Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা-গুলি, আহত ৩০

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় পাঁচ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

শনিবার (৩ আগস্ট) শিক্ষার্থীর জিলা স্কুল থেকে কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও গণমিছিল করতে এলে সাউন্ড গ্রেনেড মেরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

এরপর কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গুলি চালান ও মারধর করেন।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে সকাল ১০ টায় প্রতীকী সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ও গণমিছিল করার জন্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকলে শিক্ষার্থীদের প্রথমে নানা হুমকি ধামকি দিয়ে বাসায় পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। তারপরেও তারা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ প্রথমে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হলে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়েন। এছাড়া এ সময় তাদের হাতে রামদা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা পূবালী চত্তর থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশ লাইনসের দিকে জড়ো হয়ে শাসনগাছার দিকে মিছিল নিয়ে এগুতে থাকলে সেখানেও আরেক দফায় হামলা করে। পুরো সময় জুড়ে সাংবাদিকদেরও সংবাদ সংগ্রহের কাজে বাধা দেওয়া হয়। স্থানীয় দৈনিক কুমিল্লার কাগজের এক সাংবাদিককে মারধর ও মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী জোবায়দা ইয়াসমিন মুমু বলেন, সারা দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে আজ আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমাদের একটাই দাবি, সরকারের পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া শিক্ষার্থী সমাজ আর ঘরে ফিরবে না। কুমিল্লার সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান করে আমাদের বাধা দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার সামনে আমার এক ভাইকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। আরেকজনের হাতে গুলি লেগেছে।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন বলেন, আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। ছাত্রদের সঙ্গে শিবির ও বিএনপির লোকরা একাকার হয়ে দেশকে নাশকতার দিকে নিতে চায়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।

কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) আবদুল করিম জানান, ৬ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। দুইজন ছড়রা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সকলে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।

এছাড়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. ফজলে হাসান রাব্বি জানান, হাসপাতালে মোট ৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে।

এছাড়াও কুমিল্লার দুই হাসপাতাল মিলিয়ে মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও আহত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মো. সাইফুল ইসলাম সোহান নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গিয়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা-গুলি, আহত ৩০

প্রকাশের সময় : ০৬:২৬:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : 

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় পাঁচ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

শনিবার (৩ আগস্ট) শিক্ষার্থীর জিলা স্কুল থেকে কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও গণমিছিল করতে এলে সাউন্ড গ্রেনেড মেরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

এরপর কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গুলি চালান ও মারধর করেন।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে সকাল ১০ টায় প্রতীকী সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ও গণমিছিল করার জন্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকলে শিক্ষার্থীদের প্রথমে নানা হুমকি ধামকি দিয়ে বাসায় পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। তারপরেও তারা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ প্রথমে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হলে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়েন। এছাড়া এ সময় তাদের হাতে রামদা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা পূবালী চত্তর থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশ লাইনসের দিকে জড়ো হয়ে শাসনগাছার দিকে মিছিল নিয়ে এগুতে থাকলে সেখানেও আরেক দফায় হামলা করে। পুরো সময় জুড়ে সাংবাদিকদেরও সংবাদ সংগ্রহের কাজে বাধা দেওয়া হয়। স্থানীয় দৈনিক কুমিল্লার কাগজের এক সাংবাদিককে মারধর ও মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী জোবায়দা ইয়াসমিন মুমু বলেন, সারা দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে আজ আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমাদের একটাই দাবি, সরকারের পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া শিক্ষার্থী সমাজ আর ঘরে ফিরবে না। কুমিল্লার সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান করে আমাদের বাধা দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার সামনে আমার এক ভাইকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। আরেকজনের হাতে গুলি লেগেছে।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খোকন বলেন, আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। ছাত্রদের সঙ্গে শিবির ও বিএনপির লোকরা একাকার হয়ে দেশকে নাশকতার দিকে নিতে চায়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।

কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) আবদুল করিম জানান, ৬ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। দুইজন ছড়রা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সকলে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।

এছাড়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. ফজলে হাসান রাব্বি জানান, হাসপাতালে মোট ৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা করা হয়েছে।

এছাড়াও কুমিল্লার দুই হাসপাতাল মিলিয়ে মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও আহত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মো. সাইফুল ইসলাম সোহান নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় গিয়েছেন।