Dhaka মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না : জামায়াত আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে নারাজ তাদের জন্য ২৬ এ কোনো নির্বাচন নাই। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে। আর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। যারা জুলাইয়ের চেতনার প্রতি সম্মান রাখতে পারছে না, তারা জাতীয় নির্বাচনে মানুষের মতকে সম্মান জানাবে কীভাবে?

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টন মোড়ে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি ও নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত আট দলের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে জনগণের ভাষা বোঝার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলেই এই পল্টনে আমরা কথা বলতে পারছি। জনগণের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। তাদের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হলে পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, জুলাই সনদে জনগণের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের দাবি পূরণ না করতে পারছি, ততক্ষণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি মানবেন না, তাদের জন্য ২০২৬ সালের নির্বাচন না। আমাদের ১ নম্বর দাবি হচ্ছে, জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই। ২৬ এ নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কখন হবে এই আইনি ভিত্তির গোড়া পত্তন?

জামায়াত আমির বলেন, এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের দাবি একটাই, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হতেই হবে। গণভোটের ব্যাপারে সকল দল একমত। তাহলে তারিখ নিয়ে এই বাইনাবাজি কেন? একমত হয়ে যেহেতু সবাই স্বাক্ষর করেছি তখন গণভোট আগে হওয়ায় যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়েই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশাল্লহ এবং এর ভিত্তিতেই আগামীর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাল্লাহ। ওই নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে তখন কোনো সংশয় সন্দেহ থাকবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এটা নিয়ে কেউ ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাবেন না। উদর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে ফেলবেন না।

তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে সকল দল আমাদের মতামত দিয়েছি। এই আট দলের পক্ষ থেকে ডজনখানেক নোট অব ডিসেন্ট আমরা দেয়নি। আমরা প্রস্তাবনাগুলো যৌক্তিক মনে করে সেখানে আমরা ইতিবাচক মত দিয়েছি।

সবাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম মিয়া পরওয়ার বলেন, ‘সাংবিধানিক সংস্কারসমূহের আইনি ভিত্তি কেবলমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যথায় জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদানসহ পাঁচ দফা গণদাবিই আজকের এই জনসমাবেশের মূল উদ্দেশ্য।’

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ধারা বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। এখন যারা বলেন সংবিধানে গণভোট নেই, তারা কি তাহলে হাসিনার সুরে কথা বলেন না?’

তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের কথা সংবিধানে লেখা আছে। ২০২৪ এ যদি নির্বাচন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে নির্বাচন হবে কোথায় লেখা আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে ২০২৯ সালে।’

দেশে গণভোটের আগে কোনো কিছু হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, জুলাই সনদ আমরা কোনো কাগুজে সনদ হিসেবে দেখতে চাই না। জুলাই সনদকে আমরা আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই। এজন্য আমরা আট দলের পক্ষ থেকে বলেছি, অনতিবিলম্বে জুলাই সনদকে সরকারি আদেশের মাধ্যমে এর প্রাথমিক আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই মনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হয়ে জুলাই বিপ্লবপন্থীরা বরদাস্ত করবে না। আমরা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, আমাদের জুলাই যোদ্ধাদের, জুলাই বিপ্লবের শাহাদাত বরণকারী বীর শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে জুলাই বিপ্লবের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে আমরা আর কোনো কিছুই হতে দেব না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির বলেন, আমি জানি না, জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি পক্ষ কেন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাচ্ছে না। গণভোট হলে কার কী সমস্যা? জুলাই সনদের গণভোট ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হলে, যদি তপসিল ঘোষণা হয়ে বাস্তবায়িত হয় সেখানে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হবে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দ্বিকক্ষ সংসদের উচ্চকক্ষ কীভাবে গঠিত হবে? কীভাবে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনি মেনুফেস্টু (ইশতেহার) তৈরি করবে?

দলগুলো জাতির সামনে তাদের একশ প্রার্থীর তালিকা কীভাবে প্রকাশ করবে? এসব বিষয়ের কোনো সদুত্তর তাদের কাছে নাই। যারা জাতীয় সংসদের আগে জুলাই সনদের গণভোটের বিরোধিতা করছেন আমরা তাদের সমস্যা জানতে চাই। তাদের কাছে কোনো যুক্তি নাই। তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। – বলেন মামুনুল হক।

দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত মন্তব্য করে মামুনুল হক বলেন, এক ভাগ বাহাত্তরের বাকশালপন্থী, আরেক ভাগ জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থী। আজ প্রতিটি রাজনৈতিক পক্ষের কাছে আমার সুস্পষ্ট জিজ্ঞাসা, সবাই যার যার অবস্থান পরিষ্কার করুন। হয় আপনি জুলাইয়ের পক্ষপাতি, আর না হয় বাহাত্তরের বাকশালপন্থী। বাহাত্তরের পরাজিত বাকশালপন্থীরা আগামী ১৩ নভেম্বর লকডাউনের নামে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, ১৩ নভেম্বর আমরা কোনো বাকশালপন্থীকে বাংলার রাজপথে নামতে দেব না। রাজপথে তাদের মোকাবেলা করা হবে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, একটি দল যাদের জন্ম হয়েছিল গণভোটের মাধ্যমে, যাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গণভোটের মাধ্যমে, তারা আজ নতুন বঙ্গদেশে গণভোট মানতে চায় না। জনগণের চাপে তারা রাজি হলেও বলে বেড়াচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের দিন নাকি গণভোটের আয়োজন করবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রতীক-নির্ভর নির্বাচনে হ্যাঁ/না ভোট করে জুলাই আন্দোলনকে অপমান হতে দেব না।

তিনি বলেন, যারা নতুন করে জালেম হতে চাইছে, যারা নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে, ভূমি দখল করা শুরু করেছে, যারা নতুন করে রাহাজানি শুরু করেছে, যারা নতুন পরিচয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করতে চাইছে—সেই বিএনপিকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, ১৬ মাস আগে আপনারা মজলুম ছিলেন, নতুন করে জালেম হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

রাশেদ প্রধান বলেন, আগামী ১৩ তারিখ নতুন করে একটি দল দেওয়ার চেষ্টা করছে, কর্মসূচির নাম নাকি লকডাউন। পুরাতন জালেম আওয়ামী লীগ তাদের লকডাউন জারি করেছে। অর্থাৎ হিন্দুস্তানের সেবাদাস ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে হিন্দুস্তানে লক হয়ে গেছেন। আর দেশে যাদের রেখে গেছেন তারা ১৩ তারিখ ‘ডাউন’ হতে যাচ্ছেন—এটাই হচ্ছে তাদের লকডাউন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নতুন জালেম ও পুরাতন জালেম—দুপক্ষকেই একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আজকের এই মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখুন—আলেমরা এক হয়েছেন, জালিমদের দিন শেষ। বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমরা এখানে বসে আছেন, আছেন অসংখ্য তৌহিদী জনতা এবং অসংখ্য পতাকা। কিন্তু আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি কোরআন, দেখতে পাচ্ছি ইসলাম। অতএব এখান থেকে আওয়াজ উঠবে, যমুনায় গিয়ে তার শব্দ পৌঁছাবে।

রাশেদ প্রধান বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোট করতে হবে। আজকে শান্তিপূর্ণভাবে বাসায় ফিরে যাব, তবে অতিসত্বর ঘোষণা না এলে পরে যমুনা অভিমুখে যাত্রা শুরু হবে।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না : জামায়াত আমির

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না : জামায়াত আমির

প্রকাশের সময় : ০৪:৩১:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে নারাজ তাদের জন্য ২৬ এ কোনো নির্বাচন নাই। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে। আর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। যারা জুলাইয়ের চেতনার প্রতি সম্মান রাখতে পারছে না, তারা জাতীয় নির্বাচনে মানুষের মতকে সম্মান জানাবে কীভাবে?

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর পল্টন মোড়ে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি ও নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবিতে আয়োজিত আট দলের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে জনগণের ভাষা বোঝার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলেই এই পল্টনে আমরা কথা বলতে পারছি। জনগণের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। তাদের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হলে পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন।

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, জুলাই সনদে জনগণের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের দাবি পূরণ না করতে পারছি, ততক্ষণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি মানবেন না, তাদের জন্য ২০২৬ সালের নির্বাচন না। আমাদের ১ নম্বর দাবি হচ্ছে, জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই। ২৬ এ নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কখন হবে এই আইনি ভিত্তির গোড়া পত্তন?

জামায়াত আমির বলেন, এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের দাবি একটাই, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট হতেই হবে। গণভোটের ব্যাপারে সকল দল একমত। তাহলে তারিখ নিয়ে এই বাইনাবাজি কেন? একমত হয়ে যেহেতু সবাই স্বাক্ষর করেছি তখন গণভোট আগে হওয়ায় যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়েই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশাল্লহ এবং এর ভিত্তিতেই আগামীর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাল্লাহ। ওই নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে তখন কোনো সংশয় সন্দেহ থাকবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এটা নিয়ে কেউ ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাবেন না। উদর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে ফেলবেন না।

তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে সকল দল আমাদের মতামত দিয়েছি। এই আট দলের পক্ষ থেকে ডজনখানেক নোট অব ডিসেন্ট আমরা দেয়নি। আমরা প্রস্তাবনাগুলো যৌক্তিক মনে করে সেখানে আমরা ইতিবাচক মত দিয়েছি।

সবাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম মিয়া পরওয়ার বলেন, ‘সাংবিধানিক সংস্কারসমূহের আইনি ভিত্তি কেবলমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যথায় জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদানসহ পাঁচ দফা গণদাবিই আজকের এই জনসমাবেশের মূল উদ্দেশ্য।’

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ধারা বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। এখন যারা বলেন সংবিধানে গণভোট নেই, তারা কি তাহলে হাসিনার সুরে কথা বলেন না?’

তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের কথা সংবিধানে লেখা আছে। ২০২৪ এ যদি নির্বাচন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে নির্বাচন হবে কোথায় লেখা আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে ২০২৯ সালে।’

দেশে গণভোটের আগে কোনো কিছু হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, জুলাই সনদ আমরা কোনো কাগুজে সনদ হিসেবে দেখতে চাই না। জুলাই সনদকে আমরা আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে দেখতে চাই। এজন্য আমরা আট দলের পক্ষ থেকে বলেছি, অনতিবিলম্বে জুলাই সনদকে সরকারি আদেশের মাধ্যমে এর প্রাথমিক আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই মনদকে চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হয়ে জুলাই বিপ্লবপন্থীরা বরদাস্ত করবে না। আমরা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, আমাদের জুলাই যোদ্ধাদের, জুলাই বিপ্লবের শাহাদাত বরণকারী বীর শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে জুলাই বিপ্লবের জুলাই সনদ বাস্তবায়ন গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে আমরা আর কোনো কিছুই হতে দেব না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির বলেন, আমি জানি না, জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি পক্ষ কেন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাচ্ছে না। গণভোট হলে কার কী সমস্যা? জুলাই সনদের গণভোট ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হলে, যদি তপসিল ঘোষণা হয়ে বাস্তবায়িত হয় সেখানে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হবে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দ্বিকক্ষ সংসদের উচ্চকক্ষ কীভাবে গঠিত হবে? কীভাবে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনি মেনুফেস্টু (ইশতেহার) তৈরি করবে?

দলগুলো জাতির সামনে তাদের একশ প্রার্থীর তালিকা কীভাবে প্রকাশ করবে? এসব বিষয়ের কোনো সদুত্তর তাদের কাছে নাই। যারা জাতীয় সংসদের আগে জুলাই সনদের গণভোটের বিরোধিতা করছেন আমরা তাদের সমস্যা জানতে চাই। তাদের কাছে কোনো যুক্তি নাই। তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঠেকিয়ে দিয়ে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। – বলেন মামুনুল হক।

দেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত মন্তব্য করে মামুনুল হক বলেন, এক ভাগ বাহাত্তরের বাকশালপন্থী, আরেক ভাগ জুলাইয়ের বিপ্লবপন্থী। আজ প্রতিটি রাজনৈতিক পক্ষের কাছে আমার সুস্পষ্ট জিজ্ঞাসা, সবাই যার যার অবস্থান পরিষ্কার করুন। হয় আপনি জুলাইয়ের পক্ষপাতি, আর না হয় বাহাত্তরের বাকশালপন্থী। বাহাত্তরের পরাজিত বাকশালপন্থীরা আগামী ১৩ নভেম্বর লকডাউনের নামে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, ১৩ নভেম্বর আমরা কোনো বাকশালপন্থীকে বাংলার রাজপথে নামতে দেব না। রাজপথে তাদের মোকাবেলা করা হবে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, একটি দল যাদের জন্ম হয়েছিল গণভোটের মাধ্যমে, যাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গণভোটের মাধ্যমে, তারা আজ নতুন বঙ্গদেশে গণভোট মানতে চায় না। জনগণের চাপে তারা রাজি হলেও বলে বেড়াচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের দিন নাকি গণভোটের আয়োজন করবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রতীক-নির্ভর নির্বাচনে হ্যাঁ/না ভোট করে জুলাই আন্দোলনকে অপমান হতে দেব না।

তিনি বলেন, যারা নতুন করে জালেম হতে চাইছে, যারা নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে, ভূমি দখল করা শুরু করেছে, যারা নতুন করে রাহাজানি শুরু করেছে, যারা নতুন পরিচয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করতে চাইছে—সেই বিএনপিকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, ১৬ মাস আগে আপনারা মজলুম ছিলেন, নতুন করে জালেম হওয়ার চেষ্টা করবেন না।

রাশেদ প্রধান বলেন, আগামী ১৩ তারিখ নতুন করে একটি দল দেওয়ার চেষ্টা করছে, কর্মসূচির নাম নাকি লকডাউন। পুরাতন জালেম আওয়ামী লীগ তাদের লকডাউন জারি করেছে। অর্থাৎ হিন্দুস্তানের সেবাদাস ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে হিন্দুস্তানে লক হয়ে গেছেন। আর দেশে যাদের রেখে গেছেন তারা ১৩ তারিখ ‘ডাউন’ হতে যাচ্ছেন—এটাই হচ্ছে তাদের লকডাউন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নতুন জালেম ও পুরাতন জালেম—দুপক্ষকেই একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আজকের এই মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখুন—আলেমরা এক হয়েছেন, জালিমদের দিন শেষ। বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমরা এখানে বসে আছেন, আছেন অসংখ্য তৌহিদী জনতা এবং অসংখ্য পতাকা। কিন্তু আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি কোরআন, দেখতে পাচ্ছি ইসলাম। অতএব এখান থেকে আওয়াজ উঠবে, যমুনায় গিয়ে তার শব্দ পৌঁছাবে।

রাশেদ প্রধান বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই গণভোট করতে হবে। আজকে শান্তিপূর্ণভাবে বাসায় ফিরে যাব, তবে অতিসত্বর ঘোষণা না এলে পরে যমুনা অভিমুখে যাত্রা শুরু হবে।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন।