নিজস্ব প্রতিবেদক :
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে ঐক্যের জায়গাতে ঠিক থাকতে না পারা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও জনগণের ভালবাসা নিয়ে বিদেশ গেলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। আন্তর্জাতিকভাবেও তাকে সম্মানিত করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে যার যেটা কন্ট্রিবিউশন সেটা স্বীকার করতে হবে। বিভক্তির রাজনীতি যেন আমরা না করি। এখন সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, দেশকে বাঁচানোর জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য, তা হলো ঐক্য।
মির্জা ফখরুল বলেন, কী দুর্ভাগ্য আমাদের, হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কেন জানি আমরা নিজেদের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না। ঐক্যের জায়গাটাতে থাকতে পারছি না। কী দুর্ভাগ্য! এখন যেটা শুরু হয়েছে, এটা কিন্তু এতটুকু সুস্থ ব্যাপার না, একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। ক্ষমতায় তো তখনই টিকে থাকবে, যখন এটাকে সেটেল (স্থির) করতে পারবে, স্টেবিলিটি (স্থিতিশীলতা) আসবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো আমরা শুরু করেছি। দেশে প্রথম সংস্কার করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংস্কার অবশ্যই লাগবে, সংস্কারের পেছনে যে শক্তিটা লাগবে, সেটা হচ্ছে নির্বাচিত পার্লামেন্ট, নির্বাচিত সরকার। এটা ছাড়া সংস্কারকে বৈধতা দিতে পারব না আমরা। তাই সেসব বিতর্কে জড়াতে চাই না। আমরা বিতর্কে বেশি না জড়াই।’
সকল পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনুরোধ করব, বিভাজন সৃষ্টি করবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি বুঝি না, কিছু মানুষ যেন বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা দেশকে ভাগ করবে আবার জনগণকে বিভক্ত করবে। এমন বিভিন্ন রকম কথা বলছে, বিভিন্ন রকম উসকানি দিচ্ছে। আপনারা দয়া করে এগুলোর মধ্যে যাবেন না।’
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে নয় মাস কারাগারে ছিলেন এবং ১৬ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। যদি তিনি দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা না হবেন, তাহলে কি হাসানুল হক ইনু, আমির হোসেন আমু মুক্তিযোদ্ধা? যারা কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে বসে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন- তারা?’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে মিডিয়াও কেন জানি নেগেটিভ জিনিসগুলোকে তুলে ধরতে চায়। পজিটিভ বিষয়গুলো তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিছুদিনের মধ্যে মামলা থেকে পুরোপুরি মুক্ত হবেন, তিনি তখন দেশে উপস্থিত হবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদকে সরাতে পেরেছি। দাঁড়াতে পেরেছি। এখানে যেন আমরা কোনোভাবেই হীনমন্যতায় না ভুগী। দুর্ভাগ্য হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমাদের কেন যেন নিজেদের সেই পুরো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না। ঐক্যের জায়গাটাতে থাকতে পারছি না। কী দুর্ভাগ্য। এখন যেটা শুরু হয়েছে সেটা সুস্থ ব্যাপার না। এটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। ক্ষমতায় তো টিকে থাকবেন তখনই যখন এটাকে সেটল করতে পারবে।
বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার জন্য বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য কাতারের আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, কাতারের আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তারা একেবারেই কোনরকম পারিশ্রমিক ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সে দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাই ব্রিটিশ সরকারকে তারা সেখানে যাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবসহ যারা ওখানে রয়েছেন তারা ইতিমধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করেছেন। গতকাল ম্যাডাম মুক্ত অবস্থায় তার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে পৌঁছেছেন, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী আছে।
সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার সংস্কার বলা হচ্ছে। সংস্কার তো আমরা আগে শুরু করেছি। জিয়াউর রহমান প্রথম সংস্কার করেছেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছেন। এই যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একদম বন্ধ ছিল মাত্র চারটা পত্রিকা চালু ছিল। সবগুলো সংবাদপত্র চালু করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান।