স্পোর্টস ডেস্ক :
১৯ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল টিম সাউদির। ২০০৮ সালের মার্চে নেপিয়ারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখেন এই পেসার। এরপর ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারের শেষে এবার ইতি টানতে চলেছেন সাউদি। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই টেস্ট ক্যারিয়ার সমাপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের টেস্ট সিরিজের। প্রথম টেস্টে দুই দল মাঠে নামবে আগামী ২৮ নভেম্বর ক্রাইস্টচার্চে। দুই দলের শেষ ম্যাচটি হবে হ্যামিল্টনে। এই ম্যাচটিই হবে সাউদির ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
১৬ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিয়ে সাউদি বলেন, ‘বড় হয়েছি নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার স্বপ্ন নিয়ে। এরপর ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে ১৮টি বছর খেলে যাওয়া আমার জন্য বড় সম্মানের। তবে যে খেলাটা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, সেটা থেকে সরে যাওয়ার এখনই সঠিক সময়। আমার হৃদয়ে টেস্টের জন্য বিশেষ স্থান আছে। যাদের বিপক্ষে এই লম্বা যাত্রার শুরুটা হয়েছিল, তাদের বিপক্ষেই এত বড় একটা সিরিজ এবং যে তিনটা মাঠ আমার কাছে অবিশ্বাস্য রকমের বিশেষ, সেখানে খেলতে পারাটা আমার ক্যারিয়ারের সমাপ্তির জন্য দারুণ মানানসই।’
ভারতকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাওয়ার দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছে। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে অনুষ্ঠেয় ওই ফাইনালে যদি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে কিউইরা, তবে সে ম্যাচে খেলতে চান সাউদি। তা না হলে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড সিরিজই হয়ে থাকবে তার শেষ টেস্ট ম্যাচ।
শেষ এক বছরে একটা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। এরপর চলতি বছর ভারতের মাটিতে ওই ইতিহাস। তাতে চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার আশাও জেগে উঠেছে। সব মিলিয়ে এখনই বিদায় বলার উপযুক্ত সময় বলে মনে হয়েছে তার।
তিনি বলেন, শেষ ১২ মাস আমাদের জন্য বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। এটার শেষ পর্যায়ে আছি আমরা। সামনে তাকালে আমাদের জন্য দারুণ এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বড় একটা সিরিজ অপেক্ষা করছে, যাদের বিপক্ষে আমি অনেক বছর আগে আমার যাত্রা শুরু করেছিলাম। তো এখনই মনে হচ্ছে সেরা সময়।
এবার সে অধ্যায়টা শেষ করার সময় চলে এসেছে, জানালেন তিনি। নিউজিল্যান্ড ফাইনালে খেললে সেখানেই খেলবেন শেষ ম্যাচটা। পয়েন্ট তালিকার চারে আছে কিউইরা। অনেকগুলো যদি কিন্তু মিলে গেলে নিউজিল্যান্ড চলে যাবে ফাইনালে।
বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে কাছের মানুষজনকে ধন্যবাদ জানাতেও ভোলেননি সাউদি। বললেন, ‘পরিবার, বন্ধু, কোচ, ভক্ত এবং খেলার সঙ্গে জড়িত যারা ক্যারিয়ারজুড়ে আমাকে সহায়তা করেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
২০২২ থেকে ২০২৪-এই সময়ে নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাউদি। তার অধীনে ১৪ টেস্ট খেলেছে কিউইরা। তবে সাউদি সকলে স্মরণ করবে নিউজিল্যান্ডের সেরা বোলার হিসেবে। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৭৭০ উইকেট তার দখলে। সাউদির বাইরে বাঁহাতি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টরি (৬৯৬) ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আর কোনো বোলার ন্যূনতম টেস্টে ৩০০, ওয়ানডেতে ২০০ এবং টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট নিতে পারেননি।
সাউদি এখন পর্যন্ত ১০৪ টেস্টে নিয়েছেন ৩৮৫ উইকেট, যা নিউজিল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের জন্যও বিশেষভাবে আলোচিত থাকবেন সাউদি। মূলত টেস্ট ক্রিকেটে তার ৯৩টি ছক্কার কারণে। যা টেস্ট ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। টেস্ট নিউজিল্যান্ডের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কা তার। টেস্টে ১০৭ ছক্কা মেরে সাউদির উপরে আছে শুধু ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
এদিকে চলতি মাসেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে। ক্রাইস্টচার্চ ও ওয়েলিংটন হয়ে হ্যামিল্টনে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বর। এই ম্যাচ দিয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন সাউদি।