Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টিকটক করতে ফটোগ্রাফারকে খুন করে ক্যামেরা ছিনতাই, গ্রেফতার ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে খুন করে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির হাজারীবাগ থানা পুলিশ। হত্যাকারী আসামিরা টিকটকে ভিডিও করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে।

বুধবার (২১ মে) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. নাঈম আহম্মেদ (২০), মো. শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), মো. শাহীন চৌকিদার (২২), মো. রহিম সরকার (১৯), মো. নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), মো. আনোয়ার হোসেন (১৯), মো. শহিদুল ইসলাম (২০) ও মো. আরমান (১৮)।

মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ছিনতাইকৃত দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

হাজারীবাগ থানা সূত্রে জানা যায়, নুরুল ইসলাম (২৬) “Nurislam Photographer” নামে একটি ফেসবুক পেজ চালিয়ে বিভিন্ন ইভেন্টে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। গত ১৫ মে একটি অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে নুরুলের মোবাইলে কল আসে। অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি বিয়ের ইভেন্টে ছবি তোলার জন্য তাকে বুকিং দিয়ে ৫০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম পাঠায়। পরের দিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে তাকে একই নম্বর থেকে ফোন করে শংকর চৌরাস্তায় অপেক্ষা করার কথা জানানো হয়।

নুরুল ইসলাম তার সহযোগী মো. ইমন ওরফে নুরে আলমসহ মতিঝিলের এজিবি কলোনীর বাসা হতে বের হয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি শংকর বাসস্ট্যান্ডে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা ওই ব্যক্তির কথামতো একটি অটোরিকশায় জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা করেন। রাত আনুমানিক ৮টার ঘটিকার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছামাত্র অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা তাদের রিকশার গতিরোধ করে।

ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায় কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা নুরুল ইসলামকে ধরে ফেলে। তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুল ইসলামের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙ্গুলে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার কাছে থাকা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। নুরুল ইসলামের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুষ্কৃতিকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে ভিকটিম নুরুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলামের বড় ভাই মো. ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা সূত্র জানায়, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। এরপর মঙ্গলবার ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ঢাকার শংকর ও রায়েরবাজার এবং ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া ও তারাকান্দা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

হাজারীবাগ থানা সূত্র আরও জানায়, গ্রেফতারকৃতরা ১৮-২০ বছর বয়সি। তারা টিকটকে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করতো। উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে তারা। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী খেলার মাঠে ফুটবল খেলার পর নাঈম আহম্মেদের নেতৃত্বে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম করে ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে কৌশলে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত নাঈম শংকর বাসস্ট্যান্ডে নূরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইমনের সঙ্গে দেখা করে। নাঈম তাদেরকে একটি অটোরিকশায় জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া ‘ক্ষণিকালয়’ নামক বাসার গেটের সামনে অটোরিকশাটি পৌঁছলে গ্রেফতারকৃত নাঈম, শাহীন, শাহীনুল, রহিম, নয়ন, রিদয়, রাজ্জাক, আনোয়ার, শহিদুল ও আরমান অটোরিকশার গতিরোধ করে নূর ইসলামের কাছ থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ক্যামেরা দিতে না চাইলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরুল ইসলামের শরীরে এলোপাথাড়ি আঘাত করে এবং ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

টিকটক করতে ফটোগ্রাফারকে খুন করে ক্যামেরা ছিনতাই, গ্রেফতার ১০

প্রকাশের সময় : ০৩:১৫:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে খুন করে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির হাজারীবাগ থানা পুলিশ। হত্যাকারী আসামিরা টিকটকে ভিডিও করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে।

বুধবার (২১ মে) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. নাঈম আহম্মেদ (২০), মো. শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), মো. শাহীন চৌকিদার (২২), মো. রহিম সরকার (১৯), মো. নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), মো. আনোয়ার হোসেন (১৯), মো. শহিদুল ইসলাম (২০) ও মো. আরমান (১৮)।

মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ছিনতাইকৃত দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

হাজারীবাগ থানা সূত্রে জানা যায়, নুরুল ইসলাম (২৬) “Nurislam Photographer” নামে একটি ফেসবুক পেজ চালিয়ে বিভিন্ন ইভেন্টে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। গত ১৫ মে একটি অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে নুরুলের মোবাইলে কল আসে। অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি বিয়ের ইভেন্টে ছবি তোলার জন্য তাকে বুকিং দিয়ে ৫০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম পাঠায়। পরের দিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে তাকে একই নম্বর থেকে ফোন করে শংকর চৌরাস্তায় অপেক্ষা করার কথা জানানো হয়।

নুরুল ইসলাম তার সহযোগী মো. ইমন ওরফে নুরে আলমসহ মতিঝিলের এজিবি কলোনীর বাসা হতে বের হয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি শংকর বাসস্ট্যান্ডে তাদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা ওই ব্যক্তির কথামতো একটি অটোরিকশায় জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা করেন। রাত আনুমানিক ৮টার ঘটিকার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছামাত্র অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীরা তাদের রিকশার গতিরোধ করে।

ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায় কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা নুরুল ইসলামকে ধরে ফেলে। তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুল ইসলামের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙ্গুলে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার কাছে থাকা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। নুরুল ইসলামের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুষ্কৃতিকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে ভিকটিম নুরুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলামের বড় ভাই মো. ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

থানা সূত্র জানায়, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। এরপর মঙ্গলবার ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ঢাকার শংকর ও রায়েরবাজার এবং ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া ও তারাকান্দা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

হাজারীবাগ থানা সূত্র আরও জানায়, গ্রেফতারকৃতরা ১৮-২০ বছর বয়সি। তারা টিকটকে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করতো। উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে তারা। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী খেলার মাঠে ফুটবল খেলার পর নাঈম আহম্মেদের নেতৃত্বে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম করে ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে কৌশলে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত নাঈম শংকর বাসস্ট্যান্ডে নূরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইমনের সঙ্গে দেখা করে। নাঈম তাদেরকে একটি অটোরিকশায় জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া ‘ক্ষণিকালয়’ নামক বাসার গেটের সামনে অটোরিকশাটি পৌঁছলে গ্রেফতারকৃত নাঈম, শাহীন, শাহীনুল, রহিম, নয়ন, রিদয়, রাজ্জাক, আনোয়ার, শহিদুল ও আরমান অটোরিকশার গতিরোধ করে নূর ইসলামের কাছ থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ক্যামেরা দিতে না চাইলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরুল ইসলামের শরীরে এলোপাথাড়ি আঘাত করে এবং ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।