Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চরফ্যাশনে সংস্কারের অভাবে রাস্তার বেহাল দশা

চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধি : 

নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়নের একমাত্র ইটের রাস্তাটি ভেঙে যায়। এক মাসেরও বেশি সময় হলো এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় স্থানীয়রা মোটরসাইকেল নিয়ে ঠিকঠাকমতো চলতে পারছে না। এতে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তির শিকার। রাস্তার বেহাল দশায় এখন পায়ে হেঁটে চলতে হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ২৯ মে নিম্নচাপে মেঘনার জোয়ারের পানি ঢালচরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। তীব্র স্রোতে ঢালচর ইউনিয়নের মাঝের চরখাল এলাকার কাঠের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে চর তারুয়ার সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত রাস্তার প্রায় ২ কিলোমিটার ভেঙে যায়। রাস্তার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত হয়েছে। ফলে একমাত্র রাস্তার এ অবস্থায় স্থানীয়রা এটির দ্রুত মেরামতের আকুতি জানিয়েছে।

ঢালচর ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ ফরাজী, ইসমাইল মিয়া জানান, ঢালচর ইউনিয়নের পাকা রাস্তা বলতে ইটের এই রাস্তাটি। তাও আবার নিম্নচাপের দুর্যোগে রাস্তার দুই কিলোমিটার ভেঙে গেছে। আমরা যদি মাঝেরচর বাজার থেকে তারুয়া যাই, তাহলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এতে ভোগান্তি অনেক।

চর তারুয়া সমুদ্রসৈকত এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর ইসলাম, কয়ছর মিয়া জানান, তারুয়া এলাকায় কোনো বাজার নেই। আমাদের বাজার করতে যেতে হয় মাঝেরচর অথবা আনন্দ বাজারে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ার আগে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত বাজার করে ফেরা যেত। এখন সম্ভব নয়।

তারা আরও বলেন, দিনের বেলায় কষ্টে পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব হলেও রাতে ভয়ে ভয়ে যেতে হয়। ঢালচরে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তায় বাতি জ্বলবে কীভাবে?

তারুয়া এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম, মিতু আক্তার ও জান্নাত বেগম বলেন, পুরুষরা তো পায়ে হেঁটে চলতে পারে। কিন্তু নারীরা পায়ে হেঁটে চলতে গেলে তো কষ্ট হয়। ঢালচরের নারীদের যে কী দুর্ভোগ তা কেউ বুঝতে পারবে না। একটা মাত্র ইটের রাস্তা তাও ভেঙে গেছে। কিন্তু তা মেরামতের কোনো প্রচেষ্টা দেখছি না। আমরা বহুভাবে বঞ্চিত। ভেঙে যাওয়া রাস্তা দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

তারা আরও বলেন, আমাদের বাচ্চারা স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়ে। রাস্তা ভাঙার ফলে বাচ্চাদের পায়ে হেঁটে যেতে হয়।

ঢালচর ইউনিয়নের মোটরসাইকেল চালক আলাউদ্দিন ও সবুজ মিয়া বলেন, তারা ঢালচরে মোটরসাইকেল আরোহী বহন করে সংসার চালান। আগে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আনন্দবাজার থেকে তারুয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বার আরোহী আনা-নেওয়া করতেন। শত শত যাত্রী নিয়ে যেতেন। কিন্তু রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মোটরসাইকেল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে আনন্দবাজার থেকে মাঝের চর ব্রিজ পর্যন্ত চলা যায়। ফলে আয় কমে গেছে অনেক।

মাঝেরচর বাজারের মোটরসাইকেল চালক সোহেল ও সুজন বলেন, এই রাস্তাটি ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরেও মেরামত করা হয়নি। অনেক কষ্টে মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রী পারাপার করতাম। অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে। তারপরও যাতায়াত করা গেছে। কিন্তু ২৯ মের নিম্নচাপে স্রোতে রাস্তা প্রায় দুই কিলোমিটার ভেঙে গেছে। বহু জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়েছে।

এ ছাড়াও রাস্তা থেকে ইট সরে পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। এখন মোটাসাইকেল নিয়ে মাঝেরচর বাজারের পরে তারুয়া যাওয়া না।

তারা আরও বলেন, রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষ, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ ভোগান্তির শিকার। আগের মতো আয়ও হয় না। অনেক কষ্টে সংসার চলে। যদিও কজন মোটরসাইকেল চালক ঝুঁকিরে মধ্যেও অনুরোধে আরোহী নিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে।

চরফ্যাশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিএম ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের দিকে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ইটের রাস্তা করা হয়। রাস্তাটি ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছুদিন আগে নিম্নচাপে জোয়ারের স্রোতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এটি মেরামত করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। বরাদ্দ এলে রাস্তা মেরামত করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

শেখ হাসিনার পতন আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে : কাদের সিদ্দিকী

চরফ্যাশনে সংস্কারের অভাবে রাস্তার বেহাল দশা

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধি : 

নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়নের একমাত্র ইটের রাস্তাটি ভেঙে যায়। এক মাসেরও বেশি সময় হলো এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তায় স্থানীয়রা মোটরসাইকেল নিয়ে ঠিকঠাকমতো চলতে পারছে না। এতে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তির শিকার। রাস্তার বেহাল দশায় এখন পায়ে হেঁটে চলতে হচ্ছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, ২৯ মে নিম্নচাপে মেঘনার জোয়ারের পানি ঢালচরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। তীব্র স্রোতে ঢালচর ইউনিয়নের মাঝের চরখাল এলাকার কাঠের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে চর তারুয়ার সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত রাস্তার প্রায় ২ কিলোমিটার ভেঙে যায়। রাস্তার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত হয়েছে। ফলে একমাত্র রাস্তার এ অবস্থায় স্থানীয়রা এটির দ্রুত মেরামতের আকুতি জানিয়েছে।

ঢালচর ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ ফরাজী, ইসমাইল মিয়া জানান, ঢালচর ইউনিয়নের পাকা রাস্তা বলতে ইটের এই রাস্তাটি। তাও আবার নিম্নচাপের দুর্যোগে রাস্তার দুই কিলোমিটার ভেঙে গেছে। আমরা যদি মাঝেরচর বাজার থেকে তারুয়া যাই, তাহলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এতে ভোগান্তি অনেক।

চর তারুয়া সমুদ্রসৈকত এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর ইসলাম, কয়ছর মিয়া জানান, তারুয়া এলাকায় কোনো বাজার নেই। আমাদের বাজার করতে যেতে হয় মাঝেরচর অথবা আনন্দ বাজারে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ার আগে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত বাজার করে ফেরা যেত। এখন সম্ভব নয়।

তারা আরও বলেন, দিনের বেলায় কষ্টে পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব হলেও রাতে ভয়ে ভয়ে যেতে হয়। ঢালচরে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তায় বাতি জ্বলবে কীভাবে?

তারুয়া এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম, মিতু আক্তার ও জান্নাত বেগম বলেন, পুরুষরা তো পায়ে হেঁটে চলতে পারে। কিন্তু নারীরা পায়ে হেঁটে চলতে গেলে তো কষ্ট হয়। ঢালচরের নারীদের যে কী দুর্ভোগ তা কেউ বুঝতে পারবে না। একটা মাত্র ইটের রাস্তা তাও ভেঙে গেছে। কিন্তু তা মেরামতের কোনো প্রচেষ্টা দেখছি না। আমরা বহুভাবে বঞ্চিত। ভেঙে যাওয়া রাস্তা দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

তারা আরও বলেন, আমাদের বাচ্চারা স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়ে। রাস্তা ভাঙার ফলে বাচ্চাদের পায়ে হেঁটে যেতে হয়।

ঢালচর ইউনিয়নের মোটরসাইকেল চালক আলাউদ্দিন ও সবুজ মিয়া বলেন, তারা ঢালচরে মোটরসাইকেল আরোহী বহন করে সংসার চালান। আগে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আনন্দবাজার থেকে তারুয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বার আরোহী আনা-নেওয়া করতেন। শত শত যাত্রী নিয়ে যেতেন। কিন্তু রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মোটরসাইকেল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে আনন্দবাজার থেকে মাঝের চর ব্রিজ পর্যন্ত চলা যায়। ফলে আয় কমে গেছে অনেক।

মাঝেরচর বাজারের মোটরসাইকেল চালক সোহেল ও সুজন বলেন, এই রাস্তাটি ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরেও মেরামত করা হয়নি। অনেক কষ্টে মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রী পারাপার করতাম। অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে। তারপরও যাতায়াত করা গেছে। কিন্তু ২৯ মের নিম্নচাপে স্রোতে রাস্তা প্রায় দুই কিলোমিটার ভেঙে গেছে। বহু জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়েছে।

এ ছাড়াও রাস্তা থেকে ইট সরে পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। এখন মোটাসাইকেল নিয়ে মাঝেরচর বাজারের পরে তারুয়া যাওয়া না।

তারা আরও বলেন, রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষ, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ ভোগান্তির শিকার। আগের মতো আয়ও হয় না। অনেক কষ্টে সংসার চলে। যদিও কজন মোটরসাইকেল চালক ঝুঁকিরে মধ্যেও অনুরোধে আরোহী নিয়ে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছে।

চরফ্যাশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিএম ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের দিকে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি ইটের রাস্তা করা হয়। রাস্তাটি ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছুদিন আগে নিম্নচাপে জোয়ারের স্রোতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এটি মেরামত করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। বরাদ্দ এলে রাস্তা মেরামত করা হবে।