Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চার বছরেও নির্মাণ করা হয়নি সেতু সংযোগ সড়ক

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বারইয়া নদের ওপর সেতু নির্মাণের চার বছর পরও দুইদিকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এ অবস্থায় দুইপাড়ের ১৫ গ্রামের মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে সেতুতে ওঠার জন্য বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মই তৈরি করে কোনোরকমে যাতায়াত করছেন।

আর দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিল সূর্য নদীর উপর ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন সেতুটি স্থানীয়দের কাজে আসছে না। বর্তমানে বাঁশের মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার করছে প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

এদিকে উল্লাপাড়া-কালিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে নির্মিত সেতুটির সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হবে কি-না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বাড়ইয়া, ঝিকিরা, কালিগঞ্জসহ এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের। ফলে পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মাণাধীন সেতুটির দুই পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মইয়ের মতো তৈরি করে পথচারীরা পারাপার হচ্ছেন। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে কোনো পরিবহন যাতায়াতের সুযোগ নেই।

উপজেলার কালিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের বারইয়া গ্রামের নদের ওপর এ সেতুটি অবস্থিত। এটি মূলত বারইয়া, ঝিকিরা ও কালিগঞ্জসহ অন্তত ১৫ গ্রামের মানুষের উপজেলায় যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সেতুটি মূল সড়ক থেকে প্রায় ছয় ফুট উঁচু। তাই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সেতুর দুই দিকে মই তৈরি করেছে স্থানীয় লোকজন। এতে যানবাহন চলাচল করতে না পারলেও পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি ২০১৯ সালে নির্মাণ করা হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন শতশত মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সেতুর নির্মাণকাজ চার বছর আগে শেষ হলেও দুইপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় ১৫ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে উল্লাপাড়া-কালিগঞ্জ অঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক বাড়ইয়া খেয়াঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী। অবশেষে সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের ৪ বছর পার হলেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক তৈরি না হওয়ায় সেতু পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। বর্তমানে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। ফলে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর দুই পাশের মই বেয়ে পার হতে হচ্ছে তাদের। অবিলম্বে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মানের দাবি করছেন স্থানীয়রা।

কালিগঞ্জ গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। চার বছর আগে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তি কমেনি। এটা নিয়ে কতবার দেনদরবার করা হলো উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে। কিন্তু কাজ আর হচ্ছে না। শুধু বলা হয় এই হচ্ছে, এই হচ্ছে।

স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, আগে খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হতাম। তাও এত কষ্ট হতো না। সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সেতুটি করে দিলেও উঠতে হয় মই দিয়ে। এ সেতু কোনো কাজেই আসছে না। সেতুতে সাইকেল নিয়েও ওঠা যায় না। আমরা চাই দ্রুত এই সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করা হোক।

কৃষক আবুল হোসেন বলেন, বাজারে ধান নিয়ে যাওয়া যায় না। আগে ঘাটে নৌকা থাকতো। এখন সেতু হয়েছে তাই আর নৌকাও পাওয়া যায় না। শুধু শুনি ঠিক করে দেবে, তা তো দেয় না।

উল্লাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদ বলেন, উল্লাপাড়া-কালিগঞ্জ সড়কের বাড়ইয়া গ্রামের সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন সংযোগ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে যথাসময়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় আবেদন করা হয়েছে। সেখান থেকে ভূমি জরিপের কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই ভূমির অধিগ্রহণ মূল্য এখনও নির্ধারণ সম্পন্ন হয়নি। তাই সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। ভুমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, একটা ব্রিজ নির্মাণে বহুবিদ কাজ জড়িত থাকে। ইতোমধ্যেই ব্রিজটি পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় ভূমি মালিকদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আশা করছি দ্রুত অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করে সেতু দিয়ে জন ও যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা জানান, বর্তমানে প্রশিক্ষণে আছি। সেতুটির বিষয়ে আমি ভালোভাবে অবহিত নন। প্রশিক্ষণ শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চার বছরেও নির্মাণ করা হয়নি সেতু সংযোগ সড়ক

প্রকাশের সময় : ০১:৫২:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বারইয়া নদের ওপর সেতু নির্মাণের চার বছর পরও দুইদিকে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এ অবস্থায় দুইপাড়ের ১৫ গ্রামের মানুষ চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে সেতুতে ওঠার জন্য বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মই তৈরি করে কোনোরকমে যাতায়াত করছেন।

আর দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিল সূর্য নদীর উপর ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন সেতুটি স্থানীয়দের কাজে আসছে না। বর্তমানে বাঁশের মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার করছে প্রায় ১০ থেকে ১২টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।

এদিকে উল্লাপাড়া-কালিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে নির্মিত সেতুটির সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হবে কি-না এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বাড়ইয়া, ঝিকিরা, কালিগঞ্জসহ এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের। ফলে পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মাণাধীন সেতুটির দুই পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মইয়ের মতো তৈরি করে পথচারীরা পারাপার হচ্ছেন। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে কোনো পরিবহন যাতায়াতের সুযোগ নেই।

উপজেলার কালিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের বারইয়া গ্রামের নদের ওপর এ সেতুটি অবস্থিত। এটি মূলত বারইয়া, ঝিকিরা ও কালিগঞ্জসহ অন্তত ১৫ গ্রামের মানুষের উপজেলায় যাতায়াতের জন্য নির্মাণ করা হয়।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, সেতুটি মূল সড়ক থেকে প্রায় ছয় ফুট উঁচু। তাই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সেতুর দুই দিকে মই তৈরি করেছে স্থানীয় লোকজন। এতে যানবাহন চলাচল করতে না পারলেও পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি ২০১৯ সালে নির্মাণ করা হয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন শতশত মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সেতুর নির্মাণকাজ চার বছর আগে শেষ হলেও দুইপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় ১৫ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পর থেকে উল্লাপাড়া-কালিগঞ্জ অঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক বাড়ইয়া খেয়াঘাট এলাকায় সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী। অবশেষে সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের ৪ বছর পার হলেও দুই পাশের সংযোগ সড়ক তৈরি না হওয়ায় সেতু পারাপারে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। বর্তমানে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না। ফলে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর দুই পাশের মই বেয়ে পার হতে হচ্ছে তাদের। অবিলম্বে সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মানের দাবি করছেন স্থানীয়রা।

কালিগঞ্জ গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মাণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। চার বছর আগে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তি কমেনি। এটা নিয়ে কতবার দেনদরবার করা হলো উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে। কিন্তু কাজ আর হচ্ছে না। শুধু বলা হয় এই হচ্ছে, এই হচ্ছে।

স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, আগে খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হতাম। তাও এত কষ্ট হতো না। সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সেতুটি করে দিলেও উঠতে হয় মই দিয়ে। এ সেতু কোনো কাজেই আসছে না। সেতুতে সাইকেল নিয়েও ওঠা যায় না। আমরা চাই দ্রুত এই সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করা হোক।

কৃষক আবুল হোসেন বলেন, বাজারে ধান নিয়ে যাওয়া যায় না। আগে ঘাটে নৌকা থাকতো। এখন সেতু হয়েছে তাই আর নৌকাও পাওয়া যায় না। শুধু শুনি ঠিক করে দেবে, তা তো দেয় না।

উল্লাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সায়েদ বলেন, উল্লাপাড়া-কালিগঞ্জ সড়কের বাড়ইয়া গ্রামের সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন সংযোগ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে যথাসময়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় আবেদন করা হয়েছে। সেখান থেকে ভূমি জরিপের কাজও শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই ভূমির অধিগ্রহণ মূল্য এখনও নির্ধারণ সম্পন্ন হয়নি। তাই সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। ভুমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই সেতুর বাকি কাজ শেষ করা হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, একটা ব্রিজ নির্মাণে বহুবিদ কাজ জড়িত থাকে। ইতোমধ্যেই ব্রিজটি পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় ভূমি মালিকদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আশা করছি দ্রুত অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করে সেতু দিয়ে জন ও যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা জানান, বর্তমানে প্রশিক্ষণে আছি। সেতুটির বিষয়ে আমি ভালোভাবে অবহিত নন। প্রশিক্ষণ শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।