নিজস্ব প্রতিবেদক :
গুমের ঘটনায় সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সেনাসদর।
সেনাবাহিনীতে থাকা সদস্যদের মধ্যে যারা বিভিন্ন সংস্থায় ডেপুটেশনে কর্মরত তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। এমতাবস্থায় সেনা সদর জানিয়েছে, কোনো গুমের ঘটনায় কোনো সেনা সদস্যের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
গুমের সঙ্গে সেনা সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের ডেপুটেশনে পাঠালেও তাদের সেনাবাহিনী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, কয়েকজন সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কেউ নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে সহযোগিতা চান, তাহলে আমরা যথাযথভাবে সহযোগিতা করব।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কর্নেল শফিকুল জানান, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে নির্দেশনা পেলে সেনাবাহিনী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
থানা থেকে অস্ত্র লুটের বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ নির্বাচনের আগেই উদ্ধার যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী এরই মধ্যে ৪০০ জনেরও বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। অলিগলিতে সেনাবাহিনী সব সময় থাকতে পারে না, তবে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।’ বাকি ২০ শতাংশ নির্বাচনের আগেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযানে গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী ২৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫৬২ জনকে এবং এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬৪৬ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাতসহ অন্যান্য অপরাধী রয়েছেন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী গত ২১ জুন খুলনা জেলার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বুলবুলকে তার চারজন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে। অভিযানে একটি অত্যাধুনিক বিদেশি পিস্তল, ১টি দেশীয় পিস্তল, একটি শটগান এবং দুই রাউন্ড অ্যামোনিশন উদ্ধার করা হয়। সন্ত্রাসী বুলবুল ‘বুলবুল গ্রুপ’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতা। গত ২৯-৩০ জুন মীর হাজিরবাগ থেকে আল আমীন সন্ত্রাসী গ্রুপের দুজন সক্রিয় সদস্য আনিছ ও হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ অভিযানে তিনটি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলভার, তিনটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ৪৫ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৫২১ জনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। গত দুই সপ্তাহে সেনাবাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সফল অভিযান পরিচালনা করে। এ ছাড়া গত ১৭ জুন টঙ্গী মাজার বস্তি এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ২৪ জন ও গত ২৬ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযান পরিচালনা করে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।