Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া শিশুটি মারা গেছে। তাকে তার মায়ের পাশেই কবর দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সাবরিন আল-সাকানি নামের শিশুটি মারা যায় বলে এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

শিশুটির নাম রাখা হয়েছে সাবরিন আল-রুহ। দ্বিতীয় নামের আরবি অর্থ ‘আত্মা’। তার মা সাবরিন আল-সাকানি (আল-শেখ) শনিবার রাতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর রাফাতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। শিশুটিকে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

গত শনিবার (২০ এপ্রিল) দক্ষিণ গাজার রাফাহতে নির্বিচার হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই হামলায় প্রথমে গুরুতর আহত হন ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী। তাকে উদ্ধারকর্মীরা দক্ষিণ গাজার রাফাহ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। চিকিৎসকেরা দেখেন, শিশুটি গর্ভে তখনো বেঁচে আছে। সাবরিন আল-সাকানির মা-ও।

দ্রুত নিহতকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। নাম রাখেন সাবরিন আল-সাকানি। শিশুটিকে দেখভালের জন্য বেশ সতর্কতাও নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না এতিম শিশুটিকে।

নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেওয়ায় শিশুটি শ্বাসকষ্টে ভুগছিল বলেও জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ সালামা।

সাবরিন ৩০ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন। তাঁকে রাফাহর আমিরাতি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হলেও চিকিৎসকরা গর্ভের শিশুটিকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির ডেলিভারি হয়।

আমিরাতি হাসপাতালের জরুরি নিও-নেটাল ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক মোহাম্মদ সালামা শিশু রুহের যত্ন নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, শিশুটির শ্বাসকষ্টের সমস্যা এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল। বৃহস্পতিবার সে মারা যায়।

তিনি ফোনে রয়টার্সকে বলেন, আমি ও অন্যান্য চিকিৎসক তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও সে মারা যায়। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এটি একটি খুব কঠিন ও বেদনাদায়ক দিন ছিল।

সালামা জানান, শিশুটি অপরিপক্ষ শ্বাসযন্ত্র নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল ছিল এবং এটিই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, সে (শিশুটি) তার পরিবারের সঙ্গে শহীদ হিসেবে যোগদান করেছে।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েল ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে গাজায় ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধে ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। ইসরায়েল হামাসকে নির্মূলের অভিযানে ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে গাজার অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূখণ্ডের অধিকাংশ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেগুলো এখনো কাজ করছে, সেগুলোতে বিদ্যুৎ, ওষুধ, জীবাণুমুক্ত করার সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সরবরাহের অভাব রয়েছে।

চিকিৎসক সালামা বলেন, (শিশু রুহের) দাদী আমাকে ও চিকিৎসকদের তার যত্ন নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কারণ সে এমন একজন হতে পারত, যে পরিবারের অন্য সদস্যদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সে মারা গেছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ০২:২০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া শিশুটি মারা গেছে। তাকে তার মায়ের পাশেই কবর দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সাবরিন আল-সাকানি নামের শিশুটি মারা যায় বলে এক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

শিশুটির নাম রাখা হয়েছে সাবরিন আল-রুহ। দ্বিতীয় নামের আরবি অর্থ ‘আত্মা’। তার মা সাবরিন আল-সাকানি (আল-শেখ) শনিবার রাতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর রাফাতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। শিশুটিকে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

গত শনিবার (২০ এপ্রিল) দক্ষিণ গাজার রাফাহতে নির্বিচার হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই হামলায় প্রথমে গুরুতর আহত হন ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী। তাকে উদ্ধারকর্মীরা দক্ষিণ গাজার রাফাহ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি। চিকিৎসকেরা দেখেন, শিশুটি গর্ভে তখনো বেঁচে আছে। সাবরিন আল-সাকানির মা-ও।

দ্রুত নিহতকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। নাম রাখেন সাবরিন আল-সাকানি। শিশুটিকে দেখভালের জন্য বেশ সতর্কতাও নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না এতিম শিশুটিকে।

নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেওয়ায় শিশুটি শ্বাসকষ্টে ভুগছিল বলেও জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ সালামা।

সাবরিন ৩০ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন। তাঁকে রাফাহর আমিরাতি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হলেও চিকিৎসকরা গর্ভের শিশুটিকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। সিজারিয়ান অপারেশন করে শিশুটির ডেলিভারি হয়।

আমিরাতি হাসপাতালের জরুরি নিও-নেটাল ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক মোহাম্মদ সালামা শিশু রুহের যত্ন নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, শিশুটির শ্বাসকষ্টের সমস্যা এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল। বৃহস্পতিবার সে মারা যায়।

তিনি ফোনে রয়টার্সকে বলেন, আমি ও অন্যান্য চিকিৎসক তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও সে মারা যায়। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এটি একটি খুব কঠিন ও বেদনাদায়ক দিন ছিল।

সালামা জানান, শিশুটি অপরিপক্ষ শ্বাসযন্ত্র নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল ছিল এবং এটিই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, সে (শিশুটি) তার পরিবারের সঙ্গে শহীদ হিসেবে যোগদান করেছে।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েল ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে গাজায় ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধে ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। ইসরায়েল হামাসকে নির্মূলের অভিযানে ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে গাজার অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। ভূখণ্ডের অধিকাংশ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেগুলো এখনো কাজ করছে, সেগুলোতে বিদ্যুৎ, ওষুধ, জীবাণুমুক্ত করার সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সরবরাহের অভাব রয়েছে।

চিকিৎসক সালামা বলেন, (শিশু রুহের) দাদী আমাকে ও চিকিৎসকদের তার যত্ন নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কারণ সে এমন একজন হতে পারত, যে পরিবারের অন্য সদস্যদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সে মারা গেছে।