রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে অস্বস্তিকর গরমের পর টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এজন্য ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হওয়ায় নদীপাড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত চলমান আছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ও শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দু-দিন রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আছে। এর ফলে আগামী দুইদিন পর্যন্ত নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতল সতর্ক-সীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এদিকে প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৬টায় ও ৯টায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটার এবং বেলা ১২টায় ৫১ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। বিকেল ৩টায় পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে বিকেল ৩টায় কাউনিয়া রেলসেতু পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৮ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, তিস্তার কান্না আজকে নতুন নয়। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া এই সমস্যার সমাধান নেই। অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর জেলায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার রংপুর বিভাগসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুরের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, গত দুই দিন ধরে উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে রংপুর বিভাগের কোনো নদ-নদীতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। প্রতিদিনের বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল। তবে আস্তে আস্তে বৃষ্টি কমে যাচ্ছে।