Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটাবিরোধীদের দখলে শাহবাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঘোষিত এক দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে শাহবাগসহ আশপাশের সব সড়ক। বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এতে করে আশপাশের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে হাইকোর্টের দেওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অষ্টম দিনে এই কর্মসূচির জন্য জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিকেল সোয়া ৪টায় তারা শাহবাগে এসে জড়ো হন।

শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘ব্লকেড ব্লকেড, বাংলা ব্লকেড’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে আজ শুধুই শাহবাগে নয়, আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্সল্যাব, পুরানা পল্টন মোড় ও গুলিস্তান এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে নিউ মার্কেট থেকে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল এসে জড়ো হয় এলিফ্যান্ট রোডের মুখে। এতে অংশ নেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

আন্দোলনকারীরা এলিফ্যান্ট রোডের মুখে এসেই মানবঢাল তৈরি করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। শিক্ষার্থীরা মাইকে ঘোষণা দেন, আমাদের যৌক্তিক দাবির জন্য আমরা সড়ক অবরোধ করেছি। জরুরি সেবা ছাড়া কোনো যানবাহন আমরা চলতে দেবো না। আমরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাবো না। কাউকে ঘটাতেও দেবো না।

এ সময় নিউ মার্কেট থেকে সিটি কলেজ-শাহবাগ, সিটি কলেজ থেকে নিউ মার্কেট-এলিফ্যান্ট রোড-শাহবাগমুখি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

রাজধানীর গুলিস্তান অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ের চারপাশের রাস্তায় আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর ৩টার পর ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা থেকে মিছিল নিয়ে গুলিস্তান অভিমুখে যাত্রা করেন তারা। এ সময় তাঁতিবাজার মোড়, বংশাল ও ফুলবাড়িয়ায় হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে তিন দফায় পুলিশ তাদের বাধা দিলেও বাধা উপেক্ষা করে জিরো পয়েন্টে অভিমুখে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের দুই দফা ব্যারিকেড ভেঙে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ফার্মগেট এলাকায় অবস্থান নেন। এর আগে কারওয়ান বাজারে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে ফার্মগেটের অভিমুখে রওয়ান দেন শিক্ষার্থীরা। মাইকে বারবার কারওয়ান বাজার অবস্থানের ঘোষণা দেওয়া হলেও একটি গ্রুপ ফার্মগেটের দিকে রওনা দেন।

বাংলা ব্লকেডের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুই রুটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। পরে ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করলে গত ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা ব্যবস্থা। গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তারা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কোটাবিরোধীদের দখলে শাহবাগ

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঘোষিত এক দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে শাহবাগসহ আশপাশের সব সড়ক। বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন তারা। এতে করে আশপাশের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে হাইকোর্টের দেওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অষ্টম দিনে এই কর্মসূচির জন্য জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিকেল সোয়া ৪টায় তারা শাহবাগে এসে জড়ো হন।

শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘ব্লকেড ব্লকেড, বাংলা ব্লকেড’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে আজ শুধুই শাহবাগে নয়, আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্সল্যাব, পুরানা পল্টন মোড় ও গুলিস্তান এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে নিউ মার্কেট থেকে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল এসে জড়ো হয় এলিফ্যান্ট রোডের মুখে। এতে অংশ নেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

আন্দোলনকারীরা এলিফ্যান্ট রোডের মুখে এসেই মানবঢাল তৈরি করে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। শিক্ষার্থীরা মাইকে ঘোষণা দেন, আমাদের যৌক্তিক দাবির জন্য আমরা সড়ক অবরোধ করেছি। জরুরি সেবা ছাড়া কোনো যানবাহন আমরা চলতে দেবো না। আমরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাবো না। কাউকে ঘটাতেও দেবো না।

এ সময় নিউ মার্কেট থেকে সিটি কলেজ-শাহবাগ, সিটি কলেজ থেকে নিউ মার্কেট-এলিফ্যান্ট রোড-শাহবাগমুখি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

রাজধানীর গুলিস্তান অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ের চারপাশের রাস্তায় আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর ৩টার পর ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা থেকে মিছিল নিয়ে গুলিস্তান অভিমুখে যাত্রা করেন তারা। এ সময় তাঁতিবাজার মোড়, বংশাল ও ফুলবাড়িয়ায় হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে তিন দফায় পুলিশ তাদের বাধা দিলেও বাধা উপেক্ষা করে জিরো পয়েন্টে অভিমুখে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের দুই দফা ব্যারিকেড ভেঙে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ফার্মগেট এলাকায় অবস্থান নেন। এর আগে কারওয়ান বাজারে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে ফার্মগেটের অভিমুখে রওয়ান দেন শিক্ষার্থীরা। মাইকে বারবার কারওয়ান বাজার অবস্থানের ঘোষণা দেওয়া হলেও একটি গ্রুপ ফার্মগেটের দিকে রওনা দেন।

বাংলা ব্লকেডের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুই রুটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। পরে ২০২১ সালে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করলে গত ৫ জুন এক রায়ের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসে কোটা ব্যবস্থা। গত ১ জুলাই থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তারা।