Dhaka শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় ঈদে নেই বিশেষ ট্রেন, ভোগান্তি জেলার যাত্রীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
  • ১৯২ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গাইবান্ধা থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য রয়েছে দুটি ট্রেন ‘আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস’ ও ‘আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস’। ট্রেন দুটি এই জেলার উপর দিয়ে সপ্তাহে ছয় দিন চলাচল করে। কিন্তু যাত্রীর চাপ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ দেড় যুগেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়েনি, ঈদেও থাকে না বিশেষ ট্রেন। ফলে অন্য সময়ের মতো ঈদের ভোগান্তি বাড়ে এ জেলার যাত্রীদের।

তবে রেলসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন কিংবা বিশেষ ট্রেন নয়, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এ রুটের ‘আন্তনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ ও ‘আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে দুটি করে অতিরিক্ত বগি (কোচ) বাড়ানোর কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, ট্রেন দুটির মধ্যে আন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ৫৯৩টি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনসহ তিন স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ১৬৬টি। যার মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে ৮৭টি, বোনারপাড়ায় ৪০ এবং বামনডাঙ্গায় ৩৯টি আসন। এছাড়া ‘আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ৯৪০টি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনসহ তিন স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ১৪১টি। যার মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে ৬৭টি, বোনারপাড়ায় ৪০ এবং বামনডাঙ্গায় ৩৪টি আসন।

জেলার সচেতন নাগরিক ও যাত্রীরা বলেন, দীর্ঘ এক যুগেও গাইবান্ধার জন্য আসন বাড়ানো হয়নি। দুটি ট্রেন মিলিয়ে ১৫৪টি আসন যথেষ্ট নয়। রেল কর্তৃপক্ষ এদিকে খেয়াল না রেখে নানা অজুহাতে আন্তবিভাগ চলাচলের দুটি ট্রেনও বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, এ সংকট বেশি প্রকট হয় ঈদযাত্রায়। রেলে যথেষ্ট আসন না থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে করে বাড়িতে আসেন। একইভাবে কর্মস্থলে ফিরে যান। এ সময় দুর্ঘটনার শিকার হলে ঈদযাত্রা পুরো পরিবারের জন্য বিষাদের হয়।

সম্প্রতি গাইবান্ধা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন হাজ্জাজ মণ্ডল নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, আসন না পাওয়ার ব্যাপার তো আছেই। বেশি ভোগান্তি হয় ট্রেনের সূচি বিপর্যয়ে। ঈদে হাজার হাজার মানুষ গাইবান্ধায় আসবেন। ঘরে ফিরতে ট্রেন না পেয়ে তারা বিভিন্নভাবে আসার চেষ্টা করেন। ফলে প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয় অনেককেই।

গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও ঢাকার সঙ্গে উত্তারঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ চালু করা হয়। ট্রেনটি গাইবান্ধা নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়ার সান্তাহার জংসন হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। এদিক থেকেও গাইবান্ধার মানুষ অবহেলার শিকার হচ্ছেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, এর আগে নতুন ট্রেন চালুর বিপরীতে রামসাগর ও লোকাল ৪৮১ নামের দুটি ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে জেলার মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। গাইবান্ধার যাত্রী সংখ্যার কথা চিন্তা করে এখানে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিশেষ ট্রেন চালু করা খুবই জরুরি।

গাইবান্ধা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, গাইবান্ধা থেকে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রী সংখ্যা বিবেচনায় দুটি নয়, কমপক্ষে চারটি ট্রেন দরকার। ঢাকা থেকে এই রুটে নতুন করে চার-পাঁচটি ট্রেন যোগ করা হলে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

লালমনিরহাট রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. নুরুন্নবি ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সঙ্গে আরও দুটি কোচ (বগি) সংযুক্ত করার কথা রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লালমনিরহাটের যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী এই রুটে রাত্রিকালীন আরও একটি ট্রেন চালু করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ‘তিন বিঘা করিডোর’ নামক একটি ট্রেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষের রেলসেবার উন্নয়ন ঘটবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিমাঞ্চল, রাজশাহী) ওয়াশিম কুমার বলেন, রেল ভবনের বাণিজ্যিক বিভাগ সড়ক পথের নাজুক অবস্থা এবং রেলে চলাচলে দরিদ্রপ্রবণ এলাকার যাত্রীদের আধিক্য বেশি থাকার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন ট্রেন চালুর সুপারিশ করে। গাইবান্ধা রুটে নতুন করে আরও দুটি ট্রেন দেয়া হলে নির্বিঘ্নে চলবে কিন্তু বর্তমানে রেলওয়ের সক্ষমতা কম। তবে আগামীতে বাড়তেও পারে।

ওয়াশিম কুমার বলেন, সক্ষমতা বাড়লে এই রুটে নতুন ট্রেন দেবে রেল মন্ত্রণালয়। তবে বর্তমানে নতুন করে কোনো ট্রেন দেয়া হচ্ছে না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

গাইবান্ধায় ঈদে নেই বিশেষ ট্রেন, ভোগান্তি জেলার যাত্রীরা

প্রকাশের সময় : ০২:৩৪:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

গাইবান্ধা থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য রয়েছে দুটি ট্রেন ‘আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস’ ও ‘আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস’। ট্রেন দুটি এই জেলার উপর দিয়ে সপ্তাহে ছয় দিন চলাচল করে। কিন্তু যাত্রীর চাপ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ দেড় যুগেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়েনি, ঈদেও থাকে না বিশেষ ট্রেন। ফলে অন্য সময়ের মতো ঈদের ভোগান্তি বাড়ে এ জেলার যাত্রীদের।

তবে রেলসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন কিংবা বিশেষ ট্রেন নয়, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এ রুটের ‘আন্তনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ ও ‘আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে দুটি করে অতিরিক্ত বগি (কোচ) বাড়ানোর কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, ট্রেন দুটির মধ্যে আন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ৫৯৩টি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনসহ তিন স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ১৬৬টি। যার মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে ৮৭টি, বোনারপাড়ায় ৪০ এবং বামনডাঙ্গায় ৩৯টি আসন। এছাড়া ‘আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ৯৪০টি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনসহ তিন স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ১৪১টি। যার মধ্যে গাইবান্ধা রেলস্টেশনে ৬৭টি, বোনারপাড়ায় ৪০ এবং বামনডাঙ্গায় ৩৪টি আসন।

জেলার সচেতন নাগরিক ও যাত্রীরা বলেন, দীর্ঘ এক যুগেও গাইবান্ধার জন্য আসন বাড়ানো হয়নি। দুটি ট্রেন মিলিয়ে ১৫৪টি আসন যথেষ্ট নয়। রেল কর্তৃপক্ষ এদিকে খেয়াল না রেখে নানা অজুহাতে আন্তবিভাগ চলাচলের দুটি ট্রেনও বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, এ সংকট বেশি প্রকট হয় ঈদযাত্রায়। রেলে যথেষ্ট আসন না থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে করে বাড়িতে আসেন। একইভাবে কর্মস্থলে ফিরে যান। এ সময় দুর্ঘটনার শিকার হলে ঈদযাত্রা পুরো পরিবারের জন্য বিষাদের হয়।

সম্প্রতি গাইবান্ধা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন হাজ্জাজ মণ্ডল নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, আসন না পাওয়ার ব্যাপার তো আছেই। বেশি ভোগান্তি হয় ট্রেনের সূচি বিপর্যয়ে। ঈদে হাজার হাজার মানুষ গাইবান্ধায় আসবেন। ঘরে ফিরতে ট্রেন না পেয়ে তারা বিভিন্নভাবে আসার চেষ্টা করেন। ফলে প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয় অনেককেই।

গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও ঢাকার সঙ্গে উত্তারঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ চালু করা হয়। ট্রেনটি গাইবান্ধা নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়ার সান্তাহার জংসন হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। এদিক থেকেও গাইবান্ধার মানুষ অবহেলার শিকার হচ্ছেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, এর আগে নতুন ট্রেন চালুর বিপরীতে রামসাগর ও লোকাল ৪৮১ নামের দুটি ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে জেলার মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। গাইবান্ধার যাত্রী সংখ্যার কথা চিন্তা করে এখানে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিশেষ ট্রেন চালু করা খুবই জরুরি।

গাইবান্ধা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, গাইবান্ধা থেকে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রী সংখ্যা বিবেচনায় দুটি নয়, কমপক্ষে চারটি ট্রেন দরকার। ঢাকা থেকে এই রুটে নতুন করে চার-পাঁচটি ট্রেন যোগ করা হলে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

লালমনিরহাট রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. নুরুন্নবি ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সঙ্গে আরও দুটি কোচ (বগি) সংযুক্ত করার কথা রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লালমনিরহাটের যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী এই রুটে রাত্রিকালীন আরও একটি ট্রেন চালু করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ‘তিন বিঘা করিডোর’ নামক একটি ট্রেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষের রেলসেবার উন্নয়ন ঘটবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিমাঞ্চল, রাজশাহী) ওয়াশিম কুমার বলেন, রেল ভবনের বাণিজ্যিক বিভাগ সড়ক পথের নাজুক অবস্থা এবং রেলে চলাচলে দরিদ্রপ্রবণ এলাকার যাত্রীদের আধিক্য বেশি থাকার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন ট্রেন চালুর সুপারিশ করে। গাইবান্ধা রুটে নতুন করে আরও দুটি ট্রেন দেয়া হলে নির্বিঘ্নে চলবে কিন্তু বর্তমানে রেলওয়ের সক্ষমতা কম। তবে আগামীতে বাড়তেও পারে।

ওয়াশিম কুমার বলেন, সক্ষমতা বাড়লে এই রুটে নতুন ট্রেন দেবে রেল মন্ত্রণালয়। তবে বর্তমানে নতুন করে কোনো ট্রেন দেয়া হচ্ছে না।