Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে শীতলক্ষ্যার মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

গাজীপুরে শীতলক্ষ্যার মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গাজীপুরের বরমী এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর মাটি কেটে ইট তৈরি করছে তীরেই অবস্থিত গাজী অটো ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা। এছাড়া পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীর জায়গাও দখল করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় বাধা দিলেও মাটি কাটা বন্ধ করেনি ভাটা কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত সিংহশ্রী-বরমী সেতুসংলগ্ন স্থানে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বেশ কয়েক বছর আগে গড়ে উঠেছিল ‘গাজী অটো ব্রিকস’ নামের এ ভাটা। স্থানীয় বরমী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, সেতুসংলগ্ন স্থানে বরমী মৌজার বেশকিছু জমি ক্রয়, নদীর পাড় ও নদীর জমি দখল করে ইটভাটাটি পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে তাদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা সরেজমিন সার্ভে করে দেখতে পান, এ ইটভাটা কর্তৃপক্ষ নদীতীরের ৩৬ শতাংশ জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। পাশাপাশি তীর ও নদীর মাটিও কেটে নিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরমী ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ফজলুল হক মোড়ল। তিনি আরো জানান, শুধু মাটি কাটা নয়, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশও হুমকির মুখে। এছাড়া পাশেই সিংহশ্রী-বরমী সেতুটি অবস্থিত। শীতলক্ষ্যার মাটি কাটার ফলে এ সেতুও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

বরমী গ্রামের বাসিন্দা তারেক রহমান ভূঁইয়া বলেন, পরিবেশ আইন অমান্য করে নদীর পাড়ে এ ভাটা গড়ে তোলায় স্থানীয় পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। নদীর পাড়ে বিশাল আকারের একটি বটবৃক্ষ রয়েছে। একসময় পাখির অভয়ারণ্য ছিল এ বটবৃক্ষকে ঘিরে। ইটভাটার কারণে এখন আর সেই পরিবেশ নেই। বিকাল হলে স্থানীয়রা এ সেতুতে ঘুরতে বের হলে ভাটার ধোঁয়ার কারণে অস্বস্তি তৈরি হয়। আমাদের দাবি নদীকে বাঁচাতে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য নদী দখল করে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।

বরমী ফাজিল মাদ্রাসার আরবি বিভাগের প্রভাষক মোতাহার হোসেন বলেন, প্রতি বছর নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেয় এ ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। পরে জোয়ারের সময় পলি জমে সে শূন্যস্থান ভরাট হয়ে যায়। এভাবেই চলছে এ ইটভাটার লুকোচুরি। এ ইটভাটার চারপাশের নদীর পাড়ের মাটি লুটে নিয়েছে তারা। এভাবে নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিলেও কেউই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বরমী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য আলী আমজাদ পণ্ডিত বলেন, এভাবে নদীর মাটি কেটে তা ইট তৈরিতে ব্যবহার করে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ অন্যায় করছে। এ ভাটার কারণে স্থানীয় পরিবেশও হুমকিতে পড়েছে।

এ বিষয়ে গাজী অটো ব্রিকসের পরিচালক জামিলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বেশ কয়েক মাস আগে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আগে নদীর জমি দখল করে কীভাবে ভাটাটি গড়ে তোলা হয়েছে, সেসব বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে নদীর তীর থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ইট তৈরিতে মাটির ব্যবহার রয়েছে, তাই নদীপথে মাটি আনতে হয়। নদীর পাড় উঁচু হওয়ায় মাটি রাখতে সমস্যা হয়। তাই সেখানে গর্ত করা হয়েছে মাটি রাখার স্থান প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারাই একটি সমাধান দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, নদীর পার থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই ভাটার ভূমি সার্ভে করে দেখা হয়েছে। মাটি কাটা ও নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, এ ইটভাটার পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র নেই। আমরা ইনফোর্সমেন্ট টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠাব। আর নদীর পাড়ে মাটি কাটা ও নদী দখলের বিষয়টি দেখবে স্থানীয় প্রশাসন। তারা অভিযান চালালে আমরা তাদের সহায়তা করব।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি দোকান দখল দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: ডিএমপি

গাজীপুরে শীতলক্ষ্যার মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়

প্রকাশের সময় : ১০:৫৭:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ জুন ২০২১

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গাজীপুরের বরমী এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর মাটি কেটে ইট তৈরি করছে তীরেই অবস্থিত গাজী অটো ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা। এছাড়া পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নদীর জায়গাও দখল করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় বাধা দিলেও মাটি কাটা বন্ধ করেনি ভাটা কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত সিংহশ্রী-বরমী সেতুসংলগ্ন স্থানে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বেশ কয়েক বছর আগে গড়ে উঠেছিল ‘গাজী অটো ব্রিকস’ নামের এ ভাটা। স্থানীয় বরমী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, সেতুসংলগ্ন স্থানে বরমী মৌজার বেশকিছু জমি ক্রয়, নদীর পাড় ও নদীর জমি দখল করে ইটভাটাটি পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেয়ার বিষয়ে তাদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা সরেজমিন সার্ভে করে দেখতে পান, এ ইটভাটা কর্তৃপক্ষ নদীতীরের ৩৬ শতাংশ জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। পাশাপাশি তীর ও নদীর মাটিও কেটে নিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরমী ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ফজলুল হক মোড়ল। তিনি আরো জানান, শুধু মাটি কাটা নয়, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশও হুমকির মুখে। এছাড়া পাশেই সিংহশ্রী-বরমী সেতুটি অবস্থিত। শীতলক্ষ্যার মাটি কাটার ফলে এ সেতুও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

বরমী গ্রামের বাসিন্দা তারেক রহমান ভূঁইয়া বলেন, পরিবেশ আইন অমান্য করে নদীর পাড়ে এ ভাটা গড়ে তোলায় স্থানীয় পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। নদীর পাড়ে বিশাল আকারের একটি বটবৃক্ষ রয়েছে। একসময় পাখির অভয়ারণ্য ছিল এ বটবৃক্ষকে ঘিরে। ইটভাটার কারণে এখন আর সেই পরিবেশ নেই। বিকাল হলে স্থানীয়রা এ সেতুতে ঘুরতে বের হলে ভাটার ধোঁয়ার কারণে অস্বস্তি তৈরি হয়। আমাদের দাবি নদীকে বাঁচাতে এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য নদী দখল করে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।

বরমী ফাজিল মাদ্রাসার আরবি বিভাগের প্রভাষক মোতাহার হোসেন বলেন, প্রতি বছর নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেয় এ ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। পরে জোয়ারের সময় পলি জমে সে শূন্যস্থান ভরাট হয়ে যায়। এভাবেই চলছে এ ইটভাটার লুকোচুরি। এ ইটভাটার চারপাশের নদীর পাড়ের মাটি লুটে নিয়েছে তারা। এভাবে নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিলেও কেউই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বরমী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য আলী আমজাদ পণ্ডিত বলেন, এভাবে নদীর মাটি কেটে তা ইট তৈরিতে ব্যবহার করে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ অন্যায় করছে। এ ভাটার কারণে স্থানীয় পরিবেশও হুমকিতে পড়েছে।

এ বিষয়ে গাজী অটো ব্রিকসের পরিচালক জামিলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বেশ কয়েক মাস আগে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আগে নদীর জমি দখল করে কীভাবে ভাটাটি গড়ে তোলা হয়েছে, সেসব বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তবে নদীর তীর থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ইট তৈরিতে মাটির ব্যবহার রয়েছে, তাই নদীপথে মাটি আনতে হয়। নদীর পাড় উঁচু হওয়ায় মাটি রাখতে সমস্যা হয়। তাই সেখানে গর্ত করা হয়েছে মাটি রাখার স্থান প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারাই একটি সমাধান দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, নদীর পার থেকে মাটি কাটার বিষয়ে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই ভাটার ভূমি সার্ভে করে দেখা হয়েছে। মাটি কাটা ও নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, এ ইটভাটার পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র নেই। আমরা ইনফোর্সমেন্ট টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠাব। আর নদীর পাড়ে মাটি কাটা ও নদী দখলের বিষয়টি দেখবে স্থানীয় প্রশাসন। তারা অভিযান চালালে আমরা তাদের সহায়তা করব।