নিজস্ব প্রতিবেদক :
এবার আন্দোলনে হারলে ৫০ বছরের জন্য সংকটে পড়বে দেশ। কারো কোনও প্রকার অধিকার থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের প্রতিনিধি সভা ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা, ভোটের অধিকার রক্ষা- শুধু বিএনপির আন্দোলন নয়। এটা সমগ্র জাতির লড়াই। এ লড়াইয়ে জয়ী হতে হবে। এবার জয়ী হতে না পারলে বাংলাদেশ ৫০ বছরের জন্য কর্তৃত্ববাদী সরকারের কবলে পড়ে যাবে। কারও কোনো অধিকার থাকবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিপক্ষকে মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে নির্বাচনের খেলা খেলতে চায় সরকার। তবে এবার সেই খেলা খেলতে পারবে না।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগ। ভিন্নধর্মাবলাম্বীদের জমি দখলের জন্যই হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টানদের উপাসনালয় ও ঘরবাড়িতে হামলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। রমনার কালী মন্দির, রামুর বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর আওয়ামী লীগ করেছে।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাছে অপপ্রচার চালায় যে বাংলাদেশে বিএনপি একটা হিন্দুবিরোধী সংগঠন। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের এমন অপপ্রচার এখন আর বিশ্বাস করে না। বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপদে থাকেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি হিন্দুবিরোধী সংগঠন, ভারতের কাছে ক্ষমতাসীনদের এমন অপপ্রচারের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, এরা (আওয়ামী লীগ) আপনার একটা মার্কেটিং করে। মার্কেটিংটা হচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সবচেয়ে বেশি। তাদের কাছে একটা অপপ্রচার চালায় যে বাংলাদেশে বিএনপি হচ্ছে একটা হিন্দুবিরোধী সংগঠন। এটা কি এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? আপনারা বিশ্বাস করেন? আপনারা দেখেছেন কখনো? বরং আমরা জোর গলায় বলতে পারি, বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা (অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন) নিরাপদ থাকে। তখন এই ধরনের কর্মকাণ্ড (মন্দির ও গির্জা ভাঙচুর) কম হয়।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সালে বিএনপির আমলে ঠাকুরগাঁও এলাকার একটা ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির আমলে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমাদের যে ভিশন ২০৩০ এবং যে ৩১ দফা করেছি, সেখানে সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি আছে আমাদের। গণতন্ত্র থাকলে সেটা তো থাকবেই। আর গণতন্ত্র না থাকলে তো ওটাও থাকবে না। একমাত্র সুরক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রের লড়াই-সংগ্রামে আমাদের জয়ী হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, কথায় কথায় বলে, তারা হচ্ছে এ দেশে সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক, আওয়ামী লীগ। তারা কতটা অসাম্প্রদায়িক, তা আপনারা জানেন। আমরা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল দেখেছি। এ দেশে সত্যিকার অর্থে আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু যাঁরা আছেন, তাঁদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য যদি দখল করে থাকে, সেটা আওয়ামী লীগের লোকেরাই সবচেয়ে বেশি করেছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কেউ নিরাপদ বোধ করে না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, কেউ নিরাপদ বোধ করে না। সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করে না। কখন কাকে কোন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ফেলবে। ছয় শর বেশি লোক গুম হয়ে গেছে। হত্যা করছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে আপনাদের কমিউনিটির বহু লোককে আসামি করেছে, এখনো জেলে আছে। এই করে তারা ক্ষমতায় টিকে আছে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে ও আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব এস এন তরুণ দে’র সঞ্চালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।