Dhaka বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিসির চিঠি

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে বহু বছর ধরে মাত্র দুটি ট্রেন যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে চলাচলকারী আন্তনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও এখন চলাচলের অযোগ্য। পুরাতন ট্রেন দুটি দিয়ে যাত্রীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। যে কারণে এই রুটের যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে আরেকটি আন্তনগর ট্রেন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে একটি আন্তনগর ট্রেন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।’

চট্টগ্রামে ব্যবসা করেন সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের সোবহানপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই রুটে দুটি ট্রেনের অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘ বছর এসব ট্রেনের উন্নয়ন না হওয়ার কারণে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রেল ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ার কারণে সব সময় যাত্রী বেশি থাকে।’

শাহরাস্তি উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মো. তাজুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘এই রুটে চলাচলকারী দুটি ট্রেনেই যাত্রীসেবার কোনও মান বা পরিবেশ নেই। এখনও যাতায়াতের অযোগ্য মেয়াদোত্তীর্ণ ব্রিটিশ আমলের কোচ দিয়ে এই ট্রেন দুটো পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় যাত্রী ছাড়াও বরিশাল এবং শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সময় বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে এই রুটে ভ্রমণ করছেন।’

ভ্রমণ করার জন্য প্রায় সময় এই রুটে যাতায়াত করেন আইনজীবী চৌধুরী ইয়াছিন ইকরাম। তিনি বলেন, ‘এই রুটে সাগরিকা এক্সপ্রেস লোকাল। আর মেঘনা এক্সপ্রেসে বহুসংখ্যক হকার ওঠে। তাদের কারণে যাত্রীরা হয়রানি এবং বিড়ম্বনার শিকার হন। নতুন করে একটি আন্তনগর ট্রেন দেওয়া হলে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধা কয়েক গুণ বাড়বে।’

শহরের ব্যবসায়ী অহিদুর রহমান খান উৎপল বলেন, ‘এই রুটে দুটি ট্রেনের পর তৃতীয় ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি। এই অঞ্চলের অনেক লোক কক্সবাজার ভ্রমণ করতে যান। ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচির সঙ্গে মিল রেখে নতুন ট্রেনের সময় নির্ধারণ করলে ভ্রমণে নতুনমাত্রা যোগ হবে। এ ছাড়া মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন চাঁদপুর থেকে যাত্রার সময় ভোরে হওয়ার কারণে গ্রামের অনেক যাত্রী যেতে পারে না। এসব বিষয় আলোচনা করে ঠিক করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন আল-আজাদ বলেন, ‘এই রুটে অনেক যাত্রী। বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। নতুন করে আন্তনগর এবং এসি ট্রেন খুবই প্রয়োজন। আর সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রেন দেওয়া খুবই জরুরি।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে অনেক যাত্রী ব্যক্তিগত কাজ ছাড়াও দাফতরিক কাজে যাতায়াত করেন। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। নৌ-রুটেও চলাচলের ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেসও এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ট্রেন দুটির বেশিরভাগ ওয়াশরুম, লাইট, ফ্যান ও চেয়ারের অবস্থা জরাজীর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে এই রুটের যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন। কর্মসংস্থানের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এই রুটে চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন। তুলনামূলক স্বল্প ভাড়া ও যাতায়াত সুবিধার জন্য এই রুটে যাত্রীসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণাঞ্চলসহ যাত্রীদের সুবিধার্থে রেললাইন সংস্কারসহ একটি আন্তনগর ট্রেন প্রদানের ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি। যে কারণে আমি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দিয়েছি।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিসির চিঠি

প্রকাশের সময় : ০২:২৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে বহু বছর ধরে মাত্র দুটি ট্রেন যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে চলাচলকারী আন্তনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও এখন চলাচলের অযোগ্য। পুরাতন ট্রেন দুটি দিয়ে যাত্রীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। যে কারণে এই রুটের যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে আরেকটি আন্তনগর ট্রেন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘গত ১৮ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে একটি আন্তনগর ট্রেন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।’

চট্টগ্রামে ব্যবসা করেন সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের সোবহানপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই রুটে দুটি ট্রেনের অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘ বছর এসব ট্রেনের উন্নয়ন না হওয়ার কারণে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রেল ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ার কারণে সব সময় যাত্রী বেশি থাকে।’

শাহরাস্তি উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মো. তাজুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘এই রুটে চলাচলকারী দুটি ট্রেনেই যাত্রীসেবার কোনও মান বা পরিবেশ নেই। এখনও যাতায়াতের অযোগ্য মেয়াদোত্তীর্ণ ব্রিটিশ আমলের কোচ দিয়ে এই ট্রেন দুটো পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় যাত্রী ছাড়াও বরিশাল এবং শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সময় বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে এই রুটে ভ্রমণ করছেন।’

ভ্রমণ করার জন্য প্রায় সময় এই রুটে যাতায়াত করেন আইনজীবী চৌধুরী ইয়াছিন ইকরাম। তিনি বলেন, ‘এই রুটে সাগরিকা এক্সপ্রেস লোকাল। আর মেঘনা এক্সপ্রেসে বহুসংখ্যক হকার ওঠে। তাদের কারণে যাত্রীরা হয়রানি এবং বিড়ম্বনার শিকার হন। নতুন করে একটি আন্তনগর ট্রেন দেওয়া হলে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধা কয়েক গুণ বাড়বে।’

শহরের ব্যবসায়ী অহিদুর রহমান খান উৎপল বলেন, ‘এই রুটে দুটি ট্রেনের পর তৃতীয় ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি। এই অঞ্চলের অনেক লোক কক্সবাজার ভ্রমণ করতে যান। ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচির সঙ্গে মিল রেখে নতুন ট্রেনের সময় নির্ধারণ করলে ভ্রমণে নতুনমাত্রা যোগ হবে। এ ছাড়া মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন চাঁদপুর থেকে যাত্রার সময় ভোরে হওয়ার কারণে গ্রামের অনেক যাত্রী যেতে পারে না। এসব বিষয় আলোচনা করে ঠিক করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।’

হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন আল-আজাদ বলেন, ‘এই রুটে অনেক যাত্রী। বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। নতুন করে আন্তনগর এবং এসি ট্রেন খুবই প্রয়োজন। আর সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রেন দেওয়া খুবই জরুরি।’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে অনেক যাত্রী ব্যক্তিগত কাজ ছাড়াও দাফতরিক কাজে যাতায়াত করেন। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। নৌ-রুটেও চলাচলের ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেসও এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ট্রেন দুটির বেশিরভাগ ওয়াশরুম, লাইট, ফ্যান ও চেয়ারের অবস্থা জরাজীর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে এই রুটের যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন। কর্মসংস্থানের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এই রুটে চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন। তুলনামূলক স্বল্প ভাড়া ও যাতায়াত সুবিধার জন্য এই রুটে যাত্রীসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণাঞ্চলসহ যাত্রীদের সুবিধার্থে রেললাইন সংস্কারসহ একটি আন্তনগর ট্রেন প্রদানের ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি। যে কারণে আমি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দিয়েছি।’