আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
অবশেষে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হলো গাজা উপত্যকায়। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে এই চুক্তি কার্যকর হয়। এতে মধ্যস্থতা করছে কাতার। এই যুদ্ধবিরতিতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে কিছু বন্দিবিনিময়ের কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য যুদ্ধবিরতি শুরুর সময় জানিয়েছিল কাতার। সেই সময় অনুযায়ীই বিরতি শুরু হয়েছে।
যদিও যুদ্ধবিরতিকে সামনে রেখে গাজায় রাতভর বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পাওয়া গেছে হতাহতের খবরও। তাছাড়া যুদ্ধবিরতি শেষে আবারও গাজায় হামলা চালানো শুরু হবে বলে জানিয়েছে তেলআবিব।
যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রথম ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়ার পর প্রতি ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হলে একটি অতিরিক্ত দিন যুদ্ধবিরতি থাকবে বা যুদ্ধবিরতি এক দিন বাড়ানো হবে।
জিম্মিদের স্বজনরা বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা এমন কোনো আংশিক চুক্তি চায় না- যেখানে শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
তবে এই ধারাটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম ৫০ জনের মধ্যে যাদের মুক্তি দেওয়া হবে তাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি নাগরিক- যাদের দুই দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, যে তারা হামাসের হাতে জিম্মি ৫০ জন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। এ জন্য চার দিন যুদ্ধ বন্ধ থাকবে।
এই সংঘাতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছে কাতার। এর আগেও হামাসের হাতে জিম্মি চারজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র কাতারের মধ্যস্থতায়।
এর আগে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা জানায়। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে প্রাথমিকভাবে ১৩ বেসামরিক জিম্মিকে মুক্ত করবে হামাস। এসময় কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে ইসরায়েল। হোমাসের হাতে সাকল্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন নাগরিক জিম্মি রয়েছে। এসব ব্যক্তি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে ইসরায়েল ও লেবানন সীমান্তে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। কাফার শুবা, হালতা ও আল-জেবিন শহরের উপকণ্ঠে এসব বোমা হামলা চালানো হয়।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী লক্ষ্য করে সংগঠনটির যোদ্ধারা হামলা চলিয়েছে। এতে বেশ কিছু ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়।
৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর ২৮ অক্টোবর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তর গাজা অবরুদ্ধ উপত্যকাটির দক্ষিণাংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল। মূলত সেখানেই ইসরায়েলের স্থল অভিযান এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ আছে। সেখানে হামাসের বেশকিছু শীর্ষনেতা আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চুক্তির দর কষাকষিতে হামাসের জোর দাবি ছিল, বিরতিতে ইসরায়েলকে গাজায় ড্রোন নজরদারি বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এটা জিম্মি বা নিজেদের নেতা ও যোদ্ধাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আসা-যাওয়া করার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
চুক্তিমতে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের রাফাহ ক্রসিং হয়ে মিসরে নেওয়া হবে। সেখান থেকে তাদের ইসরায়েলে পাঠানো হবে।
আর ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে তারা সবাই অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে। সেখান থেকেই তাদের মুক্তি দেওয়া হবে।
ইসরায়েল ও হামাস প্রাথমিকভাবে নারী ও শিশুদেরই মুক্তি দেবে। আপাতত কোনো সেনাকে ছাড়া হবে না।
চার দিনের যুদ্ধবিরতি সফল হলে দৈনিক ১০ জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে এক দিন করে বিরতি বাড়তে পারে। এভাবে ১০ দিন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য কাতারে একটি দপ্তর খোলা হয়েছে। সেখানে সব পক্ষের কর্তকর্তা রয়েছেন।
চুক্তির মূল মধ্যস্থতাকারী কাতারের আশা, এ বিরতির মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হবে।
কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেছেন, যুদ্ধবিরতির পরপর হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফের শুরু হবে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীও একই ধরনের কথা বলেছেন। কিন্তু জিম্মিদের মুক্ত করতে নেতানিয়াহু সরকার চাপে আছে। তাই যুদ্ধবিরতি বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সবকিছু মাঠের বা রণক্ষেত্রের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজার সর্বত্র ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় এদিন অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে।
একই দিন উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হাসপাতালটি ইসরায়েলি সেনারা কয়েক দিন ধরে ঘিরে রেখেছে।
এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি হামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৮ দিনে ১৪ হাজার ৮৫৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৬ হাজার ১৫০। নারী ৪ হাজারের বেশি। একই সময়ে আহতে হয়েছে ৩৬ হাজার।
হামলার পর থেকে গাজায় প্রায় ৭ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৪ হাজার ৭০০।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। আহত হয় প্রায় ৪ হাজার। হামাস জিম্মি করে নিয়ে আসে ২৪০ জনকে। চারজন জিম্মিকে ইতোমধ্যে ছাড়া হয়েছে। সবাই নারী। দুজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।