নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে কারণে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সে ইতিহাস যাতে কেউ বিকৃত করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ক্ষমতা ফিরে পেতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণ রুপ না দেয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলবে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে (আইইবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, চরম ক্লান্তি কাল অতিক্রম করছে পুরো জাতি। এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যাতে করে নিজেদের ক্ষতি হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি যাতে সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দিবে। বিশেষ করে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথম দিক থেকেই সমর্থন দিয়েছি, এখনো সমর্থন দিচ্ছি এমনকি এই মুহূর্তেও আমরা সমর্থন দিচ্ছি। কেননা আমরা চাই কাজগুলো শেষ করে তারা জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ করে দিবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবাই এখন এমন এমন বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের নিজেদের ক্ষতি হচ্ছে। সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। গতকাল একজন উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে’। এই বক্তব্য মারাত্মক। সবাই বিশেষ করে বিএনপি এই সরকারকে সমর্থন করছে। কেননা তারা তাদের কাজ শেষ করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেবে। তাই উপদেষ্টার সেই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এবং মনে করিয়ে দিতে চাই, দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আপনাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদেরকে সহযোগী করছে, এটা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। সেখানে আপনি যদি বলেন, ব্যর্থ করার জন্য চেষ্টা করছি….আমরা হাজার বার বলেছি, আমাদের চেয়ারম্যান বলেছেন এই সরকার ব্যর্থ হওয়া মানে জনগণ ব্যর্থ হয়ে যাবে, আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো।
জনরোষে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, পতিত সরকার ভারতে আশ্রয় নিয়ে অ্যাকটিভ হচ্ছে। আবার ক্ষমতা দখলের জন্য ফিরে আসতে পারে। তাই এখন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অ্যাকটিভ হতে হবে যেন তারা আর ফিরে আসতে না পারে। মিডিয়ার মাধ্যমে বেশি অ্যাকটিভ হতে হবে। আওয়ামী লীগ সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব অ্যাকটিভ।
সবাইকে কথাবার্তায় সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, চরম ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে পুরো জাতি। এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যাতে করে নিজেদের ক্ষতি হয়। প্রতিটি মুহূর্তে সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে।
ফখরুল বলেন, তরুণরা অলৌকিক কী শক্তি পেলো, যে দুমাসে তারা সরকারকে ফেলে দিলো! কারণ তাদের লেখনি। তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেছে, ঐক্যবদ্ধ ছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করলে গলাকাটা আর বিএনপি করলে মুণ্ডুচ্ছেদ– এটা গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র মানে পরমত সহিষ্ণুতা। গণতন্ত্রকে যতক্ষণ পর্যন্ত সংস্কৃতিতে পরিণত করতে না পারবো ততদিন আন্দোলন চলবে।’
নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, শুধু স্লোগান দিয়ে জেতা যাবে না। জিততে হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে জিততে হবে। কারণ পতিতরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোপাগান্ডা চালিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
সেই সাথে তিনি বলেন, আমরা ১৫ বছর লড়াই করেছি, আর ছেলেরা দুই মাসে কী এমন অলৌকিক শক্তি পেয়েছিল? স্বৈরাচার পালাতে বাধ্য হলো। এ শক্তি হলো কথা ও সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যক্রম।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে ও ভয় পাইয়ে দিতে তরুণ ও বুদ্ধিজীবীদের আয়না ঘরে নিয়েছিল। একে মারো, একে ধরো, এটা হতে দেয়া যায় না। গণতন্ত্র হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নেতাকর্মীদের প্রতি আবারো নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মনে করছেন হাসিনা পালিয়ে গেছে, শেষ। না, আমাদের সামনে আরো বেশি কাজ। নির্বাচন শেষ হলেই কাজ শেষ নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত কাজ করতে হবে, আমাদের কাজ দীর্ঘসময়ের।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। এদেশের মানুষ ভোট দেয়ার স্বাধীনতা পেলে সরকার পরিবর্তন করতে পারে। মানুষ চায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক মুক্তি।
‘অন্তর্বতী সরকার যে মেসেজ দিয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে সরকারের জন্য খারাপ, জনগণের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে নির্বাচনকে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘পাকিস্তানি যখন আর আমাদের কন্ট্রোল করতে পারছিল না, তখন তারা এদেশের যারা ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং তার বাস্তবায়ন করা হয়। ২৪ -এ বিজয়ের আগে কিন্তু ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিদের টার্গেট করা হয়নি তবে, ইন্টেলেকচুয়াল উদীয়মান তরুণদের হত্যা করে পালিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা। এদের দেশে নিয়ে এসে আইনায়ুগ বিচার দাবি করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আজকের যারা বুদ্ধিজীবী তারা তোষামোদি বুদ্ধিজীবী, আমরা তাদের মতো বুদ্ধিজীবী দেখতে চাই না। আমরা তাদের ধ্বংস কামনা করি। আর যারা জনগণের বুদ্ধিজীবী তাদের মঙ্গল কামনা করি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, পাকিস্তান পরাজিত হওয়ার পূর্বে সব জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদ তার শাসন আমলে দেশের শিক্ষা, শিক্ষিত ব্যক্তি, আমলাতন্ত্র সকল সেক্টর ধ্বংস করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, সেটির বাস্তবায়ন করেছে এই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমরা পারি নাই, কিন্তু ছাত্র-জনতা বুক পেতে দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, জিয়াউর রহমানের কথা প্রমাণ পেয়েছি, বিজয়ের প্রাক্কালে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিদের তাড়িয়ে বিজয় অর্জন করতে পেয়েছি, আমাদের কি আবার ভারতকে তাড়াতে যুদ্ধ করতে হবে?’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মাহমুদ হাসান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।