকমা। সেখান থেকেই বাংলাদেশের গোল বন্যার শুরু।

সপ্তম মিনিটে গোছালো আক্রমণে ভুটানের প্রতিরোধের বাঁধ ভাঙে বাংলাদেশ। তহুরার পাস ধরে বক্সের ঠিক ওপর থেকে বাম পায়ের জোরাল শটে জাল খুঁজে নেন ঋতুপর্ণা। চলতি আসরে এই ফরোয়ার্ডের এটা প্রথম গোল। দুদিন আগেই ‘কপালে গোল নেই’ বলে আক্ষেপ করেছিলেন ঋতুপর্ণা।

ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত দ্বাদশ মিনিটে। ঋতুপর্ণার ক্রসে সাগরিকার হেড গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ছুটছিল লক্ষ্যে, কিন্তু গোললাইন থেকে হেডে ফেরান ইদোন দর্জি। তিন মিনিট পর তহুরার শট আটকাতে পারেননি কেউ; শিউলি আজিমের পাস দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শরীর ঘুরিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড।

২৩তম মিনিটে ডেমা নামগাইয়েলের শট ফিস্ট করে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তিতে রাখেন রূপনা চাকমা। একটু পর ব্যবধান আরও বাড়তে পারত, কিন্তু সাবিনার পায়ের কারিকুরিতে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে নেওয়া শট দূরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

চলতি আসরে বাংলাদেশ অধিনায়কের গোলের অপেক্ষা ফুরায় ২৬তম মিনিটে। মনিকার আড়াআড়ি ক্রসে গোলমুখ থেকে নিখুঁত টোকায় ব্যবধান বাড়ান সাবিনা।

৩৫তম মিনিটে আবারও তহুরার ঝলক। বক্সের একটু ওপর থেকে শট নেন তিনি, গোলরক্ষককের মাথার ওপর দিয়ে বল লুটোপুটি খায় জালে।

দুই মিনিট পর বাম দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে কাটিয়ে নিচু শটে বল জালে ঠেলে দুই হাত মেলে উদযাপনে মাতেন সাবিনা। একটু পর ব্যবধান কমিয়ে ভুটানের আশা বাঁচিয়ে রাখেন ডেকি লাহজম। তবে ম্যাচের লাগাম মুঠোয় রেখেই বিরতিতে যায় পিটার বাটলারের দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে ভুটান। একবার কিছুটা গড়বড় পাকিয়েও ফেলেছিলেন রূপনা, তবে বল তার গ্লাভস গলে বেরিয়ে গেলেও বিপদের কারণ হয়নি।

৫৮তম মিনিটে আবারও পাদপ্রদীপের আলোয় তহুরা। বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় দেখেশুনে বাম পায়ের শটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। সাফের আঙিনায় এটি তহুরার প্রথম হ্যাটট্রিক। চলতি আসরে ২১ বছর বয়সী তারকার গোল হলো ৫টি।

পাঁচ মিনিট পর একসাথে তিনটি পরিবর্তন আনেন বাটলার। সাবিনা, সাগরিকা ও ঋতুপর্ণাকে তুলে স্বপ্না রানী, শাহেদা আক্তার রিপা ও সানজিদা আক্তারকে নামান কোচ। সাফে অভিষেক হলো রিপার।

৭২তম মিনিটে সানজিদার কর্নারে শিউলি আজিম হেডে স্কোরলাইন ৭-১ করেন। ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় বাটলার বেঞ্চের আরও খেলোয়াড়দের পরখ করতে শুরু করেন; মাসুরা পারভীনকে তুলে কোহাতি কিসকু এবং মারিয়া মান্দা বদলি মাতসুশিমা সুমাইয়াকে নামান।

ততক্ষণে শুরু হয়েছে শেষের বাঁশির অপেক্ষা। তা বাজতেই মুকুট ধরে রাখার অভিযানে শেষ ধাপে ওঠার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। সাবিনা-তহুরাদের মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি।

এ ম্যাচের আগেও আরেকবার অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ দলের ভেতরের পরিবেশ। কোচ বাটলার অভিযোগ করে বসেন, সাবেক কোচরা মেয়েদেরকে প্ররোচিত করছে দলে ভাঙন ধরানোর জন্য। এ নিয়ে কথার চালাচালিও কম হয়নি, কিন্তু সাবিনা-মারিয়া-সাগরিকাদের মাঠের পারফরম্যান্সে এসবের কোনো প্রভাবই নেই!