Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গা ঢাকা দিয়েছেন এমপি হাজী সেলিম!

এমপি হাজী সেলিম

পুরান ঢাকার প্রভাবশালী এমপি হাজী সেলিম। শারিরিক অসুস্থতার জন্য অবশ্য এখন আর তার সেই প্রভাব নেই। তবে ছেলে ইরফান সেলিম কাণ্ডে প্রভাবশালী এই এমপি গা ঢাকা দিয়েছেন। সোমবার (২৬ অক্টোবর) দিনব্যাপী পুরান ঢাকার বড় কাটরায় হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। সে সময়ও হাজী সেলিমকে ওই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। অভিযানে সেখান থেকে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

অভিযানকালে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিমকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। হাজী সেলিম ও তার ছেলে ইরফান সেলিম পুরান ঢাকার বড় কাটরার নিজ বাড়িতেই থাকতেন। যখন র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করছিল তার আগ থেকেই ওই বাসায় নেই হাজী সেলিম। ছেলের কর্মকাণ্ডে লোক লজ্জার ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।

হাজী সেলিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হাজী সেলিমের ছেলে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য গত নির্বাচনের আগে একাধিকবার চকবাজার এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছেন।

২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শহীদ হাজী আব্দুল আলিম খেলার মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটান ইরফান সেলিম। সেদিন মূলত ছিল নিজেকে জানান দেওয়ার শো ডাউন। ওই অনুষ্ঠানে তৎকালিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রধান অতিথি ছিলেন। মাঠের নাম ফলকে হাজী সেলিমের নাম না থাকায় তার ছেলে ইরফান সেলিম দলবল নিয়ে হাজির হন সেখানে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে থাপ্পর মারেন হাজী সেলিম।

এভাবে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্থান হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের। পুরান ঢাকার বিশেষ করে চকবাজার এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন ইরফান সেলিম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে পিতার আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরমও তুলেছিলেন ইরফান। পরে আওয়ামী লীগ থেকে হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন।

এমপি হতে না পারলেও জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন থেকেই যায় তার। তাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইরফান সেলিম। বাবা এমপি অন্যদিকে শ্বশুর ইকরামুল করিম চৌধুরীও একজন সংসদ সদস্য। আর নিজে কাউন্সিলর। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতেন ইরফান সেলিম।

আর এর সবই পেয়েছেন পিতা হাজী সেলিমের কাছ থেকে। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী থেকে সংসদ সদস্য বনে যাওয়া হাজী সেলিমও বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে এলাকার ভেতর প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। হাজী সেলিম ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে পরাজিত হন।

আরও পড়ুন : হাজী সেলিমের ছেলে গ্রেফতার: বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধার

তারপর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন হাজী সেলিম। দশম সংসদে ১৬ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিয়ে আলাদা একটি জোট করেন তিনি। যদিও সেই জোটের কোনো কার্যকারিতা ছিল না।

তবে বিভিন্ন সময় সংসদে নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়াতেন এই সংসদ সদস্য। একবার সংসদে আইন প্রণয়ন কাজে তৎকালিন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তর্কে জড়ান হাজী সেলিম। তবে দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে হাজী সেলিম কথা বলতে পারেন না। শুধু ইশারায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

রোববার (২৫ অক্টোবর) রাতে ধানমন্ডিতে সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করেন ইরফান সেলিম। এরপর তার বিরুদ্ধে মারধর ও হত্যা চেষ্টা মামলা করেন ওয়াসিফ আহমেদ। সেই মামলায় কারাগারে কাউন্সিলর ইরফান সেলিম। আর ঘটনা থেকে নিজেকে আড়াল করতে পলাতক এমপি হাজী সেলিম।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

গা ঢাকা দিয়েছেন এমপি হাজী সেলিম!

প্রকাশের সময় : ১২:১২:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০

পুরান ঢাকার প্রভাবশালী এমপি হাজী সেলিম। শারিরিক অসুস্থতার জন্য অবশ্য এখন আর তার সেই প্রভাব নেই। তবে ছেলে ইরফান সেলিম কাণ্ডে প্রভাবশালী এই এমপি গা ঢাকা দিয়েছেন। সোমবার (২৬ অক্টোবর) দিনব্যাপী পুরান ঢাকার বড় কাটরায় হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। সে সময়ও হাজী সেলিমকে ওই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। অভিযানে সেখান থেকে ইরফান সেলিমকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

অভিযানকালে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিমকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। হাজী সেলিম ও তার ছেলে ইরফান সেলিম পুরান ঢাকার বড় কাটরার নিজ বাড়িতেই থাকতেন। যখন র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করছিল তার আগ থেকেই ওই বাসায় নেই হাজী সেলিম। ছেলের কর্মকাণ্ডে লোক লজ্জার ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছেন ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম।

হাজী সেলিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হাজী সেলিমের ছেলে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য গত নির্বাচনের আগে একাধিকবার চকবাজার এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছেন।

২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শহীদ হাজী আব্দুল আলিম খেলার মাঠ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটান ইরফান সেলিম। সেদিন মূলত ছিল নিজেকে জানান দেওয়ার শো ডাউন। ওই অনুষ্ঠানে তৎকালিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রধান অতিথি ছিলেন। মাঠের নাম ফলকে হাজী সেলিমের নাম না থাকায় তার ছেলে ইরফান সেলিম দলবল নিয়ে হাজির হন সেখানে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে থাপ্পর মারেন হাজী সেলিম।

এভাবে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্থান হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের। পুরান ঢাকার বিশেষ করে চকবাজার এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন ইরফান সেলিম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে পিতার আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরমও তুলেছিলেন ইরফান। পরে আওয়ামী লীগ থেকে হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন।

এমপি হতে না পারলেও জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন থেকেই যায় তার। তাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইরফান সেলিম। বাবা এমপি অন্যদিকে শ্বশুর ইকরামুল করিম চৌধুরীও একজন সংসদ সদস্য। আর নিজে কাউন্সিলর। তাই ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করতেন ইরফান সেলিম।

আর এর সবই পেয়েছেন পিতা হাজী সেলিমের কাছ থেকে। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী থেকে সংসদ সদস্য বনে যাওয়া হাজী সেলিমও বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে এলাকার ভেতর প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। হাজী সেলিম ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে পরাজিত হন।

আরও পড়ুন : হাজী সেলিমের ছেলে গ্রেফতার: বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধার

তারপর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন হাজী সেলিম। দশম সংসদে ১৬ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিয়ে আলাদা একটি জোট করেন তিনি। যদিও সেই জোটের কোনো কার্যকারিতা ছিল না।

তবে বিভিন্ন সময় সংসদে নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়াতেন এই সংসদ সদস্য। একবার সংসদে আইন প্রণয়ন কাজে তৎকালিন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে তর্কে জড়ান হাজী সেলিম। তবে দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে হাজী সেলিম কথা বলতে পারেন না। শুধু ইশারায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

রোববার (২৫ অক্টোবর) রাতে ধানমন্ডিতে সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত হাজী সেলিমের একটি গাড়ি থেকে নেমে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধর করেন ইরফান সেলিম। এরপর তার বিরুদ্ধে মারধর ও হত্যা চেষ্টা মামলা করেন ওয়াসিফ আহমেদ। সেই মামলায় কারাগারে কাউন্সিলর ইরফান সেলিম। আর ঘটনা থেকে নিজেকে আড়াল করতে পলাতক এমপি হাজী সেলিম।