নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে এরই মধ্যে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার নেতাকর্মী।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে দিকে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মানববন্ধন শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
সকাল ৯টা থেকে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎস্যজীবী দলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। এসময় নেতাকর্মীরা মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, জেলে নিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, অবৈধ নির্বাচন মানি না মানবো নাসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
মানববন্ধন উপলক্ষ্যে পল্টন মোড়ে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। ইতোমধ্যে পল্টন থেকে প্রেস ক্লাব অভিমুখে সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জল কামান এবং এপিসিও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কথা হয় মানববন্ধনে আসা বিএনপির রমনা থানার কর্মী সজয় ইসলাম সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকার বলছে দেশে বিএনপি নেই এটা ভুল। দেখা যাবে দেশের ৮০ ভাগ লোকই বিএনপি। দেশ থেকে যদি বিএনপি নিশ্চিহ্ন করতে হয়, তাহলে এই ৮০ ভাগ লোকই মেরে ফেলতে হবে।
মানববন্ধনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত হয়েছেন।
একই সময়ে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এলডিপি, হাইকোর্ট কদম ফোয়ারার উল্টো দিকে গণফোরাম ও পিপল্স পার্টি, বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে গণঅধিকার পরিষদ (নুর), জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, পুরানা পল্টন দলীয় অফিসের সামনে গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া), জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্রঅধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বেলা ১২টায় তোপখানা রোড মেহেরবা প্লাজার সামনে লেবার পার্টি, বেলা ৩টায় বিজয় চত্বর বিজয়নগর ৭১ হোটেলের সামনে এবি পার্টি মানববন্ধন করবে।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলের মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং তসফিল বাতিলের দাবিতে দশম দফায় ২০ দিন অবরোধ এবং তিন দফায় চার দিন হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে। সবশেষ দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি, যা গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হয়।
একঘেয়ে হয়ে পড়ায় এক মাসের অধিক সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে সাময়িক বিরতি দিতে চায় বিএনপি। উদ্দেশ্য, নেতাকর্মীদের কিছুটা বিশ্রাম দেওয়া, আত্মগোপন অবস্থা থেকে তাদের বের করে আনা এবং নতুন করে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা। এর অংশ হিসেবে গত ২৪ নভেম্বর থেকে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে ঢাকায় পেশাজীবী এবং কারাবন্দি ও গুম-খুন পরিবারের ব্যানারে একাধিক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
বিএনপি ও যুগপতের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানববন্ধনের কর্মসূচি নির্বিঘ্নে পালিত হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের বিকল্প কর্মসূচি আসতে পারে। এক্ষেত্রে ঢাকাসহ সারা দেশে গণমিছিল, সমাবেশের কর্মসূচি বিবেচনায় রয়েছে তাদের।
এছাড়া আগামী ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর দুটি জাতীয় দিবসও পালন করা হবে। বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস পালনের বিষয়টি চিঠি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার পুলিশকে অবহিত করেছে বিএনপি। আর মানববন্ধনের কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করা হলে ফের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে।