নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সহকারী সচিব হওয়ার পর এখন কেউ ঢাকার বাইরে থাকতে চায় না। একটি কারণে ঢাকার বাইরে মফস্বলে এলাকায় থাকতে চায় সেটা হচ্ছে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়, উচ্চ পর্যায়ের পদোন্নতির জন্য। আর কেউ ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। তাদের সামর্থ্য বেড়েছে। আগে বেতন ছিল ৪-৫ হাজার টাকা। এখন বেতন হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) গুলশানে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে দুই দিনব্যাপী স্যানিটেশন ট্রেড ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরবর্তী আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে বাড়ির মূল্য ও জীবন যাত্রার মান বেশি হলে কেউ থাকতে চাইবে না। ১৯৯৬ সালে যখন আমি প্রথম সংসদ সদস্য হই তখন আমার বন্ধুরা সহকারী সচিব ও কলেজের প্রফেসর হয়েছিল, তখন তারা বলতেন ঢাকার বাইরে অমুক খানে, তমুক খানে আমাকে দেন। তখন তাদের বেতন কম ছিল। তখন তারা ঢাকায় ঘর ভাড়া দিয়ে থাকতে পারতো না। জীবনযাত্রার মান তখন খুব ব্যয়বহুল ছিল।
মন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে থাকতে হলে কত লোক বসবাস করবে তা নির্ধারণ করতে হবে। কেন গুলশানের পানির দাম বেশি হবে না ? ইউকেতে পানি খাবেন ৫০ টাকা দিয়ে। এখানে ১০০০ লিটার পানির দাম ১৫ টাকা। আপনি গুলশানে থাকেন মাসে কয়েক কোটি টাকা আপনার রোজগার। গুলশানে বসবাস করবেন আর ভর্তুকি দিয়ে পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন তা হবে না।
টোকিও শহরে বসবাসের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, টোকিও শহরে যারা বসবাস করে তাদের দুই লাখ টাকা বেশি খরচ করতে হয়। যারা গুলশানে বসবাস করেন তাদের অবশ্যই জীবনযাত্রার খরচ বাড়াতে হবে। সারা বাংলাদেশ উন্নত করতে হবে। দেশের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান করে এগোতে হবে।
নাগরিকদের ইতিবাচক মনোজাগতিক পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইন ও নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিকরাই উন্নত ও স্মার্ট নগরের প্রধান কারিগর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নগরায়ন হতে হবে। বাসযোগ্য ঢাকার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়োনিষ্কাশন, খোলা জায়গা, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। সবার সচেতনতা এবং সহযোগিতা থাকলে বাসযোগ্য ঢাকা গড়া সম্ভব।
তিনি বলেন, যত্রতত্র, খেয়ালখুশিমতো স্থাপনা তৈরির সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এ সময় মন্ত্রী নাগরিকদের ইতিবাচক মনোজাগতিক পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আইন ও নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিকরাই উন্নত ও স্মার্ট নগরের প্রধান কারিগর।
নাগরিকদের সঠিক পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার বিষয়ে সচেতন করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, সবার সচেতনতা এবং সহযোগিতা থাকলে বাসযোগ্য ঢাকা গড়া সম্ভব।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নাগরিকদের সঠিক পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার বিষয়ে সচেতন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালে পয়োনিষ্কাশনের জন্য ঢাকা শহরকে পাঁচটি ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করেন। কারণ দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বাসযোগ্য ঢাকার অন্তরায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমস্ত বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে আমরাও বাসযোগ্য ঢাকার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। বাসযোগ্য ঢাকা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধান আজ চিহ্নিত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও অংশগ্রহণের ফলে সমস্যা এবং সমাধানের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা গেলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
মন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৬ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা না গেলে বাসযোগ্য ঢাকার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে। জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশও একসময় এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল এবং তারা সফলভাবে তা মোকাবিলা করে স্মার্ট নগর গড়তে পেরেছে।
এ সময় মন্ত্রী উন্নত বিশ্বের উদাহরণ দিয়ে বলেন, জাপান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশও একসময় এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল এবং তারা সফলভাবে তা মোকাবিলা করে স্মার্ট নগর গড়তে পেরেছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর ও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।