শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি :
‘ছাত্রলীগের উপরে কোনো সন্ত্রাস নাই, কোনো শক্তি নাই’ নিজের সংগঠন নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রুবেল বেপারী।
উপজেলার টিঅ্যান্ডটি মোড় এলাকায় রোববার বিকেলে জাজিরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ওই বক্তব্যের চার মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রুবেল তার ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেছেন। গতকাল থেকে তার ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
মঙ্গলবার দুপুরে পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন।
প্রসঙ্গত, ইদ্রিস ফরাজীর নির্বাচনী প্রতীক মোটরসাইকেল এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এসএম আমিনুল ইসলাম রতনের নির্বাচনী প্রতীক ঘোড়া।
রুবেল বেপারীকে ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ইদ্রিস ফরাজীর বিরুদ্ধে যিনি প্রার্থী হয়েছেন, তিনি নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। নৌকা প্রতীকের পক্ষে যারা কাজ করেছেন, তাদেরকে হত্যা করে তিনি মার্ডার মামলার আসামি হয়েছেন। সকলেই জানেন, তিনি নানান জায়গায় বক্তৃতায় ইদ্রিস ফরাজীর বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি দেন। আসলে সাধারণ মানুষ ইদ্রিস ফরাজীর পক্ষে রয়েছেন। আমরাও ইদ্রিস ফরাজীর পক্ষে রয়েছি। আপনার এই হুমকি-ধামকি কোনো কাজে আসবে না। আগামী ২১ তারিখের নির্বাচন একটি স্বচ্ছ, সুন্দর ও গঠনমূলক নির্বাচন হবে। সাধারণ মানুষ নিরাপদে শান্তিতে ভোট দেবে। ইদ্রিস ফরাজীকে মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে চেয়ারম্যান বানিয়ে আমরা ঘরে ফিরব, এর আগে আমরা কেউ ঘরে ফিরব না,’ বলেন রুবেল।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস রাখি, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোবারক আলী শিকদার ১০ বছর উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বংশে বংশে বিভেদ সৃষ্টি করেন নাই। কারও ভূমি দখল করেন নাই। কারও সঙ্গে মারামারি করতে যান নাই। আপনারা জানেন, রতন সরদারের (প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী) বিরুদ্ধে বড়কান্দি ইউনিয়ন, পালেরচর ইউনিয়ন, কুণ্ডেরচর ইউনিয়নে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেখানকার সাধারণ মানুষ ভয় পায় কথা বলতে, তারা সাহস পায় না।
তিনি আরও বলেন, তাই আমরা উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে যারা রয়েছি, তারা সাহস রেখে বলতে চাই, আমরা কোনো ভূমিদস্যুকে, কোনো সন্ত্রাসীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বানাতে পারি না। কারণ, উপজেলা পরিষদ সাধারণ জনগণ, নেতাকর্মীদের আস্থার জায়গা। আমরা একজন ভদ্র-মার্জিত লোককে চাই। ইদ্রিস ফরাজী তার কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করেছেন, তিনি মানুষের সেবায় ও কল্যাণে নিয়োজিত। তার অর্থনৈতিক লোভ নাই।
রুবেল বেপারী আরও বলেন, আমরা অনেকেই রাজনীতির নামে ব্যবসা করে নির্বাচনে প্রতিনিধি হয়েও রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করতে চাই। তাই এসব লোক থেকে আগামী নির্বাচনে দূরে থাকতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী কোনো কাজে আসবে না, ছাত্রলীগের উপরে কোনো সন্ত্রাস নাই, কোনো শক্তি নাই। আমরা সাধারণ মানুষের সেবায় বিশ্বাসী। আগামী নির্বাচনে ইদ্রিস ফরাজীকে মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করে আমরা জাজিরাকে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব।
এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারী বলেন, বক্তব্যটা ওভাবে দেইনি আমি। আমি বলেছি সন্ত্রাস করে লাভ নাই। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী করে না। ছাত্রলীগ সন্ত্রাস করলে অনেক কিছু করতে পারে। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী করলে অনেক কিছু করতে পারে। বক্তব্যটা এডিট করা। আমার কাছে সম্পূর্ণ ভিডিও রয়েছে, আপনি আমার ফেসবুক আইডিতে দেখুন। আমি নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত আছি। ফ্রি হয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।
বিষয়টি জানার জন্য মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম আমিনুল ইসলাম রতন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রুবেল বেপারী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা উসকানিমূলক। উসকানিমূলক এমন বক্তব্য দিয়ে ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকদের দাবিয়ে রাখা যাবে না। নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকরা ব্যালেটের মাধ্যমে এর জবাব দেবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেদ উজ্জামান বলেন, আমি ভিডিওর ব্যাপারে কিছু জানি না। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি প্রগতিশীল সংগঠন। ছাত্রলীগের সম্মানহানি করার অধিকার কারও নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। যদি রুবেল কোনো অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাকে সাংগঠনিকভাবে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তিনি কেন এ ধরনের কাজ করেছেন। আর বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতা বলেন, ‘রুবেল যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করেছে। ১০ বছর আগে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়েছি, ছাত্রলীগ বিতর্কিত হবে এমন কোনো কাজ করিনি। এখন সবাই ভাইরাল হওয়ার নেশায় মেতেছে। সবাই ভাইরাল নেতা হতে চায়। আর এই জন্যই ছাত্রলীগের বড় পদে থেকে দলকে বিতর্কিত করছে উল্টোপাল্টা কথা বলে।
ছাত্রলীগ নেতার এমন বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা দুপুরে বলেন, কোনো প্রার্থী বা ভোটারদের উদ্দেশে রুবেল বেপারী নামে কেউ কোনো হুমকি স্বরূপ কথা বলেছেন, এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। আর এই ধরনের বক্তব্যর বিষয়ে আমি অবহিত নই। কোনো অভিযোগ পেলে আচরণবিধি প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।