নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি যেকোনো সময়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত বলে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদ হাতে পাওয়ার পরে ৩০ তারিখেই কিছু সংশোধনসহ জবাব দিয়েছে বিএনপি। সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) গুলশানে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক মূল্য আছে। ঘোষণাপত্রের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তা ফেব্রুয়ারিতেই জবাব দিয়েছে বিএনপি। প্রস্তাবে ২৬ মার্চকে উপস্থাপন করতে চাননি আর এরসঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপি। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি চতুর্থ তফসিলের মাধ্যমে দেওয়া হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রের ক্ষেত্রে বিএনপি যে সংশোধনী দিয়েছে তা মেনে না নেওয়া হলে ঘোষণাপত্র পাঠের পর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপি।
সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিএনপি নাকি সহযোগিতা করছে না। নিশ্চয়তা না পেলে সনদে সই করবেন না বলছেন। এসব বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য বজায় রাখতে সবাইকে আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার কমিশনের ১৯টি মৌলিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৯টির মধ্যে ৭টিতে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি। আর ১২টিতে একমত হয়েছে।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানের দাওয়াত এখনও বিএনপি পায়নি বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা।
তিনি বলেন, “এখন প্রশ্ন আসে যে, জুলাই সনদে অঙ্গীকার কি সনদে স্বাক্ষরে মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি এটা বাস্তবায়নের জন্য অন্য ধাপে আলোচনা হবে। এটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছে, অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে একটা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে, বিএনপি সহযোগিতা করছে না। আমরা যা যা সহযোগিতা করেছি সেটা ব্রডকাস্ট করা হয়েছে জাতির কাছে দৃশ্যমান। আমরা প্রত্যেকটি প্রেস ব্রিফিঙের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য, ঐক্যমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে সেটা সরাসরি প্রেসকে জানিয়েছি।”
তিনি বিএনপির অতীতে দেওয়া ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন।
“৩১ দফা বাস্তবায়ন করা আমাদের প্রতিশ্রুতি জাতির কাছে অনেক আগের। সেই জায়গায় আমাদের উদ্দেশ্য বা আমাদের নিয়ত নিয়ে কেউ যেন কোনো প্রশ্ন না করে। যে সমস্ত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক এবং রাজনৈতিক হীনমন্যতার প্রকাশ বলে আমরা মনে করি।
“আমরা চাই সমস্ত কিছু আইনানুগ হোক, সংবিধান প্রক্রিয়ায় হোক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যই দিয়ে হোক।”
সালাহউদ্দিনের কথায়, বিএনপি সব আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত আছে। এবং
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য যে কোনো প্রক্রিয়ার সাথে বিএনপি ঐকমত্য পোষণ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, “জুলাই সনদে যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিমার্জন এবং বিদ্যমান আইনের সংশোধন-পরিবর্তন-পরিমার্জন এবং নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
“পরবর্তী জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে, বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এবং এইসব সংস্কার টেকসইয়ের প্রতি অঙ্গীকার করছি-এই প্রস্তাব জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের। আমরা একমত হয়েছি।
‘‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নে প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষায় পূর্ণ নিশ্চিয়তা বিধানে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতবদ্ধ-এই প্রস্তাব ঐক্যমত্য কমিশনের, এতেও আমরা একমত হয়েছি। গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অব্যাহত সংগ্রাম ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় গুম-খুন-বিচারবর্হিভূত হত্যা, মামলা-নিপীড়নের শিকার হয়েও দীর্ঘ ১৬ বছরের অব্যাহত লড়াই এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সংবিধানে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকব-এই প্রস্তাব ঐক্যকমিশনে-এতে আমরা একমত হয়েছি। আমরা সম্পূর্ণ একমত হয়ে ৩০ জুলাই রাতেই জমা দিয়েছি।”
সালাহ উদ্দিন বলেন, “সংস্কারের যেসব প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশন থেকে দেওয়া হয়েছে সেটাতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছি। এখন অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যদি ভিন্ন কোনো বক্তব্য দেয় সেটা ঐকমত্য কমিশনের কাছে দিতেই পারে, তারা আলোচনা করতে পারে। সেই আলোচনায় আমাদের অংশগ্রহণের জন্য বললে আমরা যেতে পারি।”
তবে কোনো অবাস্তব এবং অলীক প্রক্রিয়ার কথা বলা হলে বিএনপি এর ভেতরের উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, “কারণ নির্বাচিত সরকারের কাছে যদি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব না দেওয়া হয় তাহলে কাকে দেওয়া হবে? অনির্বাচিত সরকারের কাছে? অনির্বাচিত সরকার তো বর্তমানে আছে এবং যেহেতু জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়, তারা তো সংস্কার প্রস্তাব যেগুলো বাস্তবায়নের দরকার সেটা তো করে যাচ্ছে, এই প্রক্রিয়ার বাইরে শুধুমাত্র থাকবে সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে।
“এখন যদি আমরা ধরে নেই কোনো কাগজি প্রক্রিয়া, কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া জাতীয় সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধন করা যায় তাহলে সেটা কোন প্রক্রিয়া তারা সাজেস্ট করুক, এই সাজেশনের সাথে জাতিকে একমত হতে হবে, যদি অবৈধ প্রক্রিয়া হয় সেটা জাতি মেনে নেবে?”
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে অনেক আগেই বিএনপি তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে বলে সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন।
রাষ্ট্র সংস্কারের ১৯টি মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর খবর এলেও জুলাই সনদে শেষমেশ কতগুলো রাজনৈতিক দল সই করবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসার পর জামায়াত ও এনসিপি বলছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি না দিলে তাতে তারা সই করবে কিনা, সেটা ভেবে দেখবে।
আবার শেষ দিনের বৈঠকে সিপিবি ও বাসদসহ চার বামপন্থি দল জাতীয় চার নীতি বাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বৈঠক বর্জন করে বলেছে, কমিশনে প্রস্তাবে পরিবর্তন না এলে জুলাই সনদে তাদের সই করার সম্ভাবনা নেই।
আর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জাতীয় সনদের এখনই আইনি ভিত্তি প্রয়োজন নেই।