Dhaka বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার এখনই সেরা সময় : প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনের এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার সঠিক সময়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, প্রশ্ন করার সঠিক পরিবেশ আছে কিনা? গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতা আছে কিনা প্রশ্ন করার? আমি আমার সরকারের পক্ষ থেকে বলতে পারি, গত পাঁচ মাস ধরেই আমরা বলছি, প্রশ্ন করার এখনই সময়। ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার এখনই সেরা সময়।

রোববার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অক্সফাম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরাম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, গত ৫ মাসে আমরা আমাদের নিরাপত্তা এজেন্সি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে, কিংবা কোনও আইন প্রয়োগ করে কোনও প্রকার বাধা দেইনি। যদি কারও অভিযোগ থাকে আমাদের জানান, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করবো। এখন অকল্পনীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম। এখন আমার সমালোচনা করতে পারেন, প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি উপদেষ্টাদেরও সমালোচনা করতে পারেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। আমরা সেজন্য যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছি, যাতে যে কেউ যেকোনও সংবাদ ভীতি ছাড়াই করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা এখন এমন একটা সময়ে আছি যখন আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। ছাত্র-জনতার সবাই এখন প্রশ্ন তুলছে, আমরা কি সঠিক পথে আছি, আমরা কি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছি, গণতন্ত্রকে স্যাক্রিফাইস করে উন্নয়ন কতদূর টিকবে এই ধরনের প্রশ্ন এখন সর্বত্র। আমাদের বেশ ভালো লেগেছে যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল।

প্রেস সচিব আরও বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আমরা যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছি কিংবা বেসরকারি খাত যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, আসলে আমরা নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি পরিবেশের ক্ষতি করে। প্রতি বছর আমাদের নদীগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে নতুন করে। এই মুহূর্তের তথ্য বলছে, দেশের ৫৪টি নদী দূষিত। আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি আমাদের নদী দূষিত করে। দূষণ এখন আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কয়েক বছর পর আমাদের সন্তানরা এখানে বাস করতে চাইবে না।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে একটা লবিং গ্রুপ আছে, যাদের আমরা এখনও প্রশ্ন করতে পারিনি। আমরা এখনও ইট কীভাবে তৈরি করে– এমন গুরুতর প্রশ্ন করতে পারিনি। তৈরি পোশাক খাতে কীভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করা হয়, সেটিও আমরা জিজ্ঞেস করতে পারিনি। পত্রিকায় দুই দিন পরপর খবর আসে, অমুক ফ্যাক্টরি গ্রিন হয়েছে এখন আমাদের ২১৫টি গ্রিন ফ্যাক্টরি আছে। আসলেই কি এগুলো ‘গ্রীন’? আমি দুই একটি গ্রিন ফ্যাক্টরি চিনি যেগুলো নদীর কিনারে। এগুলো কেমন গ্রিন ফ্যাক্টরি? তারা কি সত্যই গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে গ্রিন হচ্ছে? নাকি একটি এজেন্সি সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে এবং তারপর কী হচ্ছে কেউ জানতে চাচ্ছে না! আমাদের (সাংবাদিকদের) দায়িত্ব এগুলো প্রশ্ন করা। অনেক বছর ধরেই আমরা বড় বড় শিল্পকে মুখোমুখি করতে পারিনি। তাদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ‘কর্মসংস্থান’ তৈরি, আর তা শোনার পরই প্রশ্ন করা বন্ধ হয়ে যায়। এটি অনেক বছর ধরে উন্নয়নের ন্যারেটিভ হয়ে আছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, এখন অনেক প্রশ্ন আছে করার। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিবেশবিধি মেনে করা হয়েছে কিনা। এসব প্রকল্পে যারা কাজ করেছে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, প্রকল্প এলাকার আশেপাশে থাকা মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা। অনেক প্রশ্ন করার আছে, উন্নয়ন অনেক বড় বিষয়।

আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন- প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত মি. নিকোলাস উইকস, চ্যানেল২৪ এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ইন্টারনিউজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শামীম আরা শিউলি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১০

ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার এখনই সেরা সময় : প্রেস সচিব

প্রকাশের সময় : ০৩:২২:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গণতান্ত্রিক ট্রানজিশনের এই মুহূর্তে প্রশ্ন করার সঠিক সময়। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, প্রশ্ন করার সঠিক পরিবেশ আছে কিনা? গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতা আছে কিনা প্রশ্ন করার? আমি আমার সরকারের পক্ষ থেকে বলতে পারি, গত পাঁচ মাস ধরেই আমরা বলছি, প্রশ্ন করার এখনই সময়। ক্ষমতাধরদের প্রশ্ন করে দায়বদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসার এখনই সেরা সময়।

রোববার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অক্সফাম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরাম’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, গত ৫ মাসে আমরা আমাদের নিরাপত্তা এজেন্সি, প্রশাসনকে ব্যবহার করে, কিংবা কোনও আইন প্রয়োগ করে কোনও প্রকার বাধা দেইনি। যদি কারও অভিযোগ থাকে আমাদের জানান, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করবো। এখন অকল্পনীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে গণমাধ্যম। এখন আমার সমালোচনা করতে পারেন, প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি উপদেষ্টাদেরও সমালোচনা করতে পারেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। আমরা সেজন্য যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছি, যাতে যে কেউ যেকোনও সংবাদ ভীতি ছাড়াই করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা এখন এমন একটা সময়ে আছি যখন আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। ছাত্র-জনতার সবাই এখন প্রশ্ন তুলছে, আমরা কি সঠিক পথে আছি, আমরা কি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছি, গণতন্ত্রকে স্যাক্রিফাইস করে উন্নয়ন কতদূর টিকবে এই ধরনের প্রশ্ন এখন সর্বত্র। আমাদের বেশ ভালো লেগেছে যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল।

প্রেস সচিব আরও বলেন, গত কয়েক দশক ধরে আমরা যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছি কিংবা বেসরকারি খাত যেসব প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, আসলে আমরা নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি পরিবেশের ক্ষতি করে। প্রতি বছর আমাদের নদীগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে নতুন করে। এই মুহূর্তের তথ্য বলছে, দেশের ৫৪টি নদী দূষিত। আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি আমাদের নদী দূষিত করে। দূষণ এখন আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে কয়েক বছর পর আমাদের সন্তানরা এখানে বাস করতে চাইবে না।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে একটা লবিং গ্রুপ আছে, যাদের আমরা এখনও প্রশ্ন করতে পারিনি। আমরা এখনও ইট কীভাবে তৈরি করে– এমন গুরুতর প্রশ্ন করতে পারিনি। তৈরি পোশাক খাতে কীভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করা হয়, সেটিও আমরা জিজ্ঞেস করতে পারিনি। পত্রিকায় দুই দিন পরপর খবর আসে, অমুক ফ্যাক্টরি গ্রিন হয়েছে এখন আমাদের ২১৫টি গ্রিন ফ্যাক্টরি আছে। আসলেই কি এগুলো ‘গ্রীন’? আমি দুই একটি গ্রিন ফ্যাক্টরি চিনি যেগুলো নদীর কিনারে। এগুলো কেমন গ্রিন ফ্যাক্টরি? তারা কি সত্যই গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে গ্রিন হচ্ছে? নাকি একটি এজেন্সি সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছে এবং তারপর কী হচ্ছে কেউ জানতে চাচ্ছে না! আমাদের (সাংবাদিকদের) দায়িত্ব এগুলো প্রশ্ন করা। অনেক বছর ধরেই আমরা বড় বড় শিল্পকে মুখোমুখি করতে পারিনি। তাদের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ‘কর্মসংস্থান’ তৈরি, আর তা শোনার পরই প্রশ্ন করা বন্ধ হয়ে যায়। এটি অনেক বছর ধরে উন্নয়নের ন্যারেটিভ হয়ে আছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে শফিকুল আলম বলেন, এখন অনেক প্রশ্ন আছে করার। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পরিবেশবিধি মেনে করা হয়েছে কিনা। এসব প্রকল্পে যারা কাজ করেছে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, প্রকল্প এলাকার আশেপাশে থাকা মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কিনা। অনেক প্রশ্ন করার আছে, উন্নয়ন অনেক বড় বিষয়।

আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন- প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত মি. নিকোলাস উইকস, চ্যানেল২৪ এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ইন্টারনিউজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শামীম আরা শিউলি।