Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি উপায়ের কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। যেকেউ রাষ্ট্রপতির কাছে সাজা মওকুফ চেয়ে আবেদন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাকে দোষ স্বীকার করতে হবে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যেকোনো আসামি তার দণ্ড মওকুফের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন। ইতোমধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ রাষ্ট্রপতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তিনি বিদেশে গেছেন।

আনিসুল হক বলেন, বেগম জিয়ার পরিবার দরখাস্ত করেছিলেন, সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আইনে কোথাও তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলা নেই।

নির্বাহী আদেশের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী শর্ত যুক্তভাবে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, সেটি দ্বিতীয়বার আর করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রশ্ন রেখে আইনমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না- এই শর্তেই দণ্ড স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তিনি বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। শেখ হাসিনা তার মহানুভবতা দেখিয়ে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছেন। আর কত মহানুভবতা দেখাতে হবে?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে তার পরিবারের আবেদন নিষ্পত্তির পেছনে কোনো রাজনীতি নেই বলে দাবি করে আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বেগম জিয়ার পরিবার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে দরখাস্ত করেছিল, সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তার সাজার বিষয়টি যে অবস্থায় আছে সেই বিষয়ে আইনে কোথাও বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তিনি শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন না।

ফখরুলের সেই অভিযোগে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই। তাকে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। এই ইস্যুতে বিএনপি মিথ্যাচার করছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে আমি জানতে পারলাম, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকালের (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আইনমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন, (খালেদা জিয়ার) দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। এটা পারেন শুধু আদালত। অথচ তার কিছুদিন পরই সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) বাসায় এসেছিলেন।

মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারণ এমন কথা আমি কোথাও কখনও বলিনি। আমার বক্তব্য সবসময় রেকর্ড করা থাকে বলে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কী কথা বলেছি, সেগুলো চেক করে দেখেছি। সেখানে কোথাও (এ কথা) নেই। আমি একজন আইনজীবী। আমি বাংলাদেশের সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি জানি। তাই আমার পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৮ সালে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল শেখ হাসিনার সঙ্গে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার তুলনা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলেন, তিনি তখন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা কয়েদি ছিলেন না। তিনি তখন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সবক’টি মামলায় নিঃশর্ত জামিনে ছিলেন।

আইনমন্ত্রীর পাশে ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০০৮ সালের ওই সময় শেখ হাসিনার আইনজীবীদের একজন ছিলেন তিনি।

ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, তিনি (ব্যারিস্টার তাপস) পরিষ্কারভাবে আমাকে জানিয়েছেন, এই সব মামলায় জামিন (বেল বন্ড) নেওয়ার পরই বঙ্গবন্ধুকন্যা মুক্ত হয়েছিলেন। এছাড়া, তাকে নিঃশর্ত জামিন দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ তার জামিনে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়েও কোনো বাধানিষেধ ছিল না। তাই তার বিদেশে যাওয়ার সময় কোনো অনুমতি বা নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন হয়নি।

তিনি আরও বলেন,‘তিনি (শেখ হাসিনা) আইন মেনেই বিদেশে গিয়েছিলেন, আইন মেনেই দেশে ফিরেছিলেন। বরং ২০০৭ সালে বিএনপি সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ এবং তার পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই সময় অবৈধভাবে শেখ হাসিনাকে বিদেশ থাকা অবস্থায় দেশে ফিরতে দেয়নি। শেখ হাসিনা সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে, সংগ্রাম করে দেশে ফিরে আসেন। এবং দেশে ফিরে আসার পর তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে : আইনমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০২:২৬:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি উপায়ের কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে। যেকেউ রাষ্ট্রপতির কাছে সাজা মওকুফ চেয়ে আবেদন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাকে দোষ স্বীকার করতে হবে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যেকোনো আসামি তার দণ্ড মওকুফের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন। ইতোমধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ রাষ্ট্রপতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তিনি বিদেশে গেছেন।

আনিসুল হক বলেন, বেগম জিয়ার পরিবার দরখাস্ত করেছিলেন, সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আইনে কোথাও তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলা নেই।

নির্বাহী আদেশের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী শর্ত যুক্তভাবে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, সেটি দ্বিতীয়বার আর করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রশ্ন রেখে আইনমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না- এই শর্তেই দণ্ড স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তিনি বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। শেখ হাসিনা তার মহানুভবতা দেখিয়ে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছেন। আর কত মহানুভবতা দেখাতে হবে?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে তার পরিবারের আবেদন নিষ্পত্তির পেছনে কোনো রাজনীতি নেই বলে দাবি করে আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বেগম জিয়ার পরিবার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে দরখাস্ত করেছিল, সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তার সাজার বিষয়টি যে অবস্থায় আছে সেই বিষয়ে আইনে কোথাও বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।

বিএনপির পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তিনি শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসা নেবেন না।

ফখরুলের সেই অভিযোগে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই। তাকে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। এই ইস্যুতে বিএনপি মিথ্যাচার করছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে আমি জানতে পারলাম, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকালের (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আইনমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন, (খালেদা জিয়ার) দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। এটা পারেন শুধু আদালত। অথচ তার কিছুদিন পরই সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) বাসায় এসেছিলেন।

মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারণ এমন কথা আমি কোথাও কখনও বলিনি। আমার বক্তব্য সবসময় রেকর্ড করা থাকে বলে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত কী কথা বলেছি, সেগুলো চেক করে দেখেছি। সেখানে কোথাও (এ কথা) নেই। আমি একজন আইনজীবী। আমি বাংলাদেশের সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি জানি। তাই আমার পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব নয়।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৮ সালে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল শেখ হাসিনার সঙ্গে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার তুলনা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলেন, তিনি তখন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা কয়েদি ছিলেন না। তিনি তখন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সবক’টি মামলায় নিঃশর্ত জামিনে ছিলেন।

আইনমন্ত্রীর পাশে ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ২০০৮ সালের ওই সময় শেখ হাসিনার আইনজীবীদের একজন ছিলেন তিনি।

ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, তিনি (ব্যারিস্টার তাপস) পরিষ্কারভাবে আমাকে জানিয়েছেন, এই সব মামলায় জামিন (বেল বন্ড) নেওয়ার পরই বঙ্গবন্ধুকন্যা মুক্ত হয়েছিলেন। এছাড়া, তাকে নিঃশর্ত জামিন দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ তার জামিনে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়েও কোনো বাধানিষেধ ছিল না। তাই তার বিদেশে যাওয়ার সময় কোনো অনুমতি বা নির্বাহী আদেশের প্রয়োজন হয়নি।

তিনি আরও বলেন,‘তিনি (শেখ হাসিনা) আইন মেনেই বিদেশে গিয়েছিলেন, আইন মেনেই দেশে ফিরেছিলেন। বরং ২০০৭ সালে বিএনপি সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ এবং তার পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই সময় অবৈধভাবে শেখ হাসিনাকে বিদেশ থাকা অবস্থায় দেশে ফিরতে দেয়নি। শেখ হাসিনা সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে, সংগ্রাম করে দেশে ফিরে আসেন। এবং দেশে ফিরে আসার পর তাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়।