নিজস্ব প্রতিবেদক :
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না বলে মনে করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেছেন, কোনো হত্যাকাণ্ডই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি ছাড়া হয়নি।
শনিবার (০৪ জানুয়ারি) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র অয়োজনে ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরাজয় নিয়ে ছায়া সংসদ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বা আওয়ামী লীগের সমর্থন করেননি তাদের গণহারে নির্মূল করতে আটক করে নির্যাতন, হত্যা ও গুম করা হয়েছে, তা শেখ হাসিনার জ্ঞাতসারেই করা হয়েছে বলে আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। এ সব চিন্তাভাবনার কারণে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বহুদূর সরে গিয়েছিল। তরুণ ছাত্র ও জনতার প্রতিরোধের মুখে তাই একপর্যায়ে এভাবে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, রাজনীতি একটি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যে জাতি রাজনৈতিক দিক থেকে যত সমৃদ্ধ সে জাতি অন্যান্য সব দিকে ততই উন্নতি করতে পারে। তাই রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নতির জন্য যথাযথ রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব উভয়ই গড়ে তোলা দরকার, এ কথা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। জুলাই-আগস্টে যারা বুক পেতে প্রাণ দিলেন, তাদের ত্যাগের যথাযথ মর্যাদা দানের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমত পোষণকারীদের নির্মমভাবে দমন করা হতো উল্লেখ করে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) গুম, হত্যা, টর্চার সেল ও আয়নাঘরের মতো নির্যাতনকেন্দ্র করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। পঁচাত্তরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলে চব্বিশে এসে আওয়ামী লীগের এই করুণ পরিণতি হতো না।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি ধাপে ধাপে দূষিত হয়েছে বলেও মনে করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ বিচারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে দলীয় বিবেচনায় বিচারকদের নিয়োগ দিয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশন ও সুপ্রিমকোর্ট থেকে যেসব রাজনৈতিক মামলার রায় হয়েছে, সেসবের প্রতি মানুষের আস্থা ছিল না। ফলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে যায়।
শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাসের নায়ক করতে গিয়ে অনেক জাতীয় নেতার অবদান ইতিহাস থেকে আওয়ামী লীগ মুছে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণে চুয়াত্তরে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সে সময় প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনেক ক্ষুধার্ত মানুষকে মারা যেতে দেখা গেছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে।
এই ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকেরা বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারীদের ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদ দেওয়া হয়েছে।