Dhaka শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় যুবককে হত্যার পর ৮ টুকরো, আটক ৫

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : 

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর চর থেকে মিলন হোসেন (২৭) নামে এক যুবকের ৯ টুকরো করে খণ্ড খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজের আটদিন পর পদ্মা নদীর চরের ছয়টি জায়গা থেকে লাশের টুকরাগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এসকে সজিবসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সজিব কিশোর গ্যাং বিএসবি গ্রুপের প্রধান।

শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টায় শুরু করে রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন স্থান থেকে মিলনের ৮ টুকরো দেহাংশ উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।

তারা হলেন- এক্স ছাত্রলীগ নেতা সজিব আহমেদ (২৫), জনি আহমেদ (২২) ও সজল আহমেদসহ (২৪) চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে সজিব কুষ্টিয়া শহরে এক দশক ধরে কিশোর গ্যাং তাণ্ডবের মূলহোতা হত্যাসহ নানা অপরাধে কুষ্টিয়া মডেল থানার প্রায় ডজনাধিক মামলার আসামি।

গ্রেপ্তার হওয়া সজিব শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি কুষ্টিয়া আড়ুয়াপাড়ার এক সময়ের মাদক ব্যবসায়ী মিলন শেখ ওরফে ডাল মিলনের ছেলে।

নিহত মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহির মাদি এলাকার মাওলা বক্সের ছেলে। তিনি আউট সোর্সিংয়ের কাজ করতেন। গত ১০ মাস আগে বিয়ে করেন। স্ত্রীকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি জানান, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাজিব, সজল ও জনিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা সবাই নিহত মিলনের পূর্ব পরিচিতি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকদের কাছে পাওয়া তথ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এখনই এর বেশি বলা যাচ্ছে না। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

নিহত মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন (২৫) বলেন, বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মিলনের ফোন বন্ধ পাই। তখন থেকেই আমি ও আমার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুজি শুরু করি। সম্ভাব্য সবখানেই খুঁজে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। যার ডায়েরি নম্বর ২৩২৮, তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪।

মিমির অভিযোগ, মিলনের ব্যবসায়িক পার্টনার সজল ওইদিন সকালে তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যান। তারপর থেকেই মিলনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আমি আগে জানতাম না যে সজল একজন অস্ত্রধারী ও মাদক সম্পৃক্ত ব্যক্তি। জানলে আমি মিলনকে ওর সঙ্গে মিশতে দিতাম না। সজল খুব ভয়ংকর লোক। ওর একটা গ্যাং আছে। ওরাই মিলনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া মডেল থানার এক উপ-পুলিশ পরিদর্শক জানান, আটক সজিব, জনি ও সজল ওরা তো কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েছে। তারা হত্যা, ব্লাকমেইল (কৌশলে জিম্মি), ফোন নম্বর ক্লোন বা হ্যাক করে বিকাশের টাকা প্রতারণা, অস্ত্র, মাদকসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জতিড় একটি চক্র। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিহত মিলনও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। কিশোর গ্যাং লিডার খ্যাত সজিবের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, পুলিশ পরিদর্শক) শেখ মো. সোহেল রানা জানান, বুধবার নিহত মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুনের করা সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে সজল ও সজিব নামে দুই যুবককে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তারা কীভাবে এবং কেনো এ মিলনকে হত্যা করেছেন সে বিষয়েও একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। আটক যুবকদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই শনিবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে পদ্মা নদীর চর থেকে মিলনের খণ্ড খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো মর্গে পাঠানো হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফের এয়ার ইন্ডিয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি, উড্ডয়ন বাতিল

কুষ্টিয়ায় যুবককে হত্যার পর ৮ টুকরো, আটক ৫

প্রকাশের সময় : ০৬:৩২:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : 

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর চর থেকে মিলন হোসেন (২৭) নামে এক যুবকের ৯ টুকরো করে খণ্ড খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিখোঁজের আটদিন পর পদ্মা নদীর চরের ছয়টি জায়গা থেকে লাশের টুকরাগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এসকে সজিবসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সজিব কিশোর গ্যাং বিএসবি গ্রুপের প্রধান।

শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাত ২টায় শুরু করে রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন স্থান থেকে মিলনের ৮ টুকরো দেহাংশ উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।

তারা হলেন- এক্স ছাত্রলীগ নেতা সজিব আহমেদ (২৫), জনি আহমেদ (২২) ও সজল আহমেদসহ (২৪) চার যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে সজিব কুষ্টিয়া শহরে এক দশক ধরে কিশোর গ্যাং তাণ্ডবের মূলহোতা হত্যাসহ নানা অপরাধে কুষ্টিয়া মডেল থানার প্রায় ডজনাধিক মামলার আসামি।

গ্রেপ্তার হওয়া সজিব শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি কুষ্টিয়া আড়ুয়াপাড়ার এক সময়ের মাদক ব্যবসায়ী মিলন শেখ ওরফে ডাল মিলনের ছেলে।

নিহত মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহির মাদি এলাকার মাওলা বক্সের ছেলে। তিনি আউট সোর্সিংয়ের কাজ করতেন। গত ১০ মাস আগে বিয়ে করেন। স্ত্রীকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি জানান, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাজিব, সজল ও জনিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা সবাই নিহত মিলনের পূর্ব পরিচিতি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকদের কাছে পাওয়া তথ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এখনই এর বেশি বলা যাচ্ছে না। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

নিহত মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন (২৫) বলেন, বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মিলনের ফোন বন্ধ পাই। তখন থেকেই আমি ও আমার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুজি শুরু করি। সম্ভাব্য সবখানেই খুঁজে তার কোনো সন্ধান না পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। যার ডায়েরি নম্বর ২৩২৮, তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪।

মিমির অভিযোগ, মিলনের ব্যবসায়িক পার্টনার সজল ওইদিন সকালে তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যান। তারপর থেকেই মিলনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আমি আগে জানতাম না যে সজল একজন অস্ত্রধারী ও মাদক সম্পৃক্ত ব্যক্তি। জানলে আমি মিলনকে ওর সঙ্গে মিশতে দিতাম না। সজল খুব ভয়ংকর লোক। ওর একটা গ্যাং আছে। ওরাই মিলনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া মডেল থানার এক উপ-পুলিশ পরিদর্শক জানান, আটক সজিব, জনি ও সজল ওরা তো কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ জগতে ঢুকে পড়েছে। তারা হত্যা, ব্লাকমেইল (কৌশলে জিম্মি), ফোন নম্বর ক্লোন বা হ্যাক করে বিকাশের টাকা প্রতারণা, অস্ত্র, মাদকসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জতিড় একটি চক্র। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিহত মিলনও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। কিশোর গ্যাং লিডার খ্যাত সজিবের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন আছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, পুলিশ পরিদর্শক) শেখ মো. সোহেল রানা জানান, বুধবার নিহত মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুনের করা সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে সজল ও সজিব নামে দুই যুবককে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তারা কীভাবে এবং কেনো এ মিলনকে হত্যা করেছেন সে বিষয়েও একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে। আটক যুবকদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই শনিবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে পদ্মা নদীর চর থেকে মিলনের খণ্ড খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো মর্গে পাঠানো হয়েছে।