Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাউনিয়ায় ৮ গ্রামের মানুষের ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের প্রাণনাথ চরে গ্রামের খলিলের ঘাটে মরা তিস্তা নদীর উপর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছাড়াও আশপাশের ৮ গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে। কাউনিয়ার হারাগাছ ইউনিয়ন ও শহীদবাগ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু পয়েন্টে গিয়ে মিলিত হয়েছে তিস্তা সতী নদীটি। বিভিন্ন সময়ে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে রূপ নেয়নি। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও ওই এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়নি।

নজির আলী বলেন, কতজনোক কইনো কায়ো হামার দুক্কো বুজিলন্যা। ভোট আসলে সবাই ব্রিজ করি দিবার চায়। কিন্তু পরে আর কায়ো হামার এত্তি আইসে না। ৫২ বছরে একান ব্রিজে যদি তৈয়ার না হয়, এমপি-মন্ত্রী থাকি লাভ কি? হাজার হাজার মানুষ কষ্ট করে। বিজ্র না থাকাতে ১০-১২ কিলোমিটার ঘাটা ঘুরিয়া হাঁটত যাওয়া নাগে। সেটা নিয়্যা কারো মাথা ব্যাথা নাই। সগায় থাকে পরি আছে ভোটের নিয়্যা।

বাপ-দাদার সময় থেকে প্রাণনাথ চর গ্রামের খলিলের ঘাট এলাকায় মানুষের যাতায়াত দুর্ভোগ দেখতে দেখতে জীবন শেষ সময়ে এসে পৌঁছেছেন নজির আলী। এখন তার হাসিমুখে চলাফেরা করার কথা। কিন্তু সেই দুর্ভোগ লাঘব না হওয়ায় চরের জমিতে উৎপাদিত ফসল নিয়ে নড়বড়ে ভাঙা সাঁকো দিয়েই চলাচল করতে হয় তাকে। দীর্ঘদিনেও ব্রিজ তৈরি না হওয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে নজির আলীর মতো হাজারো মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর বাঁশের সাঁকোই এলাকাবাসীর ভরসা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক চিরে পায়ে হেঁটে চলাচল করে এলাকার মানুষ। হারাগাছ ও শহীদবাগ ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত খলিলের ঘাট নামকস্থানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

সেখানকার সাব্দী গ্রামের কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজপড়ুয়া রাকিবুল হাসান জানান, খলিলের ঘাটে পাকা সেতু না থাকায় বিকল্প পথ হয়ে নাজিরদহ চর, পল্লীমারী, চাংরা, খলাইঘাট, ঠিকানার হাট, পাগলার হাট, দয়াল বাজার, বুদ্ধির বাজার, মাস্টার বাজার, চর প্রাণনাথ ও সাব্দী গ্রামের স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্থ লাখ মানুষ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে যাতায়ত করে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। যদিও সাঁকো এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

কৃষক মিজানুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, তিস্তা নদী বেষ্টিত চরের গ্রামগুলোতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন হয়। বিশেষ করে আলু, ভুট্টা, ধান, পাট, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, বাদাম, খিরা, শসাসহ নানান রকম সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। এসব কৃষি পণ্য হাট বাজারে বিক্রির জন্য নিতে হলে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে তকিপল হাট, ৭ কিলোমিটার ঘুরে খানসামা হাট ও ১২ কিলোমিটার ঘুরে মীরবাগ হাটে যেতে হয়। অথচ খলিলের ঘাটে একটি পাকা সেতু নির্মাণ হলে অর্ধেক পথ কমে আসবে। সেই সাথে এলাকার কৃষকদের জন্য উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়াটা সহজ হবে।

প্রাণনাথ চরের গোলাম রসূল বলেন, এলাকার মানুষ নৌকায় পারাপারে দুর্ভোগ কমাতে গত বছর বর্ষা মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁশ উত্তোলন করে খলিলের ঘাটে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। সেই সাঁকোটিও এখন নড়বড়ে অবস্থা।

চাংড়া গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মঈনুল ইসলাম বলেন, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে এ কথা বহুদিন ধরে শুনে আসছি, কিন্তু সেতু নির্মাণের কোনো আলামত দৃশ্যমান নয়। এছাড়া সেতু নির্মাণের স্থানটি হারাগাছ ও শহীদবাগ ইউনিয়নের সীমান্ত হওয়ায় দুই চেয়ারম্যানের রশি টানাটানিতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বার বার ভেস্তে যাচ্ছে কিনা, তা তাদের জানা নেই। তবে সেতু নির্মাণ নিয়ে রাজনীতি না করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক হবার অনুরোধ করেছেন এই শিক্ষক।

এ ব্যাপারে হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য যে এলাকাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি দুটি- ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা। এ কারণে সেখানকার শহীদবাগ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সাথে সমন্বয় করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনাটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

অন্যদিকে শহীদবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, সেতু নির্মাণের ব্যাপারে উপজেলা সমন্বয় সভাসহ বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে তার কথাবার্তা হয়েছে। বরাদ্দ মিললে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

এদিকে কাউনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, খলিলের ঘাটে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা এলজিইডি সদর দপ্তরে তিনবার প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ হবে।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

কাউনিয়ায় ৮ গ্রামের মানুষের ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো

প্রকাশের সময় : ০২:১২:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ ইউনিয়নের প্রাণনাথ চরে গ্রামের খলিলের ঘাটে মরা তিস্তা নদীর উপর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছাড়াও আশপাশের ৮ গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে। কাউনিয়ার হারাগাছ ইউনিয়ন ও শহীদবাগ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু পয়েন্টে গিয়ে মিলিত হয়েছে তিস্তা সতী নদীটি। বিভিন্ন সময়ে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে রূপ নেয়নি। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও ওই এলাকায় একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়নি।

নজির আলী বলেন, কতজনোক কইনো কায়ো হামার দুক্কো বুজিলন্যা। ভোট আসলে সবাই ব্রিজ করি দিবার চায়। কিন্তু পরে আর কায়ো হামার এত্তি আইসে না। ৫২ বছরে একান ব্রিজে যদি তৈয়ার না হয়, এমপি-মন্ত্রী থাকি লাভ কি? হাজার হাজার মানুষ কষ্ট করে। বিজ্র না থাকাতে ১০-১২ কিলোমিটার ঘাটা ঘুরিয়া হাঁটত যাওয়া নাগে। সেটা নিয়্যা কারো মাথা ব্যাথা নাই। সগায় থাকে পরি আছে ভোটের নিয়্যা।

বাপ-দাদার সময় থেকে প্রাণনাথ চর গ্রামের খলিলের ঘাট এলাকায় মানুষের যাতায়াত দুর্ভোগ দেখতে দেখতে জীবন শেষ সময়ে এসে পৌঁছেছেন নজির আলী। এখন তার হাসিমুখে চলাফেরা করার কথা। কিন্তু সেই দুর্ভোগ লাঘব না হওয়ায় চরের জমিতে উৎপাদিত ফসল নিয়ে নড়বড়ে ভাঙা সাঁকো দিয়েই চলাচল করতে হয় তাকে। দীর্ঘদিনেও ব্রিজ তৈরি না হওয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে নজির আলীর মতো হাজারো মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর বাঁশের সাঁকোই এলাকাবাসীর ভরসা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক চিরে পায়ে হেঁটে চলাচল করে এলাকার মানুষ। হারাগাছ ও শহীদবাগ ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত খলিলের ঘাট নামকস্থানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।

সেখানকার সাব্দী গ্রামের কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজপড়ুয়া রাকিবুল হাসান জানান, খলিলের ঘাটে পাকা সেতু না থাকায় বিকল্প পথ হয়ে নাজিরদহ চর, পল্লীমারী, চাংরা, খলাইঘাট, ঠিকানার হাট, পাগলার হাট, দয়াল বাজার, বুদ্ধির বাজার, মাস্টার বাজার, চর প্রাণনাথ ও সাব্দী গ্রামের স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্থ লাখ মানুষ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে যাতায়ত করে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে। যদিও সাঁকো এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

কৃষক মিজানুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, তিস্তা নদী বেষ্টিত চরের গ্রামগুলোতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন হয়। বিশেষ করে আলু, ভুট্টা, ধান, পাট, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, বাদাম, খিরা, শসাসহ নানান রকম সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। এসব কৃষি পণ্য হাট বাজারে বিক্রির জন্য নিতে হলে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে তকিপল হাট, ৭ কিলোমিটার ঘুরে খানসামা হাট ও ১২ কিলোমিটার ঘুরে মীরবাগ হাটে যেতে হয়। অথচ খলিলের ঘাটে একটি পাকা সেতু নির্মাণ হলে অর্ধেক পথ কমে আসবে। সেই সাথে এলাকার কৃষকদের জন্য উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়াটা সহজ হবে।

প্রাণনাথ চরের গোলাম রসূল বলেন, এলাকার মানুষ নৌকায় পারাপারে দুর্ভোগ কমাতে গত বছর বর্ষা মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁশ উত্তোলন করে খলিলের ঘাটে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে। সেই সাঁকোটিও এখন নড়বড়ে অবস্থা।

চাংড়া গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মঈনুল ইসলাম বলেন, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে এ কথা বহুদিন ধরে শুনে আসছি, কিন্তু সেতু নির্মাণের কোনো আলামত দৃশ্যমান নয়। এছাড়া সেতু নির্মাণের স্থানটি হারাগাছ ও শহীদবাগ ইউনিয়নের সীমান্ত হওয়ায় দুই চেয়ারম্যানের রশি টানাটানিতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বার বার ভেস্তে যাচ্ছে কিনা, তা তাদের জানা নেই। তবে সেতু নির্মাণ নিয়ে রাজনীতি না করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক হবার অনুরোধ করেছেন এই শিক্ষক।

এ ব্যাপারে হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য যে এলাকাটি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি দুটি- ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা। এ কারণে সেখানকার শহীদবাগ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সাথে সমন্বয় করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনাটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

অন্যদিকে শহীদবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, সেতু নির্মাণের ব্যাপারে উপজেলা সমন্বয় সভাসহ বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে তার কথাবার্তা হয়েছে। বরাদ্দ মিললে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

এদিকে কাউনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি জানান, খলিলের ঘাটে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা এলজিইডি সদর দপ্তরে তিনবার প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ হবে।