নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের নামে অধিগ্রহণকৃত জমি বেআইনিভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ ও দীর্ঘমেয়াদি লিজ প্রদানের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও ১৩ সচিবসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুদক সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম বাদী হয়ে মামলা করেন। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি জানিয়েছেন।
আসামিরা হলেন- সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সচিব কামাল উদ্দীন আহমদ, সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আব্দুল জলিল, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, সাবেক সিএএজি ও সোনালী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সংসদ বিষয়ক বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক মিজ জুয়েনা আজিজ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের সহযোগিতায়, অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর ও প্রকল্পের স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য নির্মিতব্য ফ্ল্যাট দীর্ঘমেয়াদি লিজ প্রদানসংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়নে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা অনুসরণ না করে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
এজাহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১০৬ ও ১০৭ তম বোর্ড সভায় উপস্থিত সদস্যরা বেআইনিভাবে এ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
১০৬তম বোর্ড সভায় নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর ও প্রকল্পের স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য নির্মিতব্য ফ্ল্যাট দীর্ঘমেয়াদি লিজ প্রধান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮— শীর্ষক নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আবাসন নির্মাণের লক্ষ্যে ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণের উদ্দেশ্য হিসেবে গেজেটে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করা হয়।
অধিগ্রহণকৃত জমিতে গেজেটে উল্লিখিত উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী ৯৯ বছরের লিজে আবাসন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন-২০১৭ এর ১৯(১) ধারা অনুযায়ী ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয় হতে এ সংক্রান্ত কোনো পূর্বানুমোদন নেয়নি। যা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
এজাহারে আরও বলা হয়, সরকারি কোনো আইন, নীতিমালা কিংবা বিধি-বিধান প্রণয়ণের ক্ষেত্রে সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর ও প্রকল্পের স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য নির্মিতব্য ফ্ল্যাট দীর্ঘমেয়াদি লিজ প্রদানসংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮— নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করেনি।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৬ এর ধারা ১৩(২) অনুযায়ী সেতু কর্তৃপক্ষের জমি অস্থায়ী ইজারা প্রদান করার কথা বলা হলেও সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর এবং প্রকল্পের স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করে স্থায়ী ইজারা প্রদানের বিষয়টি আইনের পরিপন্থি বলে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















