আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে সর্বাত্মক হামলার আগে উত্তর গাজার ইসরায়েলি সীমানার কাছে বিপুল সংখ্যক সৈন্য জড়ো হয়েছে। গাজা ছেড়ে যেতে ফিলিস্তিনিদেরকে দেওয়া আল্টিমেটামও শেষ হয়েছে।
মূলত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্ব হবে একটি ‘বড় ভুল’।
সিবিএস নিউজের প্রোগ্রাম ৬০ মিনিটস-এর স্কট পেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন এই কথা বলেন। সোমবার (১৬ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
হামাস পুরো ফিলিস্তিন জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না জানিয়ে বাইডেন সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজা থেকে লোকজনকে বের করার জন্য একটি মানবিক করিডর তৈরির পক্ষে তিনি। এরসঙ্গে সেখানে মানবিক সহায়তা দেওয়াকেও সমর্থন করেন বাইডেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরায়েল নিয়ম মেনে যুদ্ধ করবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।
এসময় গাজায় খাদ্য-পানিসহ ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো এবং বিপদগ্রস্ত বাসিন্দাদের উপত্যকা থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিতে একটি মানবিক করিডোর চালুকে সমর্থন করেন বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
সাক্ষাৎকারে বাইডেন আরও বলেন, হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের সবার প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে চান।
৬০ মিনিটস-এর পোস্ট করা একটি ভিডিও ক্লিপে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আরও বলেন, তিনি গাজায় একটি মানবিক করিডোর চালু করাকে সমর্থন করেন যা মানুষকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ড থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেবে, সেইসাথে গাজায় খাদ্য ও পানিসহ মানবিক সহায়তা বিতরণের সুযোগ মিলবে।
জো বাইডেন বলে, হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি পথ থাকতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদের হুমকি বেড়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পাঠানো নিয়ে মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
একইদিনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন বাইডেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে নিশ্চিত করেছেন বাইডেন নিজেই।
তিনি এক্স বার্তায় লিখেছেন, আমি তাকে (মাহমুদ আব্বাস) আশ্বস্ত করেছি যে, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের কাছে মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে এবং এই সংঘাত যেন আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ওই অঞ্চলের অংশীদারদের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই গাজায় প্রবেশ করবে তাদের সেনারা এবং গাজায় গিয়ে হামাসকে ধ্বংস করবে তারা। রোববার যুদ্ধের সম্মুখভাগে সেনাদের সঙ্গে দেখা করতে যান আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেরজি হালেভি। সেখানে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
জেনারেল হেরজি হালেভি সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো এখন গাজায় প্রবেশ করা। সেখানে যাওয়া যেখানে হামাস প্রস্তুতি নিচ্ছে, কাজ করছে, পরিকল্পনা করছে এবং (রকেট) ছুড়ছে। তাদের সব দিক দিয়ে হামলা করুন, প্রত্যেক কমান্ডার, প্রত্যেক সদস্য এবং সবাইকে ধ্বংস করুন। এক কথায় আমাদের জিততে হবে।
এই লক্ষ্যে গত শুক্রবার গাজার উত্তর অংশ থেকে সব বেসামরিক বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপত্যকার দক্ষিণে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। উত্তর অংশে প্রায় ১১ লাখ মানুষের বসবাস। ইসরায়েলের নির্দেশের পর ওই অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে ইতিমধ্যেই পালিয়ে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের মাটিতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী দল হামাসের আকস্মিক হামলায় নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছুঁয়েছে। জবাবে ইসরায়েলও বিমান হামলা শুরু করে গাজা শহরে। হাজার হাজার বোমার আঘাতে ইতিমধ্যেই গাজা শহরের নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৬৭০ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের মধ্যে ৭৫০ জন শিশু রয়েছে। এতে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬০০।