Dhaka মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বহুল কাঙ্ক্ষিত খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপির) অধীনে বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় নির্মাণ প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তবে দুই দফায় ৬২৭ একর জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ খুলনা অঞ্চলের মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। বিমানবন্দরটিকে ‘শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং বন্দর’ হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১১ সালে ৬২৬.৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে প্রকল্পটির অনুমোদন মেলে। ওই বছর জুলাইয়ে শুরু হয় প্রকল্পটির কাজ। পরে পিপিপির অপেক্ষায় থেকে গত কয়েক বছরে শুধু জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ছাড়া কোনো কাজই হয়নি।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান পিপিপির অধীনে খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তবে তাদের কাছে বিমানবন্দর নির্মাণ সম্ভবপর মনে হয়নি। এ কারণে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, প্রকল্পটি পিপিপির মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, আসলে পিপিপিতে এটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে না।

এ দিকে স্থগিত হয়ে যাওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ খুলনার নাগরিক সংগঠনের নেতারা। এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। অর্থনীতি অঞ্চলের গুরুত্ব বিবেচনায় বিমান বন্দরটি পুনরায় নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি তাদের।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, বিমানবন্দর প্রকল্প স্থগিত হয়ে যাওয়া খুলনাবাসীর জন্য হতাশার একটা ব্যাপার। খুলনা অঞ্চলের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার হলো। প্রয়োজনে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করতে পারে। এটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যেমন বাস্তবায়ন হবে, তেমনি এটি অর্থনৈতিক নতুন সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করবে। এ ছাড়া বিমানবন্দর নির্মাণ না হলে, এরই মধ্যে খরচ হয়ে যাওয়া বিশাল অঙ্কের টাকা অপচয় হবে।

খুলনার আরেকটি নাগরিক সংগঠন খুলনা নাগরিক সমাজের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসিন বলেন, যে যুক্তিতে এটি বলা হচ্ছে সম্ভব না, সেই যুক্তিতেই এটি বেশি সম্ভব। পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা হয়তো কমবে, তবে পদ্মা সেতুর সুফলের কারণেই এ অঞ্চলে নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে এখানে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রয়োজন।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক জোবায়ের আহমেদ খান জবা বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ চালুর অপেক্ষায়, এতে করে মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। মোংলা বন্দর গতিশীল হলে এ অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারী বাড়বে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হলেও এ অঞ্চলে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রয়োজন। এ ছাড়া সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশেও এ বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

তবে কিছুটা আশার আশা কথা শুনিয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে খুলনা অঞ্চলের অর্থনীতির ভলিউম আরও বড় হলে নিশ্চয়ই এটি ফিজিবল হয়ে যাবে।

খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ এখনও পর্যন্ত ১৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ স্থগিত

প্রকাশের সময় : ১২:০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বহুল কাঙ্ক্ষিত খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপির) অধীনে বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় নির্মাণ প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

তবে দুই দফায় ৬২৭ একর জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ খুলনা অঞ্চলের মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। বিমানবন্দরটিকে ‘শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং বন্দর’ হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১১ সালে ৬২৬.৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে প্রকল্পটির অনুমোদন মেলে। ওই বছর জুলাইয়ে শুরু হয় প্রকল্পটির কাজ। পরে পিপিপির অপেক্ষায় থেকে গত কয়েক বছরে শুধু জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ছাড়া কোনো কাজই হয়নি।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান পিপিপির অধীনে খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তবে তাদের কাছে বিমানবন্দর নির্মাণ সম্ভবপর মনে হয়নি। এ কারণে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, প্রকল্পটি পিপিপির মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, আসলে পিপিপিতে এটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে না।

এ দিকে স্থগিত হয়ে যাওয়ার খবরে ক্ষুব্ধ খুলনার নাগরিক সংগঠনের নেতারা। এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। অর্থনীতি অঞ্চলের গুরুত্ব বিবেচনায় বিমান বন্দরটি পুনরায় নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি তাদের।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, বিমানবন্দর প্রকল্প স্থগিত হয়ে যাওয়া খুলনাবাসীর জন্য হতাশার একটা ব্যাপার। খুলনা অঞ্চলের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার হলো। প্রয়োজনে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন করতে পারে। এটি বাস্তবায়ন হলে খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যেমন বাস্তবায়ন হবে, তেমনি এটি অর্থনৈতিক নতুন সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করবে। এ ছাড়া বিমানবন্দর নির্মাণ না হলে, এরই মধ্যে খরচ হয়ে যাওয়া বিশাল অঙ্কের টাকা অপচয় হবে।

খুলনার আরেকটি নাগরিক সংগঠন খুলনা নাগরিক সমাজের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসিন বলেন, যে যুক্তিতে এটি বলা হচ্ছে সম্ভব না, সেই যুক্তিতেই এটি বেশি সম্ভব। পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় আঞ্চলিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা হয়তো কমবে, তবে পদ্মা সেতুর সুফলের কারণেই এ অঞ্চলে নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। মোংলা বন্দরকেন্দ্রিক বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে এখানে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রয়োজন।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক জোবায়ের আহমেদ খান জবা বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ চালুর অপেক্ষায়, এতে করে মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। মোংলা বন্দর গতিশীল হলে এ অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারী বাড়বে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হলেও এ অঞ্চলে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রয়োজন। এ ছাড়া সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের বিকাশেও এ বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

তবে কিছুটা আশার আশা কথা শুনিয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে খুলনা অঞ্চলের অর্থনীতির ভলিউম আরও বড় হলে নিশ্চয়ই এটি ফিজিবল হয়ে যাবে।

খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ এখনও পর্যন্ত ১৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।