নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রতিবছর ঈদ যাত্রায় নানা ভোগান্তির অভিযোগ থাকলেও এবার ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের মধ্যে স্বস্তির ছাপ। ভোগান্তি ছাড়া বাড়ি ফিরতে পারায় ট্রেন যাত্রীরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত। দুই একটি ট্রেন কয়েক মিনিট বিলম্ব হলেও সেটাও মানিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দ্বিতীয় দিনেও ভোগান্তিহীনভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছে ঘরমুখো মানুষের। অন্যান্য বারের মতো স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় বা সিডিউল বিপর্যয় নেই। কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। গত ২৫ মার্চ যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিট পেয়েছেন তারা আজ এই স্টেশন থেকে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে।
কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনে প্রবেশের জন্য করা হয়েছে আলাদা গেট। বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা এসব অস্থায়ী গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন রেলওয়ের নির্ধারিত কর্মকর্তারা। সেখানেই ঈদ যাত্রার জন্য স্টেশনে আসা যাত্রীর টিকিট চেক করে ভেতরে দিকে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে টিকিট ছাড়া ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। এদিকে ভেতরে প্রবেশ করেও টিকিট স্ক্যান করে যাত্রা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রীরা স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছেন। কেউ তসবি জপছেন কেউবা আবার ব্যস্ত পত্রিকা পড়ায় বা মোবাইল ফোন নিয়ে।
এখন পর্যন্ত ঈদযাত্রার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না থাকায় অভিযোগ নেই যাত্রীদের। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসছে সব ট্রেন। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ যাত্রায় এখনো ট্রেন নিয়ে অভিযোগ নেই যাত্রীদের।
রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী শামীম হোসেন বলেন, ট্রেনের টিকিট আমার ছেলে অনলাইনে কেটে দিয়েছে। লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ঈদে বাড়ি যাচ্ছি ঝামেলা ছাড়াই। ট্রেন ৫-১০ মিনিট লেট করে ছাড়লেও এটা বিষয় না। বাসেও এমন ১০ মিনিট লেট হয়।
একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী ফারহান জনি বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট পেতে একটু ঝামেলা হলেও স্টেশনে এসে কোনও ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। যথা সময়েই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন এসেছে। এছাড়া টিকিটবিহীন যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারায় ভিড়ও কম।’
কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন যাত্রীর চাপ না বাড়লেও শনিবারের পর থেকে ভিড় বাড়বে। সে জন্য রাখা হয়েছে স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস। বাড়ানো হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী যাত্রী আব্দুল আউয়াল বলেন, ট্রেনের টিকিট আমার ছেলে অনলাইনে কেটে দিয়েছে। লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ঈদে বাড়ি যাচ্ছি ঝামেলা ছাড়াই। ট্রেন ৫-১০ মিনিট লেট করে ছাড়লেও এটা বিষয় না। বাসেও এমন ১০ মিনিট লেট হয়। সবমিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে রংপুর এক্সপ্রেসে করে ঈদ আনন্দে সামিল হতে বাড়ি যাচ্ছেন ইসরাত সুমি নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, ঈদে এত সহজে বাড়ি যেতে পারছি ভাবতেই ভালো লাগছে। কোনো বিড়ম্বনা নেই। পরিবারের সবাই ট্রেনে যাওয়ায় আনন্দই আলাদা।
পরিবার নিয়ে ঈদে গ্রামে যাচ্ছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রিয়াজ আহমেদ জানান, আমি রংপুর এক্সপ্রেসে কুড়িগ্রাম যাচ্ছি। টিকিট পেতে বা স্টেশনে কোনো ঝামেলা নেই। খুব একটা ভিড়ও নেই। নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছাড়ছে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল বিপর্যয় কিংবা ট্রেন বিলম্বের ঘটনা ঘটেনি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০টি ট্রেন যথাসময়ে সকল ছেড়ে গেছে। আজকে আন্তঃনগর ৪২ ও লোকাল-কমিউটার ২৫টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাবে।
ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে গত ২৫ মার্চ যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিট পেয়েছেন তারাই আজ কমলাপুর থেকে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে।
সকাল ১০টায় জামালপুর এক্সপ্রেস, সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে একতা এক্সপ্রেস, সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, বেলা সাড়ে ১১টায় তারাকান্দির উদ্দেশ্যে অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্য ছেড়ে গেছে নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস।
প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষে ৪ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে গত ২৫ মার্চ ও ৫ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৬ মার্চ। ঈদের আগে আন্তঃনগর ট্রেনের ৭ এপ্রিলের টিকিট ২৮ মার্চ, ৮ এপ্রিলের টিকিট ২৯ মার্চ ও ৯ এপ্রিলের টিকিট ৩০ মার্চ বিক্রি করা হয়েছে।
এছাড়া চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে। যাত্রীদের অনুরোধে ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রা শুরুর আগে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে।