স্পোর্টস ডেস্ক :
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য শেষ ম্যাচ ছিল মান বাঁচানোর লড়াই। ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়ানরা সেটা রক্ষা করতে পারল না। শেষ ম্যাচে ৮০ রানের ব্যবধানে উইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা।
২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিপক্ষকে তাদের মাঠে ধবলধোলাইয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ডের পর চতুর্থ দল হিসেবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে ১০৯ রানে গুঁটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এতে ৮০ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
১৯০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই তাসকিনের তোপের মুখে পড়ে উইন্ডিজ। তার দারুণ ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ হন ব্র্যান্ডন কিং। রিভিউ নিইয়েও রক্ষা পাননি এই সিরিজে টানা তৃতীয়বার তাসকিনকে উইকেট দেয়া এই ডানহাতি ওপেনার।
তৃতীয় ওভারে দ্বিতীয় সাফল্য আসে শেখ মাহেদীর হাত ধরে। এই অফস্পিনারকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন অভিষিক্ত জাস্টিন গ্রিভস। দুই চার এক ছক্কায় দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দিলেও নিকোলাস পুরানকে ইনিংস বড় করতে দেননি মাহেদী। উইন্ডিজের দলীয় ৪৫ রানে সিরিজে তৃতীয়বার পুরানের উইকেট নিলেন তাকে বোল্ড করে।
এক রানের ব্যবধানে পড়ে আরো দুই উইকেট। হাসান মাহমুদের করা সপ্তম ওভারে শর্টার লেংথের বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি রোস্টন চেইজ। মিড অনে খেলতে চাইলেও ব্যাটের ওপরের অংশে লেগে ক্যাচ যায় মিড অফে। লাফিয়ে উঠে বেশ ভালো এক ক্যাচে তাকে ফেরান শেখ মাহেদী। এক বল পর রভম্যান পাওয়েলের ডাকে সিংগেল নিতে গিয়ে আলসে ভঙ্গির দৌড়ে মিড অন থেকে রিশাদ হোসেনের করা সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন জনসন চার্লস। ১৮ বলে ২৩ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক পাওয়েলকেও ফিরিয়েছেন রিশাদই, তবে বল হাতে। এই লেগির ফ্লাইটেড এক টার্নিং ডেলিভারিতে তুলে মারতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন পাওয়েল।
৬০ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর গুদাকেশ মোতিকে সাথে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন রোমারিও শেফার্ড। সপ্তম উইকেটে গড়েন ২৬ বলে ৩৫ রানের জুটি। ফ্লাইটেড ফুল লেংথ ডেলিভারিতে মোতিকে ফিরিয়ে বড় হতে থাকা জুটি নিজের শেষ ওভারে গুঁড়িয়ে দেন সেই রিশাদই। একই ওভারের চতুর্থ বলে আলজারি জোসেফকে ফিরিয়ে পান নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারের দেখা। চার ওভার বল করে ২১ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট।
তিন ছক্কা এক চারে ২৭ বলে ৩৩ রান করা শেফার্ডকে ফিরিয়েছেন তানজিম সাকিব। ডানহাতি এই পেসারের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দেন শেফার্ড। ওবেদ ম্যাকয়কে বোল্ড করে ইনিংস শেষ করেন তাসকিন।
বাংলাদেশের দাপটের শুরু একদম ম্যাচের শুরু থেকেই। সৌম্য সরকারের চোটে সুযোগ পাওয়া পারভেজ হোসেন ইমন শুরু করেন প্রথম ওভারে দৃষ্টিনন্দন এক বাউন্ডারিতে। পরে দেখান তার হাতের জোরও।
আগের দুই ম্যাচে নতুন বলে বাংলাদেশকে ভুগিয়ে বোলিং র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠা আকিল হোসেন এই ম্যাচে ছিলেন না। প্রথম চার ওভারে দারুণ সব শট খেলে পারভেজ ও লিটন দাস তোলেন ৪০ রান।
তিনটি নান্দনিক বাউন্ডারিতে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিলেও লিটন শেষ পর্যন্ত হতাশ করেন আবার। উইকেট বিলিয়ে দেন ১৩ বলে ১৩ রান করে।
পরের ওভারে আলজারি জোসেফকে পুল করে ছক্কা মারার পর প্রিয় ফ্লিক শটে সীমানায় ধরা পড়েন পারভেজ। আগের ছয় টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে তার রান ছিল ৪৯, স্ট্রাইক রেট ছিল ৭২। এবার তিনি করেন চারটি চার ও দুই ছক্কায় ২০ বলে ৩৯।
তিনে নামা তানজিদ হাসান আউট হয়ে যান গুডাকেশ মোটিকে একটি ছক্কা মেরেই। বাংলাদেশের রানের গতিও কমে যায় কিছুটা। পঞ্চম থেকে দশম, এই ছয় ওভারে রান আসে ৩৬।
মেহেদী হাসান মিরাজ চেষ্টা করেন রানের গতিতে দম দেওয়ার। কিন্তু তার ইনিংস থেমে যায় ২২ বলে ২৯ করে।
একটু পর শুরু হয় ‘জাকের-শো।’ এক পর্যায়ে তার রান ছিল ১৩ বলে ১০। চতুর্দশ ওভারে মোটিতে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে তার গতি বদলের শুরু। পরের ওভারে রান আউট থেকে বেঁচে যাওয়ার সেই ঘটনা। আগের দুই ম্যাচের নায়ক শামীম হোসেন এবার থামেন ২ রানে। এক বল পর রান আউট হয়ে যান শেখ মেহেদি হাসানও। ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১১৪।
সেই নড়বড়ে অবস্থা থেকেই দলকে সর্বোচ্চ রানের চূড়ায় নিয়ে যান জাকের। তার ব্যাট থেকে বল আছড়ে পড়তে থাকে মাঠের নানা প্রান্তে। লং অন, মিড উইকেট, এক্সট্রা কাভার, কোথায় ছক্কা মারেননি তিনি! শেষ পাঁচ ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে পাঁচটি ছক্কা দুটি চার! এর মধ্যে ৯৫ মিটার লম্বা ছক্কা ছিল ওবেড ম্যাককয়ের বলে।
সপ্তম উইকেটে তানজিম হাসানের সঙ্গে তার জুটিতে ৫০ রান আসে কেবল ২৭ বলেই। একটি করে চার ও ছক্কায় ১৭ রান করে অবদান রাখেন তানজিমও।
শেষ ওভারে জোসেফের বলে বাউন্ডারিতে পঞ্চাশ পেরিয়ে যান জাকের ৩৫ বলে। ওভারের শেষ চার বলে তিনি মারেন তিনটি ছক্কা।
শেষ ওভার থেকে আসে ২৫ রান। শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭৫।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুই উইকেট শিকার করেন রোমারিও শেফার্ড। এ ছাড়াও আলজারি জোসেফ, রোস্টন চেজ ও মুড়াকেশ মোতি।