Dhaka শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিবরিয়া হত্যা: ‘জনতার মারধরে আহত’ আসামি মোক্তারের ডিবি হেফাজতে মৃত্যু, তদন্তে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকার মিরপুরে দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটকের পর ডিবি কার্যালয়ে মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, আটকের সময় পালানোর চেষ্টা করলে ‘জনতার মারধরে’ আহত হন ওই ব্যক্তি। এরপর চিকিৎসা শেষে ডিবি কার্যালয়ে আনা হলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পল্লবী এলাকা থেকে আটক মো. মোক্তার হোসেন (৪০) নামের ওই ব্যক্তির রিকশার গ্যারেজ থেকে আট রাউন্ড গুলি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে তাকে খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করা হলে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মোক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পল্লবীর পুরোনো থানার কাছে সি ব্লকে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে মুখোশ ও হেলমেট পরা তিন ব্যক্তি ঢুকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে খুব কাছ থেকে গুলি করে চলে যায়। কিবরিয়া যুবদলের পল্লবী থানার সদস্যসচিব ছিলেন।

রাত ৮টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরদিন কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দীনা ৫ জনের নামে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন, যেটির তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নজরুল, মাসুম ও জামান নামের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আরও জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি মোক্তার হোসেনের হেফাজতে আছে বলে জানায় তারা। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোক্তারকে আটক করতে পল্লবী এলাকায় একটি গ্যারেজে অভিযান চালায় ডিবির একটি টিম। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। এসময় উত্তেজিত জনতা তাকে কিল-ঘুষি মারে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।

ডিসি তালেবুর রহমান জানান, পরবর্তীতে মোক্তারের দেখানো মতে রিকশা গ্যারেজ থেকে আট রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করে ডিবি এবং মোক্তারকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। দিনগত রাত দেড়টার দিকে মোক্তার অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে ‘ছাড়পত্র’ দিলে আবারও ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
শুক্রবার সকালে সাড়াশব্দ না পেয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মোক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. সরওয়ারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত সোমবার কিবরিয়াকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন জনি ভূঁইয়া নামের একজনকে ধরে পুলিশে দেয়। জনি এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আর র্যাবের হাতে গ্রেফতার মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল এবং মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজনকে বৃহস্পতিবার চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

৫ আগস্টের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকলে, আগামী নির্বাচনেও দেশ লাভবান হবে : ডা. জাহিদ

কিবরিয়া হত্যা: ‘জনতার মারধরে আহত’ আসামি মোক্তারের ডিবি হেফাজতে মৃত্যু, তদন্তে কমিটি

প্রকাশের সময় : ০৫:০৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকার মিরপুরে দোকানে ঢুকে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটকের পর ডিবি কার্যালয়ে মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, আটকের সময় পালানোর চেষ্টা করলে ‘জনতার মারধরে’ আহত হন ওই ব্যক্তি। এরপর চিকিৎসা শেষে ডিবি কার্যালয়ে আনা হলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পল্লবী এলাকা থেকে আটক মো. মোক্তার হোসেন (৪০) নামের ওই ব্যক্তির রিকশার গ্যারেজ থেকে আট রাউন্ড গুলি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে তাকে খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করা হলে কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মোক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পল্লবীর পুরোনো থানার কাছে সি ব্লকে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে মুখোশ ও হেলমেট পরা তিন ব্যক্তি ঢুকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে খুব কাছ থেকে গুলি করে চলে যায়। কিবরিয়া যুবদলের পল্লবী থানার সদস্যসচিব ছিলেন।

রাত ৮টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরদিন কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দীনা ৫ জনের নামে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেছেন, যেটির তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নজরুল, মাসুম ও জামান নামের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আরও জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি মোক্তার হোসেনের হেফাজতে আছে বলে জানায় তারা। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোক্তারকে আটক করতে পল্লবী এলাকায় একটি গ্যারেজে অভিযান চালায় ডিবির একটি টিম। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। এসময় উত্তেজিত জনতা তাকে কিল-ঘুষি মারে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি।

ডিসি তালেবুর রহমান জানান, পরবর্তীতে মোক্তারের দেখানো মতে রিকশা গ্যারেজ থেকে আট রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করে ডিবি এবং মোক্তারকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। দিনগত রাত দেড়টার দিকে মোক্তার অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে হাসপাতাল থেকে ‘ছাড়পত্র’ দিলে আবারও ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
শুক্রবার সকালে সাড়াশব্দ না পেয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মোক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. সরওয়ারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত সোমবার কিবরিয়াকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন জনি ভূঁইয়া নামের একজনকে ধরে পুলিশে দেয়। জনি এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আর র্যাবের হাতে গ্রেফতার মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল এবং মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজনকে বৃহস্পতিবার চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।