Dhaka বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে আসছে আমার দেশ পত্রিকা : মাহমুদুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন তিনি এই কথা বলেন। আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানায় লুটপাটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ আবার আসবে। আমাদের যতই কষ্ট হোক, আল্লাহ যদি চান ডিসেম্বরে মধ্যে আপনাদের হাতে এই পত্রিকা তুলে দেব। হাতে আড়াই মাসেরও কিছু কম সময় রয়েছে। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ করবো।

তিনি বলেন, আমার দেশ স্বাধীনতার কথা বলবে, ভারতীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে, গুম-সন্ত্রাসীর বিপক্ষে আওয়াজ তুলবে। শুধু সরকারের কাছে চাওয়া, এই পত্রিকা চালুর ব্যাপারে যেন আইনি বাধায় না পড়ে সেই সহযোগিতা করা।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার আমার দেশ পত্রিকার প্রেস সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। নতুন প্রেস বসাতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু ইতোমধ্যে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে আমার দেশের মতো মিডিয়া দরকার। আমার দেশ করপোরেট স্বার্থের বাইরে, কোনও দলের স্বার্থের বাইরে, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দাঁড়াবে। দেশের মানুষের জন্য দাঁড়াবে। এজন্য আমার দেশ দ্রুত চালু করতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্য দুটি প্রেস থেকে আমার দেশ ছাপা হবে।

আলোচিত পত্রিকার এই সম্পাদক বলেন, আমার বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের হাতিয়ার আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আমাকে টুকরো টুকরো করতে না পেরে ছাপাখানাটিকে টুকরো টুকরো করেছে, এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী চরিত্র। অথচ বড় বড় কোনো সম্পাদকের মুখে এর কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি, আর এটাই মিডিয়ার চরিত্র।

একমাত্র আমার দেশই করপোরেট এবং দলীয় মিডিয়া না দাবি করে তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী মিডিয়া দরকার, যা করপোরেট স্বার্থে কিংবা দলীয় স্বার্থে দাঁড়াবে না, অধিকার আদায় এবং গণমানুষের জন্য দাঁড়াবে।

আমার দেশের এই প্রকাশক বলেন, আমরা কোনো ব্যবসা নাই। এই পত্রিকা চালাবো আর লেখালিখি করবো। এটিকে দাঁড় করিয়ে অবসরে যাবো। আমাদের কোনো টাকা নাই। আপাতত অন্য প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপানোর বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। তবে পত্রিকা বের করার জন্য অফিস দরকার, কম্পিউটার দরকার এবং টেকনোলিজি দরকার। এগুলো সেটাপ করতে হবে। যারা এখানে কাজ করবেন তাদের সেবার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। মেধা অনুযায়ী যে বেতনভাতা দেয়া উচিত, সেটা আমদের দেশের নেই। তবুও আমার ধারণা লড়াই করতে পারবো।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমার দেশ পত্রিকা অন্যায়ভাবে বন্ধ করায় প্রেসের যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। কাগজের ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকার। এছাড়া অফিসে আগুন লাগাসহ সর্বমোট ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে এই ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, দুদিন আগে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তালা ভেঙে আমার দেশ প্রেস আমাদের বুঝিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই প্রেসের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমনকি ইলেকট্রিক প্যানেল পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র দুটি মেশিনের খণ্ডাংশ পড়ে আছে, যেগুলো ভাঙা সম্ভব না বলে চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি। এগুলো যে টুকরো-টুকরো করে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কিছু প্রমাণ প্রেসের মধ্যে পড়ে ছিল। দেখে মনে হয়েছে শেখ হাসিনা আমাকে টুকরো করতে না পেরে আমার দেশ পত্রিকার প্রেস টুকরো টুকরো করেছে। এটাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র। আমাদের জন্য ইতিবাচক যে সরকারি প্রতিনিধি অর্থাৎ একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুজন ওসি প্রেসের অবস্থা দেখেছেন। একজন ওসি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, এই প্রেসের আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই।

আমার দেশ সম্পাদক বলেন, আমাদের প্রেসের কিছুই অবশিষ্ট নেই, জমিটা শুধু আছে। একটা নতুন প্রেস করতে যে টাকা প্রয়োজন সে অর্থ আমার নেই। আমরা যারা আমার দেশের পরিচালক তারা সবাই সীমিত অর্থের মালিক। আমরা কোনো কর্পোরেট মিডিয়া না, কোনো দলীয় মিডিয়া না। আমরা কষ্ট করে এটা চালাতাম।

মাহমুদুর রহমান বলেন, যেদিন আমরা আমার দেশ পত্রিকার কম্পিউটার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র অন্যত্র স্থানান্তর করতে চেয়েছিলাম, সেদিন আমাদের অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন আমি জেলখানায় আটক ছিলাম। জেলখানায় আমাকে একজন খবর দিয়েছিল, আল্লাহর রহমতে তিনি এখনো জেলখানায় জীবিত আছেন। তিনি তখন জামায়াতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, আযহার ভাই। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার কোনো সহকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না? আল্লাহর রহমতে আমার কোনো সহকর্মীর কিছু হয়নি। সবাই নিরাপদে ছিলেন। ওই মুহূর্তে এটাই আমার জন্য স্বস্তির সংবাদ ছিল।

তখন হাসিনা সরকারের মন্ত্রী আমার দেশ পত্রিকার অফিস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি ছিলেন আমির হোসেন আমু, আমি শতভাগ নিশ্চিত নই। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, এই আগুন আমার দেশ পত্রিকা কর্তৃপক্ষই লাগিয়েছে। তিনি বলেছিলেন আমরা নাকি ইন্সুরেন্সের টাকার জন্য নিজেদের প্রেসে আগুন লাগিয়েছি। কিন্তু তিনি জানতেন না আমাদের ওই অফিসের কোনো ইন্সুইরেন্সই ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার ছিল, আমার দেশের উপর এত জুলুম চললেও কোনো গণমাধ্যম এর সমালোচনা করেনি। যারা বাক স্বাধীনতার কথা বলেন তাদের মুখে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবাদ শুনলাম না। তারা বিগত ১৬ বছর শুধু শেখ হাসিনার তাবেদারি করেছেন। বড় বড় সম্পাদকরা কেউ বলেননি, আমার দেশের ওপর জুলুম মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, মিডিয়ার চরিত্র বোঝার জন্য তিনটি উদাহরণ দেই। তার আগে বলে রাখি- মিডিয়া বলতে বাংলাদেশে মালিক এবং সম্পাদকই সবকিছু। ১. আমার দেশ ওই সময় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা হওয়া সত্ত্বেও আমাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। ২. আপনারা জানেন পত্রিকার মালিকদের সংগঠন নোয়াব, শুনলে অবাক হবেন আমার দেশকে নোয়াবের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। আরেকটি আছে সম্পাদক পরিষদ, সেখানেও আমাদের দেশকে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। কারণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে আমার দেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিল। কোনো পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক আমার দেশ পত্রিকার পক্ষে ছিলেন না। তারা বরং আনন্দিত হয়েছেন। সুতরাং আজ যে গণমাধ্যম সংস্কারের কথা হচ্ছে তার আগে মিডিয়ার মালিক ও সম্পাদকদের সংস্কার করতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে আসছে আমার দেশ পত্রিকা : মাহমুদুর রহমান

প্রকাশের সময় : ০৩:০৩:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন তিনি এই কথা বলেন। আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানায় লুটপাটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আমার দেশ আবার আসবে। আমাদের যতই কষ্ট হোক, আল্লাহ যদি চান ডিসেম্বরে মধ্যে আপনাদের হাতে এই পত্রিকা তুলে দেব। হাতে আড়াই মাসেরও কিছু কম সময় রয়েছে। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ করবো।

তিনি বলেন, আমার দেশ স্বাধীনতার কথা বলবে, ভারতীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে, গুম-সন্ত্রাসীর বিপক্ষে আওয়াজ তুলবে। শুধু সরকারের কাছে চাওয়া, এই পত্রিকা চালুর ব্যাপারে যেন আইনি বাধায় না পড়ে সেই সহযোগিতা করা।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার আমার দেশ পত্রিকার প্রেস সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। নতুন প্রেস বসাতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু ইতোমধ্যে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে আমার দেশের মতো মিডিয়া দরকার। আমার দেশ করপোরেট স্বার্থের বাইরে, কোনও দলের স্বার্থের বাইরে, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দাঁড়াবে। দেশের মানুষের জন্য দাঁড়াবে। এজন্য আমার দেশ দ্রুত চালু করতে হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অন্য দুটি প্রেস থেকে আমার দেশ ছাপা হবে।

আলোচিত পত্রিকার এই সম্পাদক বলেন, আমার বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের হাতিয়ার আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আমাকে টুকরো টুকরো করতে না পেরে ছাপাখানাটিকে টুকরো টুকরো করেছে, এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী চরিত্র। অথচ বড় বড় কোনো সম্পাদকের মুখে এর কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি, আর এটাই মিডিয়ার চরিত্র।

একমাত্র আমার দেশই করপোরেট এবং দলীয় মিডিয়া না দাবি করে তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী মিডিয়া দরকার, যা করপোরেট স্বার্থে কিংবা দলীয় স্বার্থে দাঁড়াবে না, অধিকার আদায় এবং গণমানুষের জন্য দাঁড়াবে।

আমার দেশের এই প্রকাশক বলেন, আমরা কোনো ব্যবসা নাই। এই পত্রিকা চালাবো আর লেখালিখি করবো। এটিকে দাঁড় করিয়ে অবসরে যাবো। আমাদের কোনো টাকা নাই। আপাতত অন্য প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপানোর বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। তবে পত্রিকা বের করার জন্য অফিস দরকার, কম্পিউটার দরকার এবং টেকনোলিজি দরকার। এগুলো সেটাপ করতে হবে। যারা এখানে কাজ করবেন তাদের সেবার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। মেধা অনুযায়ী যে বেতনভাতা দেয়া উচিত, সেটা আমদের দেশের নেই। তবুও আমার ধারণা লড়াই করতে পারবো।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমার দেশ পত্রিকা অন্যায়ভাবে বন্ধ করায় প্রেসের যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। কাগজের ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকার। এছাড়া অফিসে আগুন লাগাসহ সর্বমোট ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে এই ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা হবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, দুদিন আগে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তালা ভেঙে আমার দেশ প্রেস আমাদের বুঝিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই প্রেসের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমনকি ইলেকট্রিক প্যানেল পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র দুটি মেশিনের খণ্ডাংশ পড়ে আছে, যেগুলো ভাঙা সম্ভব না বলে চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি। এগুলো যে টুকরো-টুকরো করে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার কিছু প্রমাণ প্রেসের মধ্যে পড়ে ছিল। দেখে মনে হয়েছে শেখ হাসিনা আমাকে টুকরো করতে না পেরে আমার দেশ পত্রিকার প্রেস টুকরো টুকরো করেছে। এটাই ফ্যাসিবাদের চরিত্র। আমাদের জন্য ইতিবাচক যে সরকারি প্রতিনিধি অর্থাৎ একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুজন ওসি প্রেসের অবস্থা দেখেছেন। একজন ওসি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, এই প্রেসের আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই।

আমার দেশ সম্পাদক বলেন, আমাদের প্রেসের কিছুই অবশিষ্ট নেই, জমিটা শুধু আছে। একটা নতুন প্রেস করতে যে টাকা প্রয়োজন সে অর্থ আমার নেই। আমরা যারা আমার দেশের পরিচালক তারা সবাই সীমিত অর্থের মালিক। আমরা কোনো কর্পোরেট মিডিয়া না, কোনো দলীয় মিডিয়া না। আমরা কষ্ট করে এটা চালাতাম।

মাহমুদুর রহমান বলেন, যেদিন আমরা আমার দেশ পত্রিকার কম্পিউটার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র অন্যত্র স্থানান্তর করতে চেয়েছিলাম, সেদিন আমাদের অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন আমি জেলখানায় আটক ছিলাম। জেলখানায় আমাকে একজন খবর দিয়েছিল, আল্লাহর রহমতে তিনি এখনো জেলখানায় জীবিত আছেন। তিনি তখন জামায়াতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, আযহার ভাই। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার কোনো সহকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না? আল্লাহর রহমতে আমার কোনো সহকর্মীর কিছু হয়নি। সবাই নিরাপদে ছিলেন। ওই মুহূর্তে এটাই আমার জন্য স্বস্তির সংবাদ ছিল।

তখন হাসিনা সরকারের মন্ত্রী আমার দেশ পত্রিকার অফিস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি ছিলেন আমির হোসেন আমু, আমি শতভাগ নিশ্চিত নই। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, এই আগুন আমার দেশ পত্রিকা কর্তৃপক্ষই লাগিয়েছে। তিনি বলেছিলেন আমরা নাকি ইন্সুরেন্সের টাকার জন্য নিজেদের প্রেসে আগুন লাগিয়েছি। কিন্তু তিনি জানতেন না আমাদের ওই অফিসের কোনো ইন্সুইরেন্সই ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার ছিল, আমার দেশের উপর এত জুলুম চললেও কোনো গণমাধ্যম এর সমালোচনা করেনি। যারা বাক স্বাধীনতার কথা বলেন তাদের মুখে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবাদ শুনলাম না। তারা বিগত ১৬ বছর শুধু শেখ হাসিনার তাবেদারি করেছেন। বড় বড় সম্পাদকরা কেউ বলেননি, আমার দেশের ওপর জুলুম মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, মিডিয়ার চরিত্র বোঝার জন্য তিনটি উদাহরণ দেই। তার আগে বলে রাখি- মিডিয়া বলতে বাংলাদেশে মালিক এবং সম্পাদকই সবকিছু। ১. আমার দেশ ওই সময় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা হওয়া সত্ত্বেও আমাকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। ২. আপনারা জানেন পত্রিকার মালিকদের সংগঠন নোয়াব, শুনলে অবাক হবেন আমার দেশকে নোয়াবের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। আরেকটি আছে সম্পাদক পরিষদ, সেখানেও আমাদের দেশকে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। কারণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে আমার দেশ বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিল। কোনো পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক আমার দেশ পত্রিকার পক্ষে ছিলেন না। তারা বরং আনন্দিত হয়েছেন। সুতরাং আজ যে গণমাধ্যম সংস্কারের কথা হচ্ছে তার আগে মিডিয়ার মালিক ও সম্পাদকদের সংস্কার করতে হবে।