Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা

  • প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩
  • ১৮৮ জন দেখেছেন

 

চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত পিসি রোড সংস্কারের পর গত নভেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শেষ করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেগেছিল পাঁচ বছর। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। কাজ শেষ হওয়ার পর চার মাস আগে সড়কটির উদ্বোধন করা হয়। এতে মানুষ যখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন, তখন খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বর্ষা মৌসুমের আগমুহূর্তে এমন কাটাকাটির কারণে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত স্থানীয় বাসিন্দারা।

ওয়াসা বলছে, বাসা বাড়িতে পানির সংযোগ দিতে পাইপ বসাতে এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরের দুটি সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পিসি রোড দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়। নগরের একাংশের লোকজনের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। ২০১৬ সালে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে। সংস্কারের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ব্যয় ধরা হয় ১৭০ কোটি টাকা। চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় সংস্কার কাজ। এর মধ্যে দুইটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাঝপথে কাজ ফেলে চলে যায়। এতে বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরের বাসিন্দাদের।

পরে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে চসিক। যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ১০ কোটি টাকা গচ্চা যায় চসিকের। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১৮০ কোটি টাকা। গত ৯ নভেম্বর সড়কটির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

ওয়াসা সূত্র জানায়, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য পাইপ বসাতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। পিসি রোডের পাশে প্রায় ১০০ বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার কাছ চলছে।

আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের জুনে।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর ধরে সড়কটিতে নরক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে। সংস্কার কাজ চলার সময় ওয়াসা পাইপলাইন বসাতে পারত। এখন সামনে বর্ষা। এখন সড়ক কাটাকাটি শুরু হয়েছে। হালিশহর আবাসিকের বাসিন্দা সলিম উল্লাহ নামে এক শিক্ষক সমকালকে বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন আতঙ্কের নাম। নতুন সড়ক কাটাকাটি করে দুর্ভোগ তৈরি করাই যেন প্রতিষ্ঠানটির কাজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের মাঝখানে মেশিন দিয়ে গর্ত করার কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। মেশিন দিয়ে সড়কের পিচ (কার্পেটিং) টুকরা টুকরা করে তুলে আনা হচ্ছিল। বাসাবাড়িতে সংযোগ দেওয়ার জন্য সড়কের মাঝবরাবর থেকে ফুটপাত পর্যন্ত লম্বালম্বি করে কাটা হচ্ছিল। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর গর্তগুলো করা হচ্ছে। এভাবে সড়কটিতে প্রায় ১০০টি গর্ত করা হবে।

নতুন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাকসুদ বলেন, বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার জন্য সড়ক কাটতে হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা আগেই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন এখন অনুমতি দিয়েছে। তাই এ সময়ে এসে কাজ শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই। আর সড়কের কাটাকাটি করার জন্য সিটি করপোরেশনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মাকসুদ আলম দাবি করেছেন, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চললেও তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। মেশিন দিয়ে সড়কের একটি নির্দিষ্ট অংশ তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাইপ বসানোর পর তুলে আনা অংশ পুনরায় আগের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর এমনভাবে সংস্কার করে দেওয়া হবে, যাতে কাটাকাটি হয়েছে, তা বোঝা না যায়।

ওয়াসার এমন খোঁড়াখুঁড়িতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজ আলী বলেন, কত সুন্দর একটা রাস্তা। কাজ শেষ হয়েছে বেশি দিনও হয়নি। সংস্কারকাজ চলার সময় অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এখন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। কিন্তু ওয়াসার তা যেন সহ্য হচ্ছে না। তাই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দিল। আবার দুর্ভোগ শুরু হবে।

নেওয়াজ উদ্দিন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ওয়াসা খোঁড়াখুঁড়ির আর সময় পেল না। কিছুদিন পর বর্ষা শুরু হবে। এর আগেই সড়কে কাটাকাটি শুরু হলো। গর্ত করা হলেও পরে তা আর ঠিকভাবে সংস্কার করা হয়নি।

কাজ শেষ হওয়ার বছর পার না হতেই খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতির প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির সংযোগের জন্য অনুমোদন দিতে হয়। তবে ওয়াসা থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ হলে তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।
জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

চট্টগ্রাম ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা

প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

 

চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত পিসি রোড সংস্কারের পর গত নভেম্বরে উদ্বোধন করা হয়। ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শেষ করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেগেছিল পাঁচ বছর। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। কাজ শেষ হওয়ার পর চার মাস আগে সড়কটির উদ্বোধন করা হয়। এতে মানুষ যখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন, তখন খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বর্ষা মৌসুমের আগমুহূর্তে এমন কাটাকাটির কারণে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত স্থানীয় বাসিন্দারা।

ওয়াসা বলছে, বাসা বাড়িতে পানির সংযোগ দিতে পাইপ বসাতে এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরের দুটি সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পিসি রোড দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করা হয়। নগরের একাংশের লোকজনের চলাচলের প্রধান সড়ক এটি। ২০১৬ সালে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে। সংস্কারের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। ব্যয় ধরা হয় ১৭০ কোটি টাকা। চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় সংস্কার কাজ। এর মধ্যে দুইটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাঝপথে কাজ ফেলে চলে যায়। এতে বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরের বাসিন্দাদের।

পরে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে চসিক। যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ১০ কোটি টাকা গচ্চা যায় চসিকের। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১৮০ কোটি টাকা। গত ৯ নভেম্বর সড়কটির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

ওয়াসা সূত্র জানায়, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য পাইপ বসাতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। পিসি রোডের পাশে প্রায় ১০০ বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার কাছ চলছে।

আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। মেয়াদ শেষ হবে এ বছরের জুনে।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর ধরে সড়কটিতে নরক যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে। সংস্কার কাজ চলার সময় ওয়াসা পাইপলাইন বসাতে পারত। এখন সামনে বর্ষা। এখন সড়ক কাটাকাটি শুরু হয়েছে। হালিশহর আবাসিকের বাসিন্দা সলিম উল্লাহ নামে এক শিক্ষক সমকালকে বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসা এখন আতঙ্কের নাম। নতুন সড়ক কাটাকাটি করে দুর্ভোগ তৈরি করাই যেন প্রতিষ্ঠানটির কাজ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের মাঝখানে মেশিন দিয়ে গর্ত করার কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। মেশিন দিয়ে সড়কের পিচ (কার্পেটিং) টুকরা টুকরা করে তুলে আনা হচ্ছিল। বাসাবাড়িতে সংযোগ দেওয়ার জন্য সড়কের মাঝবরাবর থেকে ফুটপাত পর্যন্ত লম্বালম্বি করে কাটা হচ্ছিল। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর গর্তগুলো করা হচ্ছে। এভাবে সড়কটিতে প্রায় ১০০টি গর্ত করা হবে।

নতুন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাকসুদ বলেন, বাসাবাড়িতে পানির সংযোগ দেওয়ার জন্য সড়ক কাটতে হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা আগেই আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন এখন অনুমতি দিয়েছে। তাই এ সময়ে এসে কাজ শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই। আর সড়কের কাটাকাটি করার জন্য সিটি করপোরেশনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক মাকসুদ আলম দাবি করেছেন, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চললেও তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। মেশিন দিয়ে সড়কের একটি নির্দিষ্ট অংশ তুলে নেওয়া হচ্ছে। পাইপ বসানোর পর তুলে আনা অংশ পুনরায় আগের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর এমনভাবে সংস্কার করে দেওয়া হবে, যাতে কাটাকাটি হয়েছে, তা বোঝা না যায়।

ওয়াসার এমন খোঁড়াখুঁড়িতে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ফয়েজ আলী বলেন, কত সুন্দর একটা রাস্তা। কাজ শেষ হয়েছে বেশি দিনও হয়নি। সংস্কারকাজ চলার সময় অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। এখন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। কিন্তু ওয়াসার তা যেন সহ্য হচ্ছে না। তাই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দিল। আবার দুর্ভোগ শুরু হবে।

নেওয়াজ উদ্দিন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ওয়াসা খোঁড়াখুঁড়ির আর সময় পেল না। কিছুদিন পর বর্ষা শুরু হবে। এর আগেই সড়কে কাটাকাটি শুরু হলো। গর্ত করা হলেও পরে তা আর ঠিকভাবে সংস্কার করা হয়নি।

কাজ শেষ হওয়ার বছর পার না হতেই খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতির প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পানির সংযোগের জন্য অনুমোদন দিতে হয়। তবে ওয়াসা থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ হলে তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।