নিজস্ব প্রতিবেদক :
অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনের ঊর্ধ্বে নন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এর জন্য সরকার কেন সমালোচনার মুখে পড়বে!
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনার স্ট্যাটাস, পজিশন, ব্যক্তিত্বের উচ্চতা কি আইনের ঊর্ধ্বে? ড. ইউনূস সাহেব কি আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে? শাস্তি কি তাকে আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে? যে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন তাদেরই মামলা, সেই মামলায় আদালত তাকে শাস্তি দিয়েছে। এখানে সরকারের কী করণীয় আছে। সরকার কেন এখানে সমালোচনার মুখে পড়বে? এটাতো যথাযথ নয়।
তিনি বলেন, নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না যায় সেজন্য বিএনপি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ভালোভাবে সমাপ্ত করার ক্ষেত্রে কমিশনকে স্বাধীন ভূমিকা পালনে সব কিছু করবে আওয়ামী লীগ।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভোটের প্রচার প্রচারণা যেভাবে চলছে, তাতে স্পষ্ট, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা অবিচল, অটল। আমাদের উপর নির্বাচন অনুষ্ঠান ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব। গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার আদর্শ রক্ষার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব আওয়ামী লীগ কে পালন করতেই হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনে ২৮টি দলের প্রার্থী আছে। এটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করি। আশা করি ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। যদিও অশান্তির উপাদান আছে। ইতোমধ্যে অগ্নিসন্ত্রাস, বাস-ট্রেনে আগুন দেওয়া হচ্ছে, যাতে জনগণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়, তারা যেন ভোট দিতে না যায়, এজন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিএনপি চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন থেকে পিছিয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। ৫ বছর পর ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হবে। যতো বাধাই আসুক, লিফলেট বিতরণ করে জনগণের মধ্যে ভয় দেখানো হোক, কোনোভাবেই নির্বাচন বানচাল করা যাবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন থেকে পিছিয়ে পড়ার কোন সুযোগ নেই। ৭ জানুয়ারি যে সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়েছে তা থেকে পিছিয়ে আসার সুযোগ নাই। যা কিছুই তারা করুক সন্ত্রাস, আগুন। লিফলেট বিতরণ করে এই নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। তাদের প্রোগ্রামগুলো খুবই রহস্যময়, আমরা অবাক হচ্ছি ৪ তারিখ তারা লিফলেট বিতরণ করছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে তারা গুপ্ত হত্যা, চোরাগুপ্তা হামলা করে ভয়ংকরভাবে ঝাঁপিয়ে পরতে পারে। সে জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে নিরবতা দেখানো হলেও সশস্ত্র হয়ে উঠবে এমন খবর আমরা পাচ্ছি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, ২০১৩ থেকে শুরু করে ১৪, ১৮ নির্বাচন। এই নির্বাচনে তাদের যে ভূমিকা যেভাবে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে, সরকারি অফিস ভাঙচুর, রাস্তা কেটে ফেলা, রাস্তায় আগুন দেয়া, ৫ শ’র বেশি মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, এবারও তারা ব্যর্থতা আর হতাশা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। কারণ তারা জানে আন্দোলনে তারা সফল হয়নি, নির্বাচনেও হেরে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার আমরা আগের চেয়েও বেশি প্রস্তুত। আমাদের প্রস্তুতি আগের চেয়ে বেশি। পরিকল্পনা, প্রস্তুতি সব কিছুই সময় মতো সম্পন্ন করতে চাই। নির্বাচনে যাতে জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত। আমি এক কথা বলবো, সন্তোষজনক।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনাকে হটিয়ে খালেদা জিয়া দেশ চালায় গত বছরের ডিসেম্বরে। মনে আছে, তারেক রহমান এয়ারপোর্টে আসে। বাইডেনের উপদেষ্টা নামের কত কাণ্ড! কত নাটক যে এরা করতে পারে। কোথায় বাইডেনের এক উপদেষ্টা মিয়ান আরাফি, প্রথম দেখলাম ইংরেজিতে কথা বলে, পরে দেখলাম পুলিশের পিটুনি খেয়ে বাংলায় বরিশালের ভাষায় কথা বলে।
জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কিনা এটা দেখতে হবে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের কোনও টানাপোড়ন নেই। আমাদের সঙ্গে তাদের খুব ভালোভাবে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা পরস্পরের সহযোগী হবো, একটা ভালো নির্বাচনে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমার মনে হয় না, তারা দলগতভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের মতো আসনের ধারে-কাছে নেই জাতীয় পার্টি। সরকার গঠনের অনেক উপরে তারা প্রার্থী দিয়েছে। কোনও কোনও প্রার্থী কোনও অসুবিধার জন্য করতে পারছে না, সেটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচনে কোনও সমস্যা নেই। যাদের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে তারা কেউ তো নির্বাচন থেকে সরে যায়নি।’