Dhaka শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে : আইন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

শনিবার (১০ মে) বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (দ্বিতীয় খসড়া) এর ওপর একটি মতবিনিময় সভায় আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা সবকিছুই খুব প্রফেশনালভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা এই আইনটা কেন করে যেতে চাই, তার কারণ হলো আমাদের পরে যারা আসবে তারা এ আইনটা করবে কি না, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত না। আমরা এই আইন ও কমিশনকে শক্তিশালী করতে চাই। কারণ আমরা নিশ্চিত না পরবর্তী সরকার এই গুম কমিশন ও আইন শক্তিশালী করবে কি না। কাজেই আমরা এই কাজগুলো করে যেতে চাই।

আসিফ নজরুল বলেন, সংস্কার কার্যক্রমের কথা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বলে থাকেন। সেটারই অব্যাহত সংস্কার কার্যক্রমের একটা পার্ট হিসেবে আমরা এটাকে দেখছি। এখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা এসেছে, তারমধ্যে প্রিয়ামবেল-এর কথা বলেছেন, অবশ্যই আমরা সেটা করব। কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার। আজকে বেশিরভাগ আলোচকরা পৃথক আইন ও কমিশনের কথা বলেছেন, সেটা প্রয়োজন আছে। আর আইসিটি ও কনভেনশনাল কোর্ট, এই দুইটা কোর্টের মধ্যে যেসব সাংর্ঘষিক বিষয় আছে, সেগুলো আমরা পরিষ্কার করার চেষ্টা করব।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে। তিনি বলেন, ফরহাদ (ফরহাদ মজহার) ভাই, বারবার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের কথা বলেছেন। ট্রুথ জাস্টিস কমিশন অথবা ট্রুথ রিকনসিলিয়েশন কমিশনের খুব দরকার আছে। এটা সম্ভবত আমাদের দেশে ১৯৭২ সাল থেকে থাকলেই ভালো হতো।

আসিফ নজরুল বলেন, আমরা সবকিছুই খুব প্রফেশনালভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই। …আমরা ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করব। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা এবং আমি সাউথ আফ্রিকায় যাব। ফিরে এসে আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে।

গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এ আইনটা যত ভালো করে করা যায় তেমনভাবেই করব। সব পরামর্শই বিবেচনায় থাকবে। আমরা আইনটা করে যেতে চাই। কারণ, পরের সরকার এটা করবে কি না, আমরা নিশ্চিত নই।’

পরবর্তী সরকার গুমের কোনো আইন করলেও সেটা শক্তিশালী করবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এ আইনটা খুব শক্তিশালী করতে চাই। এখানে যে কমিশন আছে সেটাও খুব শক্তিশালী করতে চাই। কারণ, আমরা এটাও কনফার্ম না যে পরবর্তী সরকার গুমের কোনো আইন করলেও সেটা শক্তিশালী করবে কি না।

অতীত অপরাধকে কীভাবে এ আইনের আওতায় আনা যায়, সেটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করতে বদ্ধপরিকর।’

আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এমন একটা জাতি, যে সব কিছুই কনফ্রোন্টনাল-ভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই। আমি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করব। এ লক্ষ্যে আমি এবং চিফ জাস্টিস একটি টিম নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাতে যাচ্ছি। আমাদের সাথে ইউএনডিপিসহ আরও অনেকেই জড়িত আছেন। ফিরে এসে আপনাদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আমরা যখন ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করব তখন অবশ্যই আপনাদের ডাকা হবে।

তিনি বলেন, অনন্তকাল হানাহানি করে এই জাতির মুক্তি হবে না। আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, তারা তো খুব বেশি সংখ্যক না। তাদের উপযুক্ত যথেষ্ট পরিমাণ শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই আমাদের করতে হবে। তারা যে এই জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন ও মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হলেও আমাদের ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করতে হবে।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের উপযুক্ত বিচার করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা বদ্ধপরিকর। একই সাথে আমরা এই ধরনের আইন করে যাব, যাতে এই অপরাধগুলো ভবিষ্যতে না হয়। একই সঙ্গে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করে যাব। যাতে বড় বড় গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধকারী, তারা যে এই সমাজে বিচ্ছিন্ন, সেটাও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, আইনজীবীসহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা। তারা এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় খসড়ার বিভিন্ন অস্পষ্টতা এবং সংশোধনযোগ্য ভুলগুলো তুলে ধরেন। বলেন, এই ইস্যু সমাধান না করতে পারলে এই রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হবে। জনগণের মনে তৈরি হবে ভীতি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে : আইন উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৬:০২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

শনিবার (১০ মে) বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (দ্বিতীয় খসড়া) এর ওপর একটি মতবিনিময় সভায় আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা সবকিছুই খুব প্রফেশনালভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা এই আইনটা কেন করে যেতে চাই, তার কারণ হলো আমাদের পরে যারা আসবে তারা এ আইনটা করবে কি না, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত না। আমরা এই আইন ও কমিশনকে শক্তিশালী করতে চাই। কারণ আমরা নিশ্চিত না পরবর্তী সরকার এই গুম কমিশন ও আইন শক্তিশালী করবে কি না। কাজেই আমরা এই কাজগুলো করে যেতে চাই।

আসিফ নজরুল বলেন, সংস্কার কার্যক্রমের কথা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বলে থাকেন। সেটারই অব্যাহত সংস্কার কার্যক্রমের একটা পার্ট হিসেবে আমরা এটাকে দেখছি। এখানে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা এসেছে, তারমধ্যে প্রিয়ামবেল-এর কথা বলেছেন, অবশ্যই আমরা সেটা করব। কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার। আজকে বেশিরভাগ আলোচকরা পৃথক আইন ও কমিশনের কথা বলেছেন, সেটা প্রয়োজন আছে। আর আইসিটি ও কনভেনশনাল কোর্ট, এই দুইটা কোর্টের মধ্যে যেসব সাংর্ঘষিক বিষয় আছে, সেগুলো আমরা পরিষ্কার করার চেষ্টা করব।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করা হবে। তিনি বলেন, ফরহাদ (ফরহাদ মজহার) ভাই, বারবার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের কথা বলেছেন। ট্রুথ জাস্টিস কমিশন অথবা ট্রুথ রিকনসিলিয়েশন কমিশনের খুব দরকার আছে। এটা সম্ভবত আমাদের দেশে ১৯৭২ সাল থেকে থাকলেই ভালো হতো।

আসিফ নজরুল বলেন, আমরা সবকিছুই খুব প্রফেশনালভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই। …আমরা ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করব। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা এবং আমি সাউথ আফ্রিকায় যাব। ফিরে এসে আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে।

গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এ আইনটা যত ভালো করে করা যায় তেমনভাবেই করব। সব পরামর্শই বিবেচনায় থাকবে। আমরা আইনটা করে যেতে চাই। কারণ, পরের সরকার এটা করবে কি না, আমরা নিশ্চিত নই।’

পরবর্তী সরকার গুমের কোনো আইন করলেও সেটা শক্তিশালী করবে কি না, সন্দেহ প্রকাশ করে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এ আইনটা খুব শক্তিশালী করতে চাই। এখানে যে কমিশন আছে সেটাও খুব শক্তিশালী করতে চাই। কারণ, আমরা এটাও কনফার্ম না যে পরবর্তী সরকার গুমের কোনো আইন করলেও সেটা শক্তিশালী করবে কি না।

অতীত অপরাধকে কীভাবে এ আইনের আওতায় আনা যায়, সেটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করতে বদ্ধপরিকর।’

আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এমন একটা জাতি, যে সব কিছুই কনফ্রোন্টনাল-ভাবে নিষ্পত্তি করতে চাই। আমি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করব। এ লক্ষ্যে আমি এবং চিফ জাস্টিস একটি টিম নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাতে যাচ্ছি। আমাদের সাথে ইউএনডিপিসহ আরও অনেকেই জড়িত আছেন। ফিরে এসে আপনাদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। আমরা যখন ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করব তখন অবশ্যই আপনাদের ডাকা হবে।

তিনি বলেন, অনন্তকাল হানাহানি করে এই জাতির মুক্তি হবে না। আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, তারা তো খুব বেশি সংখ্যক না। তাদের উপযুক্ত যথেষ্ট পরিমাণ শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই আমাদের করতে হবে। তারা যে এই জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন ও মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হলেও আমাদের ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করতে হবে।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের উপযুক্ত বিচার করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা বদ্ধপরিকর। একই সাথে আমরা এই ধরনের আইন করে যাব, যাতে এই অপরাধগুলো ভবিষ্যতে না হয়। একই সঙ্গে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করে যাব। যাতে বড় বড় গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধকারী, তারা যে এই সমাজে বিচ্ছিন্ন, সেটাও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, আইনজীবীসহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা। তারা এই অধ্যাদেশের দ্বিতীয় খসড়ার বিভিন্ন অস্পষ্টতা এবং সংশোধনযোগ্য ভুলগুলো তুলে ধরেন। বলেন, এই ইস্যু সমাধান না করতে পারলে এই রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হবে। জনগণের মনে তৈরি হবে ভীতি।