নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর (শায়খে চরমোনাই) মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ইসলামের হুকুমাতের কারণে আফগানিস্তান অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হয়ে গেছে। আমরাও যদি ইসলামের হুকুমতে চলতে পারি আমাদের অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে যাবে। আপনারা জানেন আমাদের এই ভূখণ্ড কত দামি। বাংলাদেশ এমন একটা রাষ্ট্র যেখানে পাখি ফল খেয়ে মল ত্যাগ করলে ওই বীজ থেকে গাছ হয়ে যায়। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমি সোনা।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর আরামবাগে ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থা কার্যালয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা আয়োজিত নগর সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, যে দেশে চোরের হাত পড়ে, সে দেশের আয় বাড়ে না। বাংলাদেশে এখন সেই অবস্থা এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার দলীয় মন্ত্রী এমপিরাই বলেন, ১০০ টাকার বাজেট হলে ১০ টাকার কাজ হয়, আর ৯০ টাকা দুর্নীতি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাজনীতি এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। রাজনীতিবিদরা জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তারা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ না করে নিজের স্বার্থ ও লাভের জন্য কাজ করেন। এছাড়া তারা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন। ইসলামী হুকুমত বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে। কারণ, এ মূলনীতির ফলে দেশে শান্তি, নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে মানুষ উৎপাদনশীল কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে। এছাড়া সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে। এখন যে টাকায় ৩০টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়, তখন এ একই টাকায় ১০০টি ব্রিজ নির্মাণ হবে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাদের দেশপ্রেম দেখলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন। তাদের কিছু মন্ত্রীদের চলাফেরা দেখলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন। দেখে মনেই হয় এরা মন্ত্রী; তারা এত সাধারণ জীবনযাপন করে। অথচ আমাদের দেশে একটু পাতি নেতা হলেই আর রক্ষা থাকে না! কিন্তু ভারত নিজেদের দেশের উন্নয়ন করলেও আমাদের হচ্ছে দুর্নীতি। অথচ বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি স্বর্ণ। এ সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে আমরা বিশ্বের অন্যতম দেশ হতে পারি। আর সেজন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কীভাবে ইসলামের অধিকার কায়েম করা যায়, তার জন্য কাজ করতে হবে। ইসলামী হুকুমত কায়েম হলে অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে। আমাদের তা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে হাজারও নদী আছে। জেলেরা নদীতে নামে আর মাছ নিয়ে ঘরে আসে। এই বরকত কোন দেশে আছে। আল্লাহ তায়ালা চন্দ্র, সূর্য, জমিন ও দুনিয়া আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাহলে কেন আমরা দুনিয়ার বোঝা হয়ে যাচ্ছি। ইসলাম সমস্ত কিছুর সমাধান, ইসলামের বাইরে কোন কিছুর সমাধান নাই। ইসলাম অনুযায়ী দেশ গড়ার চেষ্টা করবো। ইসলামের মাধ্যমে কিভাবে মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করতে পারি সেই চেষ্টা করি।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, একটা দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে নাস্তিক ও আস্তিক বানায়। আমাদের দেশে যদি ইসলামিক শিক্ষা থাকতো তাহলে দেশে কোনো চুরি ডাকাতি থাকতো না।
দেশের অর্থনীতি নিয়ে এই আমীর বলেন, ইসলাম আসলে জনগণের ফায়দা ও দেশের ফায়দা হয়। ইসলামী শাসন আসলে দেশের ৭০ গুণ উন্নয়ন বেড়ে যাবে।হাদিসে আছে, চোরের হাত লাগলে গাছে ফল হয় না, দেশের প্রতিটি খাতে চোরের হাত লেগেছে। এই কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না।
ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান সম্পর্কে তিনি বলেন, তার পরিবারের সবাই দেশের বাইরে থাকে। যার পরিবার দেশের বাইরে থাকে, তার দেশের প্রতি মায়া কিভাবে কাজ করবে। দেখেন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রতিটি নাগরিক দেশপ্রেমিক। তাদের অনেক মন্ত্রী, যাদের জীবনযাপন অত্যন্ত সহজ সরল।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মুহম্মদ ইউসুফ পিয়াস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব ও সভাপতি (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ) মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম। প্রধান বক্তা ছিলেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মুনতাছির আহমাদ। এ সময় দলটির অন্যান্য নেতাকর্মী ও বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।