আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রতি গাজায় নারী ও শিশুদেরকে হত্যা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানালেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (১১ নভেম্বর) তার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
রাজধানী প্যারিসে এলিসি প্রাসাদে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি ফোরামের ফাঁকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরাইলকে অবশ্যই গাজায় বোমাবর্ষণ ও বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে। গাজায় বোমা হামলার ‘কোনো যুক্তি নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ম্যাক্রো মনে করেন, সেখানে যুদ্ধবিরতি হলে বরং ইসরাইলেই উপকৃত হবে।
ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি হামাসের ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও ‘স্পষ্টভাবে নিন্দা’ করছে ফ্রান্স। হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতিও দিয়েছে তারা। তবে এর মানে এই নয় যে, ইসরাইল বেসমারিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর অতর্কিত হামলা চালাবে।
এ বিষয়ে ইমানুয়েল ম্যাক্রো বলেন, প্রকৃতপক্ষে ইসরাইল বেসামরিক লোকদের ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে। শিশু, নারী ও বৃদ্ধ মানুষদের বোমা মেরে হত্যা করছে। এই হামলার কোনো মানে নেই। এই হামলাকে বৈধতাও দেওয়া যায় না। তাই আমরা ইসরাইলকে থামার জন্য অনুরোধ করছি।
ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের মতো ফ্রান্সও হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের নেতারা তার এই যুদ্ধবিরতির আহ্বানে যোগ দিক, এটা তিনি চান কিনা জানতে চাওয়া হলে ম্যাক্রো বলেন, ‘আমি আশা করি, তারা (আমার আহ্বানের সঙ্গে) যোগ দেবে।’
ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ফ্রান্সও হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইনের মেনেই সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করছে এবং বেসামরিকদের হতাহতের সংখ্যা কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন হামলার আগে সতর্কতা জারি করা এবং লোকদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো। গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে প্যারিসে একটি মানবিক সহায়তা সম্মেলনের পরের দিন বক্তৃতা করতে গিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, সেই শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত সব সরকার ও সংস্থার স্পষ্ট উপসংহার ছিল, প্রথম মানবিক বিরতি ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই। যুদ্ধবিরতি যা (আমাদের) রক্ষা করবে…..বেসামরিক নাগরিকদের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু বেসামরিক মানুষদের ওপর বোমা হামলা করা হচ্ছে। এই শিশুরা, এই নারীরা, এই বৃদ্ধরা বোমা হামলায় নিহত হয়চ্ছে। এর কোনো কারণ নেই এবং কোন বৈধতা নেই। তাই আমরা ইসরায়েলকে থামানোর জন্য অনুরোধ করছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হয়েছে কিনা তা বিচার করা আমার কাজ নয়। আমরা ইসরায়েলের বেদনা ভাগ করে নিতে চাই। তারা সন্ত্রাসবাদ থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় আমরাও তাই চাই। ফ্রান্সে সন্ত্রাসবাদ বলতে কী বোঝায় তা আমরা জানি। তবে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চলমান বোমা হামলার কোনো যুক্তি নেই।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েন। তিনি বলেন, দেশগুলোর উচিত হামাসকে নিন্দা করা, ইসরায়েলকে নয়।’ নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ গাজায় হামাস যে অপরাধ করছে তা আগামীকাল প্যারিস, নিউইয়র্ক এবং বিশ্বের যেকোনো স্থানে সংঘটিত হতে পারে।
গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি।
গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ইসরায়েলি হামলায় সবশেষ নিহতের এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যেচার হাজার ৫০৬ জন শিশু। এ ছাড়া রয়েছেন কয়েক হাজার নারী। অন্যদিকে ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর চালানো হামাসের হামলায় নিহত হয়েছে এক হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছে তিন হাজারের বেশি।