নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি নেই। একেক সময় একেক পণ্যের দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। আগে থেকেই অনেক নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে আছে। এরই মধ্যে সপ্তাহজুড়ে নতুন করে বাজারে কমেছে ডিমের দাম অন্যদিকে দাম বেড়েছে সবজি ও মুরগির। এছাড়া বাজারে অপরিবর্তিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে অন্য সব পণ্য।
গত সপ্তাহেও গ্রীষ্মের পটল ও ঢ্যাঁড়শের মতো সবজিগুলো কেজিপ্রতি ৫০ টাকার নিচেও বিক্রি হয়েছে। এ সপ্তাহে ৬০ টাকার কমে বাজারে কোনো সবজি মিলছে না। অন্যদিকে মাছের বাজারে কম দামি হিসেবে পরিচিত পাঙাশের কেজি এখন ২৫০ টাকা। ৩৫০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো মাছ।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সবজির বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, পটল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা আর লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কাঁচা কলার প্রতি হালি ৪০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, জলি প্রতি পিস ৬০ টাকা, কঁচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ২০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাজারে কাঁচা মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং টমেটো ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সস্তার সবজি হিসেবে পরিচিত পেঁপের কেজিও ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসে ক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাজারে মিষ্টি কুমড়া আর কাঁচা পেঁপের কেজি ৪০-৫০ টাকা। বাকি সব সবজি ৬০ টাকা বা তার ওপরে। সামান্য সবজির দামই যদি এত হয় তাহলে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা কি খাবে। এছাড়া টমেটো ২০০ টাকা, করোলা, বেগুন ১০০ টাকা, এগুলো কেনার কথা এখন চিন্তাও করতে পারছি না। মাঝখানে কয়েকদিন সব সবজির দাম কিছুটা কমেছিল কিন্তু এখন আবার বাড়তি দাম। হঠাৎ করে কখন বাজার বেড়ে যায়, আমরা কিছুই বুঝিনা। আসলে হঠাৎ হঠাৎ কারা বাজার বাড়িয়ে দিচ্ছে সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ। নয়তো আমাদের মত সাধারণ মানুষের কেনাকাটার বিপদ বাড়ে।’
রাজধানীর বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি সাইজের পাঙাস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। আর বড় সাইজের এ মাছটির দর প্রতি কেজি ২৪০ টাকা। রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে তাঁজা রুই বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায়। কই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, তেলাপিঁয়া প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪৬০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, রুপ চাঁদা প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা, ইলিশ ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালী বাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নূরূন নাহীদ তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বলেন, বাজারে গরিবের মাছ ছিল পাঙাস, চাষের কই, তেলাপিঁয়া কিন্তু এখন এসব মাছের দামও অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। যা মধ্যবিত্তের জন্যও কেনা কঠিন। আগে পাঙাস মাছ কিনেছি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, তাও খুব বেশি ক্রেতা পেত না বিক্রেতারা। কিন্তু এখন পাঙাসের দাম ২২০ টাকা হয়ে গেছে। যে কারণে মধ্যবিত্ত ক্রেতারও পাঙাস কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। যেহেতু বাজারে অন্য মাছের দাম আরও বেশি সে কারণে ২২০ টাকা কেজি দরেই একটি পাঙাস কিনলাম।
এছাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা, সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির মাংস প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম পাঁচ টাকা কমেছে। প্রতি ডজনে কমেছে ২০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহেও হালি ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। প্রতি ডজন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত।
ডিম বিক্রেতা মো. রমজান বলেন, তিন দিনের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজনে দাম কমেছে ১৫ টাকা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণেই কমেছে ডিমের দাম।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার চলমান অভিযানে ডিমের পাইকারি বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও খুচরায় দাম সেভাবে কমেনি। নামমাত্র কিছুটা কমিয়ে ডিম বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গত মাসে বন্যা হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের আমদানি কমে যায়। এতে বাজারে সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭৫-৮০ টাকা। দেশি আদার কেজি ২০০, চায়না আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। আলুর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪০ টাকা। বাজারে খোলা আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। প্যাকেট আটার কেজি ৬৫ টাকা। দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। দেশি মসুরের ডালের কেজি ১৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজি ৯০-১০০ টাকা। লবণের কেজি ৩৮-৪০ টাকা।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা করা হয়েছে। চিনি কেজিতে পাঁচ টাকা কমিয়ে খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দুটি পণ্যের নতুন দামই গত সোমবার থেকে কার্যকর হয়। দাম কার্যকরের চার দিন পেরিয়ে গেলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনো নতুন দামে তেল ও চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ বন্ধ, খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, দাম কমানো বোতলজাত সয়াবিন তেল ও চিনি বাজারে আসতে আরো কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। এখন আগের কেনা বোতলজাত তেল ও চিনি বিক্রি করছেন তাঁরা।
ক্রেতারা বলছেন, যে কোনো পণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়লেও কমে ধীরগতিতে। আবার কমলেও আগের পর্যায়ে নেমে আসে না। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের আয় বাড়ছে না। এ জন্য বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
জোয়ারসাহারা বাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী তামিম পারভেজের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গত এক বছরে বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে কয়েক দফা দাম বাড়েনি। পণ্যের দাম বাড়লে যে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের ওপর কেমন চাপ পড়ে, তা বোঝানো কঠিন। এক বছর আগে এক কেজির রুই মাছ কিনতে পারতাম ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা দিয়ে। ৩৫ থেকে ৪০ টাকার দেশি পেঁয়াজ বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ টাকা। আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা, এখন কিনলাম ৪৫ টাকায়। এভাবে বাজারের প্রতিটা পণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ গত দুই বছরে একটি টাকাও আয় বাড়েনি আমার।