Dhaka শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার ও জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাস (৭৮) মারা গেছেন।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে তিনি রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের আইসিইউতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শিব নারায়ণ দাসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবন্ত এক ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

সম্প্রতি অসুস্থতা নিয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন শিব নারায়ণ দাস। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়।

কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া শিব নারায়ণ দাসের পিতা আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক সতীশচন্দ্র দাস ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। শিব নারায়ণের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী এবং তাদের সন্তান অর্ণব আদিত্য দাস।

শিবনারায়ণ দাস ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি বাহিনী মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি-১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।

ঐতিহাসিক সেই সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় সর্বসম্মতিতে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারী দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে এনে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হল এর ৩১২ নম্বর কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হলো পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। শিবনারায়ণ দাস পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকলেন লাল বৃত্তের মাঝে। পরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পটুয়া কামরুল হাসান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নতুন রূপ দেন। রচিত এই পতাকাই কিছুদিন পর স্বীকৃতি লাভ করে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে। মুক্তিসংগ্রামের উত্তাল দিনগুলিতে জনতার হাতে হাতে এই পতাকা বাঙালির আত্মপরিচয়কে মূর্ত করে তুলে।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ন দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। যদিও ১৯৭২ সালে সরকার শিবনারায়ন দাসের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রারম্ভিক দিসগুলিতে শিব নারায়ণ দাসের অঙ্কিত জাতীয় পতাকা মুক্তি পাগল বাঙালির আবেগের সঙ্গে মিশে আছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক শোকবার্তায় শিবনারায়ণ দাসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ওসমান হাদির জানাজায় আগতদের জন্য ডিএমপির ট্রাফিক নির্দেশনা

জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন

প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার ও জাসদ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাস (৭৮) মারা গেছেন।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে তিনি রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের আইসিইউতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এক পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শিব নারায়ণ দাসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবন্ত এক ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

সম্প্রতি অসুস্থতা নিয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন শিব নারায়ণ দাস। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত তাকে বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়।

কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া শিব নারায়ণ দাসের পিতা আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক সতীশচন্দ্র দাস ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। শিব নারায়ণের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী এবং তাদের সন্তান অর্ণব আদিত্য দাস।

শিবনারায়ণ দাস ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহণের কথা ছিল। এ লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি বাহিনী মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি-১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।

ঐতিহাসিক সেই সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় সর্বসম্মতিতে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারী দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে এনে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হল এর ৩১২ নম্বর কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হলো পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। শিবনারায়ণ দাস পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকলেন লাল বৃত্তের মাঝে। পরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে পটুয়া কামরুল হাসান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নতুন রূপ দেন। রচিত এই পতাকাই কিছুদিন পর স্বীকৃতি লাভ করে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে। মুক্তিসংগ্রামের উত্তাল দিনগুলিতে জনতার হাতে হাতে এই পতাকা বাঙালির আত্মপরিচয়কে মূর্ত করে তুলে।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিবনারায়ন দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। যদিও ১৯৭২ সালে সরকার শিবনারায়ন দাসের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রারম্ভিক দিসগুলিতে শিব নারায়ণ দাসের অঙ্কিত জাতীয় পতাকা মুক্তি পাগল বাঙালির আবেগের সঙ্গে মিশে আছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক শোকবার্তায় শিবনারায়ণ দাসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।