নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে; ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরা। শিশুরা কিন্তু তাড়াতাড়ি শেখে। আমরা বৃদ্ধরা কোথায় (মোবাইলে) টিপবো। এ দেশের আমার ছোট্ট সোনামণিরা তো স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সৈনিক হবে। এটাই আমি চাই।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত শেখ রাসেল ও স্মার্ট বাংলাদেশ পদক প্রদান ও শেখ রাসেল দিবস-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্পাদিত ‘স্মরণে আবরণে শেখ রাসেল’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১০টি প্রকল্প উদ্বোধন ও সাতটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে শেখ রাসেল পদক-২০২৩ ও স্মার্ট বাংলাদেশ-২০২৩ পুরস্কার প্রদান করেন তিনি।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আগামী দিনে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ করবো। আজকের শিশু-কিশোররাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ চালাবে। আমি সেভাবে তোমাদের গড়ে তুলতে চাই।
আমাদের শিশুরা আরও উন্নত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ থেকে ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ কেমন ছিল? ’৯৬ সালে সরকারে এসে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছি, ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছি। ২০০৯-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। আমরা শান্তি চাই, আমরা দেশের উন্নতি চাই।
এ সময় শিশুদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের শিশুরা লেখাপড়া শিখবে। এখানে অনেক শিশুরা রয়েছে, তোমরা গুরুজনের কথা মেনে চলবে, মা-বাবার কথা মেনে চলবে। তোমরা লেখাপড়া শিখবে। একটা কথা মনে রাখবে, ধনসম্পদ কিছু থাকবে না, শুধু শিক্ষাটা থাকবে। শিক্ষাটাই মূল শক্তি।
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি বলবো, আমাদের সন্তানদের কাছে একটি উপদেশ থাকবে- তোমরা পড়াশুনা করবে। ওই জঙ্গিবাদ, মাদক, সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকবে। আজকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করছি। আজকের শিশুরাই তো স্মার্ট বাংলাদেশ পরিচালনা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের ছোটবেলা থেকে একটা কথাই শিখিয়েছি, টাকাপয়সা ও সম্পদ আমরা কিছুই রেখে দিতে পারবো না, তোমাদের লেখাপড়া শিখতে হবে। তারা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ধর্ম-বর্ণ সকলকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। আর কেউ যদি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হয়, কেউ যদি পঙ্গু হয়, আমরা তো ছোটবেলায় শিখেছি, অন্ধ অন্ধ বলিও না, পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না। বরং তাদের সাহায্য করো। আমাদের শিশুদের সেভাবেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।
দেশের প্রতিটি স্কুলে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিশুরা কিন্তু তাড়াতাড়ি শিখে। আমরা বৃদ্ধরা শিখতে গেলে কোথায় বোতাম টিপতে হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হয়, আর ওরা কিন্তু ভেতর থেকে শিখে ফেলে।
নিজের চার বছরের নাতনির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার চার বছরের নাতি আমাকে শিখায় যে, তুমি এটা (কম্পিউটার) টিপতে থাকো, টিপতে টিপতে পেরে যাবা। আর মোবাইল ফোনের পিন নম্বরটা, শুনলে অবাক হবেন, তারা গেম খেলবে এ কারণে আমি তাদেরকে পিন দেবো না। আমি লুকিয়ে পিন দিচ্ছি, আর আমার চশমার রিফ্লেকশন থেকে আমার নাতি সে নম্বর নিয়ে নিয়েছে। আমাকে বলে আমি জেনে গেছি তুমি কী করো। তো এরা এতো স্মার্ট। আমাদের এই ছোট্ট সোনামণিরা আমার স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট সৈনিক হবে। এটাই তো আমি চাই।
তিনি বলেন, আজ বিশ্বে একের পর এক যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এখন আবার ফিলিস্তিনের ওপর আক্রমণ করছে ইসরায়েল। দুপক্ষেরই শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল দেখলাম হাসপাতালে আক্রমণ হয়েছে। সেখানেও শিশু মারা গেছে। এই যুদ্ধের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও শিশু। যুদ্ধের ফলে শিশু হারায় বাবা-মা, বাবা-মা হারায় সন্তানদের। ১৯৭১ ও ১৯৭৫-এ আমরা এই ভয়াবহতা দেখেছি। আজ আমাদের এখানে তাপস (মেয়র ফজলে নূর তাপস) আছে, সে শিশু বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়েছে।
যুদ্ধ ও অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। বিশ্বনেতাদের বলবো, এই যুদ্ধ বন্ধ করুন। অস্ত্র বানানোর টাকা বিশ্বের উন্নয়নে ব্যয় হোক। আমরা যুদ্ধ চাই না, কারণ যুদ্ধ ধ্বংস করে। আমরা শান্তি চাই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমার ছোট্ট ভাই রাসেলের মতো আর যেন কাউকে জীবন না দিতে হয়, এটাই আমি চাই। আমরা যুদ্ধ চাই না, কারণ যুদ্ধ ধ্বংস করে। আমরা শান্তি চাই।
তিনি বলেন, শিশুদের স্বাধীন দেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিশু-কিশোরদের নিয়ে এই সংগঠন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সব মানুষকে মানুষের দৃষ্টিতে দেখা এবং অটিস্টিক বা পিছিয়েপড়াদের আরও এগিয়ে নিতে হবে, এটাই এই সংগঠনের লক্ষ্য।
৭১ সালের বন্দিজীবনের স্মৃতিচারণ করে সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যখন বন্দি ছিলাম, একবার চেষ্টা করেছে ভেতরে এসে আমাদের ওপর হামলা করতে। একটা ছোট্ট তার আমাদের বাঁচিয়ে দেয়। একটা কাপড় ঝোলানো তারের সঙ্গে লেগে সে অফিসার পড়ে যায়, পরে সে ফিরে যায়। পরে কর্নেল অশোক আসে। সেদিনটি ছিল ১৮ তারিখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করার পর থেকে আমার প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশকে আর্থসামাজিকভাবে উন্নত করবো। ছোট্ট শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত স্কুল করে দেওয়া, বই দেওয়া, খেলাধুলার ব্যবস্থা করা, এসবের মধ্যদিয়ে শিশুদের গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেছি। ছোটবেলা থেকে যেন খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার অভ্যাস হয়, সে ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বন্দিখানার পাশে রাসেল প্যারেড দেখেছে। গ্রামের বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে সে প্যারেড করতো। বাচ্চাদের পুরস্কারও দিতো। তার জীবনের বড় স্বপ্ন ছিল- সে বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে। কিন্তু তার সে স্বপ্ন তো পূরণ হতে দিলো না।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের সভাপতিত্বে ও ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন রনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব সামসুল আরেফিন, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফাত, সাংগঠনিক সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন প্রমুখ।
শিশু রাসেলের জীবন সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে তার জন্মদিনকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে ‘শেখ রাসেল দিবস’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়’।