নিজস্ব প্রতিবেদক :
খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ২য় জাতীয় কুষ্ঠ সম্মেলন-২০২৩ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করবো সেই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। প্রায় দশ হাজারের মতো ক্লিনিক আমরা নির্মাণ করি, এর মধ্যে ৪০০০ চালু করি। এক বছরের মধ্যে এর সাফল্য প্রায় ৭০ ভাগ। মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বিনা পয়সায় সেখানে ওষুধ দেওয়া হয়, যে কারণে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে কমিউনিটি ক্লিনিক। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আসতে পারেনি। তখন বিএনপি ক্ষমতা আসে। প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া, সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। স্বাস্থ্যসেবা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার পর বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি, জনগণের সেবার সুযোগ পাই। তখন থেকে আমাদের প্রচেষ্টায় এদেশের মানুষকে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, এটা জাতির পিতাই শুরু করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যাতে প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে ওঠে, তার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালের সব যন্ত্রপাতির ওপর ট্যাক্স, বিশেষ করে শিশুদের চিকিৎসার জন্য ট্যাক্স একেবারে শূন্য করে দেই। বেসরকারি উদ্যোক্তা যাতে সৃষ্টি হয় সেজন্য তাদের উৎসাহিত করি। তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দেই। যার জন্য সারা বাংলাদেশে প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সারাটা জীবন আমার বাবা সংগ্রাম করেছিলেন। সে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারছি। তার সেই স্বপ্নপূরণই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে ১৯৯৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছিলাম। যদিও এখনো কিছু কিছু এলাকায় কুষ্ঠ রোগী আছে, যেটা চিহ্নিত করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার। আর প্রতি বছর কুষ্ঠ রোগী শনাক্তকরণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ষষ্ঠ দেশ। তবে সব কুষ্ঠ রোগী দেশের সব উপজেলা হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুষ্ঠ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার লক্ষ্যে আমাদের একটি অপারেশনাল প্ল্যান চলমান আছে, যেখানে ৩ থেকে ৪শ জনবল কাজ করছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কুষ্ঠ আক্রান্তদের সেবা দেয়া হচ্ছে। কুষ্ঠ নির্মূল কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যাতে নতুন রোগী শনাক্তকরণ ও এ রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। আমার কথা হচ্ছে, প্রতিরোধ করাটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কী কারণে হচ্ছে এবং সেটা যেন না হয়, সেদিকে আমাদের বেশি দৃষ্টি দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, কুষ্ঠ রোগ ছোঁয়াছে – সেটা ভুল ধারণা। একটি ব্রিটিশ আইনের কারণে তাদের ঘৃণার চোখে দেখা হতো। কিন্তু ২০১১ সালে সেটি বাতিল করেছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, কুষ্ঠ রোগ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য একটা ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক প্লান ফর লেপ্রোসি ইন বাংলাদেশ ২০২২ টু ২০৩০ আমরা প্রণয়ন করেছি। এটা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আজকের এ সম্মেলনের মাধ্যমে ২০৩০ সালে কুষ্ঠমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করতে পারবো। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলে আমার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার করছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ৯৬ সালের সরকারে এসে বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট আমরা প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। তার কার্যক্রম শুরু করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার দিকে বিশেষ নজর দেই। আমি ধন্যবাদ জানাই জাতিসংঘকে, জাতিসংঘের সব সদস্য দেশ তাদের সম্মতিতে কমিউনিটি ক্লিনিককে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগণমূলক পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চিন্তাটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ছিল। এটা আমি নিজেই লিখেছিলাম। আমাদের স্বাস্থ্য সচিব ছিলেন মোহাম্মদ আলী সাহেব, তার বাড়ি নরসিংদীতে। আমি তাকে দিয়ে বলি যে আমার এ ধরনের একটা ধারণা আছে, এটা কার্যকর করা যায় কি না, যারা বিশেষজ্ঞ তাদের নিয়ে যাচাই করে দেখবেন। প্রায় ছয় মাসের ওপরে তিনি এটা নিয়ে কাজ করেন। এটা নিয়ে আলোচনায় হয়, তারপরে আমরা এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সবগুলো থেকেই মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি, সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পোলিও নির্মূল করেছি। মা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস করেছি। টিকাদানে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। টিকাদান কার্যক্রম সারা বিশ্বেই প্রশংসিত হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খেয়েছে, আমরা যথাযথ তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে, করোনা মোকাবিলায় সবকিছু বিনা পয়সায় করে দিয়েছি। সেখানে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখেছি অনেক কুষ্ঠ রোগী মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে একটা সুর করে ভিক্ষা চাইতে আসতো। যেকোনো অকেশনে তারা আমার কাছে আসতো। আমি তাদের কখনো অবহেলা করিনি। তারা এলে বসাতাম, খাদ্য দিতাম। তাদের আমি নগদ টাকা দিয়েও সহযোগিতা করতাম। কথা দিয়েছিলাম যে সরকারে যেতে পারলে তাদের জন্য ব্যবস্থা করব। সে ব্যবস্থাটা করেছি। কারণ, তারা এক ধরনের প্রতিবন্ধিত্ব জীবনযাপন করে।
স্বাস্থ্যকর্মী-ডাক্তার-নার্সসহ, বিভাগ, সংস্থা, সেই সঙ্গে সব নাগরিককে কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবহেলা না করে, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানাই প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এরা আমাদের সমাজের অংশ পরিবারের অংশ একটা বাচ্চা শিশু যদি হিজড়া বা প্রতিবন্ধী হয় তার বাবা মা ফেলে দিতে পারে না। ফেলে দেওয়া উচিত না। আমরা কেন ফেলে দেব? তারা সম্পদেরও অংশীদার, এটা আমাদের ইসলাম ধর্মেও আছে। কুষ্ঠ রোগ চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়া, স্বাস্থ্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।