নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যা একজন মা দেখেন। অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন মানুষ নিরাপদে ঘর থেকে বের হতে পারে ও ঘরে ফিরে আসতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কের গণসংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলবো আমরা, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। অর্থাৎ একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশে একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন শিশু- যেই হোক না কেন নিরাপদে ঘর থেকে বের হলে যেন নিরাপদে ইনশাআল্লাহ ঘরে আবার ফিরে আসতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রথমেই রাব্বুল আলামিনের প্রতি শুকরিয়া আদায় করছি। জনগণের দোয়ায় তাঁর রহমতে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছি।
তিনি বলেন, রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আজ আমি আমার প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে পেরেছি। আপনাদের দোয়ায় আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি।

তারেক রহমান বলেন, প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর আধিপত্যবাদী হাত থেকে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে এ দেশ রক্ষা করা হয়েছিল। একইভাবে পরবর্তী সময়ে সব স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এ দেশের জনগণ, এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের গণতন্ত্রের অধিকারকে ছিনিয়ে এনেছিল। কিন্তু তারপরও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালে দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালে এ দেশের ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ; কৃষক-শ্রমিক, গৃহবধূ, নারী-পুরুষ, মাদ্রাসার ছাত্রসহ দল-মত ও শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সব মানুষ ৫ আগস্ট এ দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়, তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ চায় তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাবে। প্রিয় ভাই-বোনেরা, আজ আমাদের সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার। এই দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছে, একইভাবে সমতলের মানুষ আছে। এই দেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে।
‘আমরা সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। অর্থাৎ, একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই; যেখানে একজন নারী, একজন পুরুষ বা একজন শিশু— যিনিই হোক না কেন, নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে যেন আবার নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, চার কোটিরও বেশি তরুণ প্রজন্মের সদস্য, পাঁচ কোটির মতো শিশু এবং ৪০ লক্ষের মতো প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছেন। কয়েক কোটি কৃষক-শ্রমিক রয়েছেন। এই মানুষগুলোর একটি প্রত্যাশা আছে এই রাষ্ট্রের কাছে, একটি আকাঙ্ক্ষা আছে এই দেশের কাছে। আজ আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হই, আজ আমরা যদি সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, লক্ষ-কোটি মানুষের সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ। ১৯৭১ সালে আমাদের শহীদেরা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এমন একটি বাংলাদেশ গঠনের জন্য। বিগত ১৫ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের সদস্য ছাড়াও শত-শত, হাজারো মানুষ গুম ও খুনের শিকার হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখন মঞ্চে আমি দাঁড়িয়ে, কিন্তু মন পড়ে আছে হাসপাতালে মায়ের কাছে। এতদিন আমার সঙ্গে কী হয়েছে আপনারা সবাই জানেন। তিনি (খালেদা জিয়া) দেশকে ভালোবেসেছেন, তার সঙ্গে কী হয়েছে আপনারা প্রত্যেকটি মানুষ সে সম্পর্কে অবগত আছেন। সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছে আমি চাইব, আজ আল্লাহর দরবারে আপনারা দোয়া করবেন যেন আল্লাহ উনাকে তৌফিক দেন এবং উনি দ্রুত সুস্থ হতে পারেন।
তিনি বলেন, সন্তান হিসেবে আমার মন মায়ের বিছানার পাশে পড়ে আছে সেই হাসপাতালের ঘরে। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আজ আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আমাদেরকে আজ নিশ্চিত করতে হবে আমরা যে ধর্মের মানুষই হই, যে শ্রেণির মানুষই হই, যে রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হই অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই— যেকোনো মূল্যে আমাদের এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রতিটি মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। শিশু, নারী কিংবা পুরুষ— যেকোনো বয়স, শ্রেণি, পেশা বা ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকে; এটিই হোক আমাদের আজকের চাওয়া। আসুন সবাই মিলে আজ আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।
বিভিন্ন আধিপত্যবাদী শক্তির গুপ্তচরেরা বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে ধৈর্যশীল হতে হবে, আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের যে সদস্যরা আছেন, তোমরাই আগামী দিন দেশকে নেতৃত্ব দেবে, দেশকে গড়ে তুলবে।
তারেক রহমান বলেন, এই দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের সদস্যদের আজ গ্রহণ করতে হবে, যাতে করে এই দেশকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি; শক্ত ভিত্তির উপরে, গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করে এবং অর্থনৈতিক ভিত্তির উপরে যাতে এই দেশকে আমরা গড়ে তুলতে পারি।
তিনি বলেন, আমার সঙ্গে আজ মঞ্চে এখানে বহু জাতীয় নেতৃবৃন্দ বসে আছেন। আসুন আজকে আমরা দু-হাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। আল্লাহর রহমত আমরা চাই। যেসব জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই মঞ্চে আছেন এবং মঞ্চের বাইরে যেসব জাতীয় আরও নেতৃবৃন্দ আছেন আমরা সকলে মিলে এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশিত সেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। আমাদেরকে যেকোনো মূল্যে, যেকোনো মূল্যে এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। যেকোনো উসকানির মুখে আমাদেরকে ধীর-শান্ত থাকতে হবে।
মার্টিন লুথার কিং–এর ‘আই হ্যাভ অ্যা ড্রিম’ উক্তির উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান- ফর মাই পিপল, ফর মাই কান্ট্রি।’ আর এই প্ল্যান হলো দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য।
‘যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়—প্রিয় ভাই-বোনেরা, এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন এবং সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে যত মানুষ আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা এ প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো,’ বলেন তারেক রহমান।
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আসুন সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি, আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবে, আমরা সবাই নবী করিমের (সা.) যে ন্যায়পরায়ণতা, সেই ন্যায়পরায়ণতায় দেশ পরিচালনার চেষ্টা করবো।
তারেক রহমান বলেন, একাত্তর সালে আমাদের শহীদরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই রকম একটা বাংলাদেশ গড়ার জন্য। যেকোনো মূল্যে আমাদের এদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা দেশের শান্তি চাই, আমরা দেশের শান্তি চাই, আমরা দেশের শান্তি চাই।
শহীদ ওসমান হাদির প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, কয়েক দিন আগে ২৪-এর আন্দোলনের এক সাহসী তরুণ ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। ওসমান হাদি শহীদ হয়েছেন।

তিনি বলেন, ওসমান হাদি চেয়েছিলেন এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। তিনি চেয়েছিলেন এই দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। এই দেশের মানুষ নিজেদের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক অধিকার ফিরে পাক। ওসমান হাদিসহ এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, এই মানুষগুলোর রক্তের ঋণ যদি শোধ করতে হয় তবে আসুন, আমরা আমাদের সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলি—যেখানে আমরা সবাই মিলে কাজ করব, যেখানে আমরা সবাই মিলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-কন্যাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে বিমানটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে যাত্রাবিরতির পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি স্পর্শ করে। বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এসময় তিনি নেতাদের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশলবিনিময় করেন এবং উপস্থিত সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিটে ফেরার পথে উচ্ছ্বসিত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
এর আগে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দিনগত রাত সোয়া ১২টা) তাকে বহনকারী বিমান ঢাকার উদ্দেশে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

তৎকালীন ওয়ান/ইলেভেন সরকারের আমলে দেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশ ছেড়েছিলেন তারেক রহমান। এরপর দেশের রাজনীতিতে গড়িয়েছে অনেক জল। একে একে কেটে গেছে ১৭টি বছর। অবশেষে দেশের আকাশে প্রবেশ করেই আবেগঘন স্ট্যাটাসে তারেক রহমান লিখেছেন— ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে রাজধানীর পথে পথে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিট সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো হয়েছে বর্ণিল ব্যানার ও ফেস্টুন।
এদিকে তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা ঘিরে ঢাকায় ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও গত কয়েকদিন ঘরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে তার নিরাপত্তায় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে দলটি।
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















