নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান অবসরে যাচ্ছেন। আগামী ২৯ আগস্ট তিনি অবসরে যাবেন।
বুধবার (৩১ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (শুল্ক-১ শাখা) থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মকিমা বেগম প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মো. মতিউর রহমানের (কমিশনার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত) চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৪৪(১) ও ধারা ৫১ অনুযায়ী আগামী ২৯ আগস্ট সরকারি চাকরি হতে অবসরজনিত আর্থিক সুবিধা (অবসর-উত্তর ছুটি, লাম্পগ্র্যান্ট এবং পেনশন) ব্যতীত অবসর (ঐচ্ছিক) প্রদান করা হলো।
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর ও তার পরিবারের ক্রোক করা সম্পদ দেখে চোখ কপালে উঠবে যে কারো। এমনকি মতিউরের স্বজনদেরও যেনো পোয়াবারো। দুদকের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শতাংশ জমি, বহুতল ভবন, ৬টি ফ্ল্যাট, ১১৬টি ব্যাংক হিসাব এবং ২৩টি বিও হিসাব ক্রোক হয়েছে। তাদের আরও সম্পদের খোঁজ চলছে।
মতিউর রহমানকে প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি দুদক সূত্রে এমন তথ্য জানা যায়।
গত ৩০ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ক্রয় করা কোনো জমি আছে কি না, সেটি জানতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দেয় দুদক।
জানা যায়, মতিউরের বিরুদ্ধে এর আগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক। কিন্তু প্রতিবারই নানা কৌশলে নানা প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মুছে ক্লিন শিট পেয়েছিলেন তিনি।
মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম দুদকে অভিযোগ আসে ২০০৪ সালে। সে সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের। অভিযোগ আছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।
২০০৮ সালে আবারও দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ, বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই প্রভাবশালীদের চাপে তা চাপা পড়ে যায়, ক্লিন শিট পান মতিউর। এরপর ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরও দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগ ছিল অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির। কিন্তু কৌশলী মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল। ফলে আবারও ক্লিন শিট।
তবে পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে দুদক আগের চারবারের প্রতিটি বিষয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে। একইসঙ্গে যে বা যাদের মাধ্যমে বারবার দায়মুক্তি পেয়েছে মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানায় দুদক।
ঈদুল আজহার আগে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর প্রেক্ষিতেই এনবিআরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।