নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ক্রমশ বেড়েই চলেছে মাছ, মাংস, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজার কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের।
শুক্রবার (১২ মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৮০, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। অন্যদিকে জালি কুমড়া কুমড়া পিস ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে আসা তোফায়েল বলছেন, মাছ মাংস বাড়তি দামে কেনার পর ভেবেছি সবজির দাম কিছুটা কম পাব। কিন্তু কাঁচাবাজারে এসে দেখি সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দাম বাড়ার বিষয়ে সবজি বিক্রেতা সাকিব বলেন, তীব্র গরমে সবজির সরবরাহ কম। আগের তুলনায় বাজারে সবজি কম আসছে। এ ছাড়া অনেক সবজির মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারগুলোতেই সবজির দাম বাড়তি থাকায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। দাম বাড়তির কারণে বিক্রিও কমে গেছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ টাকা, শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা, বোয়াল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা, পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৫২০ টাকা, দেশি কই ৭০০ টাকা, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, মাগুর মাছ ৬০০ টাকা, বাগদা ৮০০ টাকা আর গলদা চিংড়ি ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, ঈদের কিছুদিন পর থেকে মাছের চাহিদা বেড়েছে। তখন থেকেই প্রতিদিনই আড়তে মাছের দাম বাড়ছে। বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন মাছের দাম কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বেশি।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। সোনালি মুরগির দাম রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। টিসিবির হিসাবে, বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৮৫ থেকে ২১৫ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও এ দামে বিক্রি হচ্ছে না। এক বছরের ব্যবধানে এ মুরগির দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এবিষয়ে খিলগাঁও বাজারের বিসমিল্লাহ ব্রয়লারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. মুন্না বলেন, আমরা যারা মুরগি ব্যবসায় আছি আড়তে গেলে আড়তদাররা আমাদের কাস্টোমারই মনে করে না। তারা বলে যে দাম আছে নিলে নেন নাইলে চলে যান। আমাদের যদি কাস্টমার ধরে রাখতে হলে তাদের থেকে মাল আনতেই হবে। আমরাও নিরুপায়।
বাজারে মুরগি কিনতে এসেছেন বেসরকারী চাকরিজীবী মো. রাশেদ বলেন, এক সপ্তাহ পরে বাজারে আসলাম এসে দেখি সবকিছুই বাড়তি দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকার মতন বাড়ছে। সরকারি উচিত এ সকল পণ্যের দামের ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো। নাহলে আমরা সাধারণ ক্রেতা আছি তাদের খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। সাদা ডিমের দাম প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২০০ থেকে ২১০ টাকা। আর হাঁসের ডিমের দাম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ডজন। গত এক সপ্তাহে ডিম ও মুরগির দামে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। প্রতি কেজি গরুর কলিজা বিক্রি হচ্ছে একই দামে। শুধু মাত্র গরুর ফেফসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। অন্যদিকে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে। এক বছরে পণ্যটির ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। যা এক বছর আগেও বিক্রি হতো ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়।
মেরাদিয়া হাটে গরুর মাংস বিক্রেতা মো. কবির ব্যাপারী বলেন, মাংসের বেচা-কিনি কমে নাই। বাঙালির মতন ভালো খাওইয়া পৃথিবীতে নাই। তবে গরিব ক্রেতা যারা আছে তারা কেউ মাংস খেতেই পারছে না। গরুর মাংসের দোকানের সামনে আপনি কোন গরিব মানুষ দেখতে পাবেন না। গরুর মাংসের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। প্রতিটা গরুর দামে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতন বেড়েছে। ফলে আমরা এ দামে মাংস বিক্রি করেও পোষাতে পারি না। পাশাপাশি যারা কিনতেছে তাদেরও খুব চাপ হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত থেকে যদি গরু মাংস প্রসেস করে না এনে সরাসরি গরু নিয়ে দেশের বাজারে বিক্রি করা হয় তাহলে গরুর মাংসের দাম কমতে পারে। বর্তমানে বাজারে ১ কেজি ভূষির দাম ৭৫ টাকা। আর একটা গরু দিনে সর্বনিম্ন চার থেকে পাঁচ কেজি ভুসি খায়। প্রতিদিনে একটা গরুর পিছে খরচ ৫০০ টাকা, সে হিসেবে মাসে ১৫০০ টাকা খরচ। আর একটা গরু খাবার উপযোগী হইতে দুই বছর সময় লাগে। তাহলে চিন্তা করেন সেই গরুর দাম কত গিয়ে পড়বে।
এদিকে দাম বাড়ানোর পরও কাটছে না চিনির সংকট। বৃহস্পতিবার (১১ মে) খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ১৬ টাকা বাড়িয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতিকেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হবে ১২০ টাকায়, আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হবে প্রতি কেজি ১২৫ টাকায়।
ঠিক এক সপ্তাহ আগেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিলো ১৮৭ টাকা। তবে নতুন দামের তেল এখনো আসেনি সবখানে। কিন্তু পুরোনো দাম লেখা মোড়কের বোতলও বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মোড়কে দাম ১৮৭ টাকা লেখা, অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। ৩৭৪ টাকার দুই লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৩৯০ টাকায় এবং ৯০৬ টাকার ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১৫-৯২০ টাকায়।
চায়না রসুনের কেজি ছিলো ১৩৫-১৪০ টাকা সেটা আজকে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। আর দেশি রসুন কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। আদার দাম আগের মতোই রয়েছে। দেশি আদা আগের দামেই ২৫০ টাকা আর চায়না আদা ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা মিস রাণী বলেন, এইতো কয়েকদিন আগেও পেঁয়াজ কিনেছি ৪০ টাকায় আজকে বাজারে এসে সেই পেঁয়াজ কিনতে হলো দ্বিগুণ দামে ৮০ টাকায। এভাবে বাজারে সামগ্রীর দাম বাড়ছেই। আমাদের বাজার এমন কোন সামগ্রীর দাম বাড়লে সেটা আর কমে না। এখন আমাদের কিন্তু বেতনভাতা বাড়ছে না। তাহলে কিভাবে আমরা রাজধানীতে টিকে থাকবো। সরকারি কর্মকর্তারা নানা সুবিধা পেলেও বেসরকারি যারা চাকুরিজীবী তাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।