Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাতকে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সুনামগঞ্জের ছাতকে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর এ সুযোগে রেল বিভাগের মূল্যবান মালামাল ও যন্ত্রপাতি লুটপাট ও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। আর এ কাজে চোরাইচক্রকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে রেলের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

শনিবার (২৫ মার্চ) রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশ লামাকাজি এলাকা থেকে ছাতক রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামালসহ রজত দাস নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত রজত দাস ছাতকের দক্ষিণ বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।

জানা যায়, করোনা মহামারির সময় থেকে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে ভয়াবহ বন্যায় এ রেলপথ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ছাতক-সিলেট রেলপথ আপাতত বন্ধ রয়েছে। এতে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পদ। আর এ সুযোগেই ছাতকে শুরু হয়েছে রেলের সরকারি সম্পদ লুটপাট। ছাতক থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ৪টি রেলওয়ে স্টেশন, ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ের পাথর কোয়ারি, কংক্রিট স্লীপার প্ল্যান্ট, রেলওয়ের কয়েকটি গুদাম, বিভিন্ন দপ্তর, হাসপাতাল, রেস্ট হাউস এবং বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাসহ কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

কাগজে-কলমে এসব অরক্ষিত স্থাপনা ও সম্পদ পরিত্যক্ত দেখানো হলেও ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে রেলওয়ের একটি সিন্ডিকেট। আর সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বহিরাগতদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি চোর চক্র। তারা সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় প্রতিনিয়ত রেল বিভাগের মালামাল চুরি ও বিক্রি করছে। সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ স্থাপনা মেরামতের নামে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। মেরামত না করেই বরাদ্দের সেসব টাকা আত্মসাৎ করেছে এই চক্র।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লাইনের স্লিপার, নাটবল্টু, গাড়ির চাকা ও কাঠ চুরি ব্যাপক হারে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ছাতকে রেলওয়ে হাসপাতালের দরজা-জানালা,সামনের গেটসহ ভেতরের সব মালামাল চুরি হয়ে গেছে। তালাবদ্ধ থাকা এই হাসপাতাল এখন আর আগের অবস্থায় নেই। শুধু দেয়াল আর ছাদ রয়েছে।

জানা গেছে, এদিকে ছাতকে রেলওয়ের সম্পদ পাহারায় (রক্ষায়) যেসব টিএলআর নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা শুধু কাগজে কলমে। ১২ থেকে ১৫ জন টিএলআরের নামে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা (প্রতিজনের) বেতন উত্তোলন করে ছাতক ও সিলেটের কর্মকর্তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে খাচ্ছেন। আদৌ ছাতক-ভোলাগঞ্জে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন টিএলআর (পাহারাদার) কাজ করতে দেখা যায়নি। কিছু লোকের নাম ভোটার আইডি ব্যবহার করে ভুঁয়া কাগজ পত্র দিয়ে মাসের পর মাস বেতন তুলে খাচ্ছেন তারা। বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি দেখিয়ে সম্প্রতি কয়েক লক্ষ টাকার মেরামত কাজের নামেও টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ছাতক রেলওয়েতে যারা কর্মরত আছেন তাদের কোনো কাজ না থাকলেও বেতন-ভাতা এমনকি ভ্রমণ ভাতা নিচ্ছেন। রেলওয়ের মালামাল চুরির সঙ্গে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। তারাই চোরদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে এসব করছে। ছাতকে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

সিলেট জালালাবাদ থানার এস আই রেজাউল করিম জানান,রেলগাড়ির চাকা, লোহা, ইত্যাদি চোরাই মাল পিকআপভ্যানে করে নিয়ে পালানোর সময় রজত দাসকে আটক করা হয়েছে। আটক রজত দাস ছাতকের দক্ষিণ বাগবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ছাতক রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল নুর বলেন, তিনি বর্তমানে সিলেটে বদলি হয়েছেন। ছাতকের দায়িত্ব এখনো তার কাছ থেকে কেউ গ্রহণ করেনি। রেলওয়ের মালামাল চুরির ব্যাপারে তিনি বলেন- সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। তবে পাথরসহ মালামাল এলোমেলো অবস্থায় আছে।

ছাতক রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী জুবায়ের আহমদ বলেন, রেলওয়ের অনেক মালামাল এখান থেকে হারিয়ে গেছে । এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব অনিয়ম ও চুরির সঙ্গে জড়িত নই।

আবহাওয়া

ডিসেম্বরে বিয়ে করছেন মধুমিতা

ছাতকে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সুনামগঞ্জের ছাতকে রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর এ সুযোগে রেল বিভাগের মূল্যবান মালামাল ও যন্ত্রপাতি লুটপাট ও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। আর এ কাজে চোরাইচক্রকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে রেলের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

শনিবার (২৫ মার্চ) রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশ লামাকাজি এলাকা থেকে ছাতক রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামালসহ রজত দাস নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত রজত দাস ছাতকের দক্ষিণ বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।

জানা যায়, করোনা মহামারির সময় থেকে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে ভয়াবহ বন্যায় এ রেলপথ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ছাতক-সিলেট রেলপথ আপাতত বন্ধ রয়েছে। এতে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি সম্পদ। আর এ সুযোগেই ছাতকে শুরু হয়েছে রেলের সরকারি সম্পদ লুটপাট। ছাতক থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ৪টি রেলওয়ে স্টেশন, ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ের পাথর কোয়ারি, কংক্রিট স্লীপার প্ল্যান্ট, রেলওয়ের কয়েকটি গুদাম, বিভিন্ন দপ্তর, হাসপাতাল, রেস্ট হাউস এবং বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাসহ কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

কাগজে-কলমে এসব অরক্ষিত স্থাপনা ও সম্পদ পরিত্যক্ত দেখানো হলেও ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে রেলওয়ের একটি সিন্ডিকেট। আর সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বহিরাগতদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি চোর চক্র। তারা সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় প্রতিনিয়ত রেল বিভাগের মালামাল চুরি ও বিক্রি করছে। সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ স্থাপনা মেরামতের নামে টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। মেরামত না করেই বরাদ্দের সেসব টাকা আত্মসাৎ করেছে এই চক্র।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লাইনের স্লিপার, নাটবল্টু, গাড়ির চাকা ও কাঠ চুরি ব্যাপক হারে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ছাতকে রেলওয়ে হাসপাতালের দরজা-জানালা,সামনের গেটসহ ভেতরের সব মালামাল চুরি হয়ে গেছে। তালাবদ্ধ থাকা এই হাসপাতাল এখন আর আগের অবস্থায় নেই। শুধু দেয়াল আর ছাদ রয়েছে।

জানা গেছে, এদিকে ছাতকে রেলওয়ের সম্পদ পাহারায় (রক্ষায়) যেসব টিএলআর নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা শুধু কাগজে কলমে। ১২ থেকে ১৫ জন টিএলআরের নামে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা (প্রতিজনের) বেতন উত্তোলন করে ছাতক ও সিলেটের কর্মকর্তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে খাচ্ছেন। আদৌ ছাতক-ভোলাগঞ্জে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন টিএলআর (পাহারাদার) কাজ করতে দেখা যায়নি। কিছু লোকের নাম ভোটার আইডি ব্যবহার করে ভুঁয়া কাগজ পত্র দিয়ে মাসের পর মাস বেতন তুলে খাচ্ছেন তারা। বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি দেখিয়ে সম্প্রতি কয়েক লক্ষ টাকার মেরামত কাজের নামেও টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ছাতক রেলওয়েতে যারা কর্মরত আছেন তাদের কোনো কাজ না থাকলেও বেতন-ভাতা এমনকি ভ্রমণ ভাতা নিচ্ছেন। রেলওয়ের মালামাল চুরির সঙ্গে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। তারাই চোরদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে এসব করছে। ছাতকে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

সিলেট জালালাবাদ থানার এস আই রেজাউল করিম জানান,রেলগাড়ির চাকা, লোহা, ইত্যাদি চোরাই মাল পিকআপভ্যানে করে নিয়ে পালানোর সময় রজত দাসকে আটক করা হয়েছে। আটক রজত দাস ছাতকের দক্ষিণ বাগবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ছাতক রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল নুর বলেন, তিনি বর্তমানে সিলেটে বদলি হয়েছেন। ছাতকের দায়িত্ব এখনো তার কাছ থেকে কেউ গ্রহণ করেনি। রেলওয়ের মালামাল চুরির ব্যাপারে তিনি বলেন- সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। তবে পাথরসহ মালামাল এলোমেলো অবস্থায় আছে।

ছাতক রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী জুবায়ের আহমদ বলেন, রেলওয়ের অনেক মালামাল এখান থেকে হারিয়ে গেছে । এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব অনিয়ম ও চুরির সঙ্গে জড়িত নই।