Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এদেশের মানুষ শিক্ষিত হোক বিএনপি-জামায়াত চায়নি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এদেশের মানুষ শিক্ষিত হোক বিএনপি-জামায়াত সরকার কখনো তা চায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৬ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ‘অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শিল্পখাতের উন্নয়নের নানা দিক বিএনপির আমলে বন্ধ হয়ে যায় বলেও জানান শেখ হাসিনা ।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হত্যা এরকম অবস্থা দেখতে হয়েছে। দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক এটা বিএনপি-জামায়াত কখনোই চায়নি। মানুষকে পদদলিত করে রাখা, অন্ধকারে রাখা, শোষণ করা আর নিজেরা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া এটাই বিএনপির চেষ্টা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষার্থী হত্যা এরকম অবস্থা দেখতে হয়েছে। আমরা চাই দেশ আরো এগিয়ে যাক। শুধু নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে ৬ বছরের শিশু থেকে কেউই বাদ যায়নি বিএনপি-জামায়াতের নিগ্রহ থেকে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের আগে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানী ও বোমাবাজি ছিল; বর্তমানে সেই পরিস্থিতি আজ আর নেই। আওয়ামী লীগ সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর শিক্ষাসহ দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়ে যায়। সামরিক শাসকরা অস্ত্র তুলে দেয় মেধাবীদের হাতে, তাদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের। আমরা ক্ষমতায় আসার আগেও অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো ক্যাম্পাসে। এখন আর নেই।

অনেক ঝড় ঝাপটা থাকলেও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ও স্থিতিশীল সরকার আছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে ‘যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ আঁশ’ কাজ করে যাবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট সময়ে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি, আমরা নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষা করি। আমরা বাংলাদেশকে যে বদলে দিতে চেয়েছিলাম, সেটা করতে পেরেছি। শুধু শিক্ষা নয়, সার্বিকভাবে দেশকে উন্নত করতে পেরেছি। যার কারণে দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। পরনির্ভরশীলতা থেকে আত্মমর্যাদাশীল হতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, ১/১১ এর সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাকেই আগে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আমি আমার আত্মবিশ্বাস হারাইনি। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন, গণসাক্ষর পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে। আন্তর্জাতিক চাপও তৈরি হয়। তারা বাধ্য হয়েছিল নির্বাচন দিতে। আত্মবিশ্বাস ছিলো দেশের মানুষের ওপর-নানা প্রলোভন দেয়া হয় আমাকে। নির্বাচন করবেন না, আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় রাখা হবে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলাম। বলেছিলাম আমাকে এসব লোভ দেখিয়ে লাভ নেই।

সুনির্দিষ্ট সময়ে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি, আমরা নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষা করেছি-এ কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে যে বদলে দিতে চেয়েছিলাম, সেটা করতে পেরেছি। শুধু শিক্ষা নয়, সার্বিকভাবে দেশকে উন্নত করতে পেরেছি। যার কারণে দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের জনসংখ্যা হিসাব করে, মানুষের কর্মদক্ষতা যেন বৃদ্ধি পায়, সেদিকে তিনি দৃষ্টি দিতেন। ১৯৭৩ সালে সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসনও দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯১ সালে যখন আমাদের এ অঞ্চলে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যখন সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হচ্ছে। তখন একটি প্রস্তাব আমরা পেয়েছিলাম, বাংলাদেশ বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হতে পারবে। সেসময় ক্ষমতায় খালেদা জিয়া। তিনি বলে দিলেন সংযুক্ত করা যাবে না। দেশের সব সিক্রেসি নাকি আউট হয়ে যাবে। সিক্রেসি টা কী, আউট বা কীভাবে হবে, সেটা আমরা জানি না। এরকম মানসিকতা নিয়ে আমাদের দেশ চলছে। কত পেছনে আমরা পিছিয়ে ছিলাম।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে যখন বন্দিখানায় নেয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি সময়টা হেলায় নষ্ট না করে সেখানে বসে দেশের ভাগ্য উন্নয়নের চিন্তা করেছি। সেজন্য শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কীভাবে কাজ করা যায়, তার জন্য রূপকল্প তৈরি করেছি। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তার চিন্তা সবসময় আমার মাথায় ঘুরপাক খেত। আর সেই রূপকল্পই আজ ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন হয়েছে

তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে। শর্ত ছিল আমি নির্বাচন করতে পারব না। আমি বলেছি একটা এসি রুম আর এসি গাড়ি, এসবের আমার প্রয়োজন নেই। কারণ আমার বাবা এ দেশের মন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমিও এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। সুতরাং আমার মধ্যে নিজের ভগ্য উন্নয়নের কোনো লোভ নেই। আমি এ দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই। আজ আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা জিনিস বিশ্বাস করতেন- শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি গঠন সম্ভব না। এজন্য তিনি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং সেভাবে শিক্ষার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করে দেন। ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করে দেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শিক্ষকদের জন্য ১০০ টাকা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ টাকা ভাতা দেওয়া শুরু করেন। জাতি গঠনের জন্য এটা ছিল দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠনসহ নানা উদ্যোগ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই অগ্রযাত্রা ব্যহত হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মানুষের অধিকার। সেজন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হত সেটাকে তিনি বিনিয়োগ হিসেবে দেখতেন। কিন্তু ৭৫ পরবর্তীতে সরকারগুলো ছাত্রদের হাত অস্ত্র তোলে দেওয়াসহ নানা অপকর্মে ছাত্রদের ব্যবহার শুরু করে। তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ছাত্রদের ব্যবহার করতো।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা আসি তখন দেখি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ ছিল না। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসলাম তখন এসেই ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলাম কৃষি গবেষণা খাতে। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলাম শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা খাতে। ১৯৯৬ সালে এসে কম্পিউটার শিক্ষার ওপর জোর দিলাম। কারণ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলে বিজ্ঞানের প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। আজ সেটার সুফল জাতি পাচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, সেসময় ১২ বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে দিলাম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

তিনি বলেন, আমি উদ্যোগ নিলাম যেভাবে হোক, যেখান থেকে হোক কিছু কম্পিউটার যোগাড় করে স্কুলে স্কুলে আমাদের শিক্ষার্থীদের এ শিক্ষাটা দিতে হবে। আমরা ১০ হাজার স্কুল খুঁজে ঠিক করলাম। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা নিতে হলো। ১০ হাজার কম্পিউটার কেনার জন্য আমি পদক্ষেপ নিলাম। নেদারল্যান্ড সরকার একটা অনুদান দিলো। তারা কম্পিউটারের অর্ধেক দাম দিল, বাকি অর্ধেকটা আমাদের দিতে হবে। আমরা সেই সুযোগ নিয়ে ১০ হাজার কম্পিউটার কেনার সব পদক্ষেপ নিলাম। টাকা-পয়সা দেওয়া হয়ে গেলো। এর মধ্যে আসলে আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর সময় শেষ হয়ে গেলো। আমরা ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট আসল।

সরকারপ্রধান বলেন, খালেদা জিয়ার কাছে যখন এ কথাটা গেলো, তিনি জানলেন- কোম্পানির নাম টিউলিপ। টিউলপ হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল। এ ফুলের নামে কোম্পানিটার নাম। আমাদের কম্পিউটার চলে আসবে। টিউলিপ নাম শুনেই তিনি খুব রেগে গেলেন। কারণ আমার ছোট বোন রেহানা। তার মেয়ের নাম টিউলিপ। তার নামে নাম কেন? এটা তাকে (খালেদা জিয়া) কে বোঝালে বা তিনি কী বুঝলেন, খোদাই জানে। তখন তিনি বললেন, ওই টিউলিপ নিশ্চয় শেখ রেহানার কোম্পানি। শেখ রেহানা তখন লন্ডনে। তার তো প্রশ্নই আসে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আমরা তো দেশে আসতে পারিনি। আমাদের তো রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে বিদেশে। ছোট বোন রেহানার পাসপোর্টের সময়টা শেষ হয়ে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি। তাকে লন্ডনে থেকে যেতে হয়। সেখানেই সে নাগরিকত্ব পায়।

শেখ রেহানা নেদারল্যান্ডসের ঘুরতে গিয়ে টিউলিপ দেখে মুগ্ধ হয়ে মেয়ের নাম টিউলিপ রাখেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর সেটাই হয়ে গেলো আমাদের কাল। আপনার শুনলে অবাক হবেন। ওটা বাতিল হওয়ার পর ওই টিউলিপ কোম্পানি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ মামলার খরচ ও পেনাল্টি দিতে হলো বাংলাদেশকে। ৬০ কোটি টাকা গচ্চা গেলো। পরে ক্ষমতায় এসে দেন-দরবার করে কিছু টাকা কমাতে পেরেছিলাম। এরকম চিন্তার লোক ও বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল। যা হোক পরবর্তীতে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করলাম।

অনুষ্ঠানে চারটি বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালুসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী অস্বচ্ছল ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বৃত্তির চেক তুলে দেন সরকারপ্রধান।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২২৫৭টি কলেজের অধ্যক্ষরা অংশ নিয়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এদেশের মানুষ শিক্ষিত হোক বিএনপি-জামায়াত চায়নি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১২:৩৪:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এদেশের মানুষ শিক্ষিত হোক বিএনপি-জামায়াত সরকার কখনো তা চায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১৬ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ‘অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শিল্পখাতের উন্নয়নের নানা দিক বিএনপির আমলে বন্ধ হয়ে যায় বলেও জানান শেখ হাসিনা ।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী হত্যা এরকম অবস্থা দেখতে হয়েছে। দেশের মানুষ শিক্ষিত হোক এটা বিএনপি-জামায়াত কখনোই চায়নি। মানুষকে পদদলিত করে রাখা, অন্ধকারে রাখা, শোষণ করা আর নিজেরা অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া এটাই বিএনপির চেষ্টা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শিক্ষার্থী হত্যা এরকম অবস্থা দেখতে হয়েছে। আমরা চাই দেশ আরো এগিয়ে যাক। শুধু নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে ৬ বছরের শিশু থেকে কেউই বাদ যায়নি বিএনপি-জামায়াতের নিগ্রহ থেকে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের আগে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানী ও বোমাবাজি ছিল; বর্তমানে সেই পরিস্থিতি আজ আর নেই। আওয়ামী লীগ সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর শিক্ষাসহ দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়ে যায়। সামরিক শাসকরা অস্ত্র তুলে দেয় মেধাবীদের হাতে, তাদের অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের। আমরা ক্ষমতায় আসার আগেও অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো ক্যাম্পাসে। এখন আর নেই।

অনেক ঝড় ঝাপটা থাকলেও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ও স্থিতিশীল সরকার আছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে ‘যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ আঁশ’ কাজ করে যাবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট সময়ে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি, আমরা নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষা করি। আমরা বাংলাদেশকে যে বদলে দিতে চেয়েছিলাম, সেটা করতে পেরেছি। শুধু শিক্ষা নয়, সার্বিকভাবে দেশকে উন্নত করতে পেরেছি। যার কারণে দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। পরনির্ভরশীলতা থেকে আত্মমর্যাদাশীল হতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, ১/১১ এর সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাকেই আগে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আমি আমার আত্মবিশ্বাস হারাইনি। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন, গণসাক্ষর পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে। আন্তর্জাতিক চাপও তৈরি হয়। তারা বাধ্য হয়েছিল নির্বাচন দিতে। আত্মবিশ্বাস ছিলো দেশের মানুষের ওপর-নানা প্রলোভন দেয়া হয় আমাকে। নির্বাচন করবেন না, আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় রাখা হবে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলাম। বলেছিলাম আমাকে এসব লোভ দেখিয়ে লাভ নেই।

সুনির্দিষ্ট সময়ে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি, আমরা নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষা করেছি-এ কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে যে বদলে দিতে চেয়েছিলাম, সেটা করতে পেরেছি। শুধু শিক্ষা নয়, সার্বিকভাবে দেশকে উন্নত করতে পেরেছি। যার কারণে দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আমাদের জনসংখ্যা হিসাব করে, মানুষের কর্মদক্ষতা যেন বৃদ্ধি পায়, সেদিকে তিনি দৃষ্টি দিতেন। ১৯৭৩ সালে সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসনও দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯১ সালে যখন আমাদের এ অঞ্চলে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যখন সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্ত হচ্ছে। তখন একটি প্রস্তাব আমরা পেয়েছিলাম, বাংলাদেশ বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হতে পারবে। সেসময় ক্ষমতায় খালেদা জিয়া। তিনি বলে দিলেন সংযুক্ত করা যাবে না। দেশের সব সিক্রেসি নাকি আউট হয়ে যাবে। সিক্রেসি টা কী, আউট বা কীভাবে হবে, সেটা আমরা জানি না। এরকম মানসিকতা নিয়ে আমাদের দেশ চলছে। কত পেছনে আমরা পিছিয়ে ছিলাম।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে যখন বন্দিখানায় নেয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি সময়টা হেলায় নষ্ট না করে সেখানে বসে দেশের ভাগ্য উন্নয়নের চিন্তা করেছি। সেজন্য শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কীভাবে কাজ করা যায়, তার জন্য রূপকল্প তৈরি করেছি। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তার চিন্তা সবসময় আমার মাথায় ঘুরপাক খেত। আর সেই রূপকল্পই আজ ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন হয়েছে

তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হবে। শর্ত ছিল আমি নির্বাচন করতে পারব না। আমি বলেছি একটা এসি রুম আর এসি গাড়ি, এসবের আমার প্রয়োজন নেই। কারণ আমার বাবা এ দেশের মন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমিও এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। সুতরাং আমার মধ্যে নিজের ভগ্য উন্নয়নের কোনো লোভ নেই। আমি এ দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই। আজ আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা জিনিস বিশ্বাস করতেন- শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি গঠন সম্ভব না। এজন্য তিনি আধুনিক, প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং সেভাবে শিক্ষার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করে দেন। ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণ করে দেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শিক্ষকদের জন্য ১০০ টাকা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ টাকা ভাতা দেওয়া শুরু করেন। জাতি গঠনের জন্য এটা ছিল দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠনসহ নানা উদ্যোগ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই অগ্রযাত্রা ব্যহত হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মানুষের অধিকার। সেজন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হত সেটাকে তিনি বিনিয়োগ হিসেবে দেখতেন। কিন্তু ৭৫ পরবর্তীতে সরকারগুলো ছাত্রদের হাত অস্ত্র তোলে দেওয়াসহ নানা অপকর্মে ছাত্রদের ব্যবহার শুরু করে। তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ছাত্রদের ব্যবহার করতো।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা আসি তখন দেখি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ ছিল না। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসলাম তখন এসেই ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলাম কৃষি গবেষণা খাতে। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলাম শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা খাতে। ১৯৯৬ সালে এসে কম্পিউটার শিক্ষার ওপর জোর দিলাম। কারণ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলে বিজ্ঞানের প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। আজ সেটার সুফল জাতি পাচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, সেসময় ১২ বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করে দিলাম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

তিনি বলেন, আমি উদ্যোগ নিলাম যেভাবে হোক, যেখান থেকে হোক কিছু কম্পিউটার যোগাড় করে স্কুলে স্কুলে আমাদের শিক্ষার্থীদের এ শিক্ষাটা দিতে হবে। আমরা ১০ হাজার স্কুল খুঁজে ঠিক করলাম। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা নিতে হলো। ১০ হাজার কম্পিউটার কেনার জন্য আমি পদক্ষেপ নিলাম। নেদারল্যান্ড সরকার একটা অনুদান দিলো। তারা কম্পিউটারের অর্ধেক দাম দিল, বাকি অর্ধেকটা আমাদের দিতে হবে। আমরা সেই সুযোগ নিয়ে ১০ হাজার কম্পিউটার কেনার সব পদক্ষেপ নিলাম। টাকা-পয়সা দেওয়া হয়ে গেলো। এর মধ্যে আসলে আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর সময় শেষ হয়ে গেলো। আমরা ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট আসল।

সরকারপ্রধান বলেন, খালেদা জিয়ার কাছে যখন এ কথাটা গেলো, তিনি জানলেন- কোম্পানির নাম টিউলিপ। টিউলপ হচ্ছে নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল। এ ফুলের নামে কোম্পানিটার নাম। আমাদের কম্পিউটার চলে আসবে। টিউলিপ নাম শুনেই তিনি খুব রেগে গেলেন। কারণ আমার ছোট বোন রেহানা। তার মেয়ের নাম টিউলিপ। তার নামে নাম কেন? এটা তাকে (খালেদা জিয়া) কে বোঝালে বা তিনি কী বুঝলেন, খোদাই জানে। তখন তিনি বললেন, ওই টিউলিপ নিশ্চয় শেখ রেহানার কোম্পানি। শেখ রেহানা তখন লন্ডনে। তার তো প্রশ্নই আসে না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আমরা তো দেশে আসতে পারিনি। আমাদের তো রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে বিদেশে। ছোট বোন রেহানার পাসপোর্টের সময়টা শেষ হয়ে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি। তাকে লন্ডনে থেকে যেতে হয়। সেখানেই সে নাগরিকত্ব পায়।

শেখ রেহানা নেদারল্যান্ডসের ঘুরতে গিয়ে টিউলিপ দেখে মুগ্ধ হয়ে মেয়ের নাম টিউলিপ রাখেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর সেটাই হয়ে গেলো আমাদের কাল। আপনার শুনলে অবাক হবেন। ওটা বাতিল হওয়ার পর ওই টিউলিপ কোম্পানি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ মামলার খরচ ও পেনাল্টি দিতে হলো বাংলাদেশকে। ৬০ কোটি টাকা গচ্চা গেলো। পরে ক্ষমতায় এসে দেন-দরবার করে কিছু টাকা কমাতে পেরেছিলাম। এরকম চিন্তার লোক ও বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল। যা হোক পরবর্তীতে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করলাম।

অনুষ্ঠানে চারটি বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালুসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী অস্বচ্ছল ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বৃত্তির চেক তুলে দেন সরকারপ্রধান।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২২৫৭টি কলেজের অধ্যক্ষরা অংশ নিয়েছেন।